রানীনগর উপজেলা
রানীনগর উপজেলা (নওগাঁ জেলা) আয়তন: ২৫৮.৩৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৮´ থেকে ২৪°৪৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫১´ থেকে ৮৯°১০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নওগাঁ সদর ও আদমদীঘি উপজেলা, দক্ষিণে আত্রাই উপজেলা, পূর্বে নন্দীগ্রাম ও সিংড়া উপজেলা, পশ্চিমে মান্দা উপজেলা।
জনসংখ্যা ১৮১১৯৬; পুরুষ ৯২৯৮৯, মহিলা ৮৮২০৭। মুসলিম ১৬০৮৬৬, হিন্দু ২০০৭৫, বৌদ্ধ ৫১ এবং অন্যান্য ২০৪। এ উপজেলায় ওরাওঁ এবং সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় প্রধান নদী: ছোট যমুনা, আত্রাই, নাগর। কউরগারি বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন রানীনগর থানা গঠিত হয় ১৯১৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৮ | ১৫১ | ২৩৪ | ১০৬৭৫ | ১৩৩১৭৮ | ৫৮৮ | ৫৯.৩ | ৩৮.৭ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৮.৩৯ | ৪ | ১০৬৭৫ | ১২৭২ | ৫৯.৩১ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
একডালা ২১ | ১১০১১ | ১৪১২০ | ১৩২৫৬ | ৪৫.৮৫ | ||||
কালীগ্রাম ৪২ | ৯৭৮৫ | ১৩০০৬ | ১২১১৬ | ৫৩.৬২ | ||||
কাশিমপুর ৫২ | ২৪৭৯ | ৯১২৭ | ৮৮৪৭ | ৪১.৩৮ | ||||
গোনা ৩১ | ৬১৬৫ | ১০০৩১ | ৯৪৪৩ | ৪৬.২৮ | ||||
পারইল ৭৩ | ১২২৩২ | ১৩৭৪২ | ১২৯৭৫ | ৫৩.৯৪ | ||||
বরগাছা ১০ | ১১৪২২ | ১১৬২৮ | ১০৮১৯ | ৪৭.৬৬ | ||||
মিরাট ৬৩ | ৬৮৩৭ | ৯৬৩০ | ৯৪৬৭ | ৪৪.০৪ | ||||
রানীনগর ৮৪ | ৩৯০১ | ১১৭০৫ | ১১২৮৪ | ৪৫.০৫ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কাশিমপুর জমিদার বাড়ি, করণা গ্রামে পুরাতন মন্দির, খানপুকুর দীঘি ও পাঁচপীরের দরগা উলেখযোগ্য।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল পাকবাহিনী আতাইকুলা গ্রামে আক্রমণ করে ৭৮ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা কালীগ্রামে আক্রমণ করে বেশ কয়েকজন রাজাকার ও পাকসেনাকে হত্যা করে। পাকবাহিনী কাশিমপুর গ্রামে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ৫৫ জন নিরীহ গ্রামবাসিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৯৭১ সালে ২ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার গজমত খালী তাঁর দলবল নিয়ে রানীনগর উপজেলার পাকসেনাদের উপর আক্রমণ চালায়। এতে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং অনেক মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ২ (কাশিমপুর, আতাইকুলা)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৯০, মন্দির ১৮। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: রানীনগর মসজিদ, পারইল মসজিদ, কাশিমপুর জামে মসজিদ, করণা গ্রামের মন্দির।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৭.৭%; পুরুষ ৫৩.৬%, মহিলা ৪১.৪%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৫, মাদ্রাসা ২১। উলেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শের-ই-বাংলা মহাবিদ্যালয় (১৯৭২), রানীনগর মহিলা কলেজ (১৯৯৫), রাতোয়াল আর এন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), কামতা এস.এন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), রানীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৭), পালসা কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৮), ঘোষগ্রাম কফিলিয়া উচ্চ কিদ্যালয় (১৯৪৫)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, সিনেমা হল ১, ক্লাব ১৪, খেলার মাঠ ১৯, মহিলা সংগঠন ৩, নাট্যদল ৩।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৫.৮৯%, অকৃষি শ্রমিক ১.৯৮%, শিল্প ০.৫৩%, ব্যবসা ১০.৩৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.১৯%, চাকরি ২.৯৫%, নির্মাণ ০.৪৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৫৭% এবং অন্যান্য ৪.৮৬%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬০.৩৯%, ভূমিহীন ৩৯.৬১%।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, সরিষা, পিঁয়াজ, রসুন।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, কাউন, অড়হর।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কলা, কাঁঠাল, পেঁপে।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ১৬, হাঁস-মুরগি ৫৭, নার্সারি ১৮, হ্যাচারি ১১।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৯৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৫.৫৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৬০ কিমি; রেলপথ ৭ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, আটাকল, বরফকল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, মাদুরশিল্পগু, নকশি কাঁথা, বেতের কাজ, মাদুর শিল্প।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৬, মেলা ২। ত্রিমোহনী হাট, বেদগাড়ী হাট, কুজাইল হাট, লোহাচুড়া হাট, রাতুয়াল হাট, আবাদপুকুর হাট, খারপুকুর হাট, কাটরাসিং হাট, কৃষ্ণপুর হাট, পারইল হাট ও চৌমোহনী হাট উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, গম, আলু।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলায় সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৭.০১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৯১%, ট্যাপ ০.৩০%, পুকুর ০.২০% এবং অন্যান্য ৫.৫৯%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলায় ১৭.৮৯% (গ্রামে ১৭.২৯% এবং শহরে ৩৪.৪২%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫০.৭৬% (গ্রামে ৫১.৩৭% এবং শহরে ৩৩.৭৭%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩১.৩৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র (আর ডি) ৭, ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র (এফ ডব্লিউ সি) ৩, কমিউনিটি ক্লিনিক ২২।
এনজিও ব্র্যাক, কেয়ার, আশা, উজ্জীবন। [মো. মোখলেছুর রহমান]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রানীনগর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।