শেরপুর উপজেলা (বগুড়া)
শেরপুর উপজেলা (বগুড়া জেলা) আয়তন: ২৯৬.২৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩২´ থেকে ২৪°৪৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২০´ থেকে ৮৯°৩২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে শাহজাহানপুর উপজেলা, দক্ষিণে রায়গঞ্জ ও তাড়াস উপজেলা, পূর্বে ধুনট উপজেলা, পশ্চিমে নন্দীগ্রাম ও সিংড়া উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৮৬৩০৮; পুরুষ ১৪৫৪১৩, মহিলা ১৪০৮৯৫। মুসলিম ২৫৭৩৬৬, হিন্দু ২৮৭১৭, বৌদ্ধ ৫০ এবং অন্যান্য ১৭৫। এ উপজেলায় সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় প্রধান নদী: করতোয়া, হলহলিয়া, ভাদর।
প্রশাসন শেরপুর থানা গঠিত হয় ১৯৬২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৯ | ২২৪ | ৩১৯ | ৪৫৪৪৫ | ২৪০৮৬৩ | ৯৬৬ | ৫৩.৯ | ৩৩.০ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
৬.৭৪ | ৯ | ১৯ | ২২৩৭১ | ৩৩১৯ | ৬৬.৭ |
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
১.২৭ | ৫ | ২৩০৭৪ | ১৮১৬৯ | ৪০.৭ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কুসুম্বী ৫৭ | ৯৮৪৮ | ১৪৭৪৯ | ১৪৪৬৭ | ৩৫.০৪ | ||||
খানপুর ৪৭ | ৭২৮৯ | ১৩৬০১ | ১৩২৭৮ | ২৮.৭২ | ||||
খামারকান্দি ৩৮ | ৫৪৬৯ | ১০২৭৮ | ৯৯৫৬ | ২৮.৮১ | ||||
গাড়ীদহ ২৮ | ৬১৪৮ | ২০১৮৬ | ১৯৩৪৯ | ৩৭.০০ | ||||
বিশালপুর ১৯ | ১৩১৫২ | ১২৬৫৯ | ১২৪৪৯ | ৩২.০৯ | ||||
ভবানীপুর ১৭ | ৯০৫৬ | ১১৩৫৫ | ১০৯৪৩ | ৩৬.৬২ | ||||
মির্জাপুর ৬৬ | ৯১১৯ | ২৬৩৯৫ | ২৫৬৬৬ | ৩৪.১০ | ||||
সীমাবাড়ী ৮৫ | ৫১২১ | ১১৯১২ | ১১৪৪৮ | ৩৮.৩৪ | ||||
সুঘাট ৯৫ | ৬০২৭ | ১২৫৯০ | ১২৬৫৬ | ২৯.৩৭ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ সিরাজনগর মসজিদ, শেরশাহ মসজিদ, খেরুয়া মসজিদ, ভবানীপুর কালীমন্দির, গোবিন্দ রায় মন্দির।
মুক্তিযুুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল পাকবাহিনী বাঘড়া কলোনী গ্রামের ৩২ জন নিরীহ লোককে ইটখোলার বধ্যভূমিতে ধরে এনে ২৫ জনকে গুলি করে হত্যা করে। ২৬ এপ্রিল পাকবাহিনী ঘোগাব্রিজের নিকট ৩ শতাধিক নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে। একই দিন দড়িমুকন্দ গ্রামে পাকবাহিনীর নির্মম অত্যাচারে ২৬ জন নিরীহ গ্রামবাসি নিহত হয়। এছাড়াও মে মাসে পাকবাহিনী কল্যাণী গ্রামের শতাধিক নিরীহ লোককে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ১ (বাঘড়া কলোনী গ্রাম)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৬১, মন্দির ৬৫, গির্জা ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ধর মোকাম মসজিদ, শের মোকাম মসজিদ।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৬.৩%; পুরুষ ৪১.৫%, মহিলা ৩১%। কলেজ ৭, টেকনিক্যাল কলেজ ৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৯, কেজি স্কুল ২০, মাদ্রাসা ১০৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শেরপুর কলেজ (১৯৬৭), ছোনকা দ্বি-মুখী উচ্চবিদ্যালয় (১৯৫৬), শেরপুর ডায়মন্ড জুবিলী হাইস্কুল (১৯৬৮), পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজ (১৯৮৫), শহীদিয়া আলী মাদ্রাসা (১৯৩৭)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: আজকের শেরপুর, পঞ্চনদীর তীরে, উত্তরাঞ্চল বার্তা; অনিয়মিত: শাশ্বত বাংলার মুখ, শারদ অর্ঘ্য, জনতার সংগ্রাম।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, নাট্যদল ১, সিনেমা হল ৩, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৫, কাব ৬৭, খেলার মাঠ ২০।
দর্শনীয় স্থান পল্লী উন্নয়ন একাডেমি পর্যটন কেন্দ্র, সাউদিয়া পার্কসিটি বিনোদনকেন্দ্র।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬১.৩৩%, অকৃষি শ্রমিক ২.৯৭%, শিল্প ১.৪৪%, ব্যবসা ১৪.৫০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৪৭%, চাকরি ৫.৭৯%, নির্মাণ ১.৮৮%, ধর্মীয় সেবা ০.১৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৭% এবং অন্যান্য ৭.১৯%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫০.০৮%, ভূমিহীন ৪৯.৯২%। শহরে ৩১.৭৮% এবং গ্রামে ৫৩.২৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, ভুট্টা, সরিষা, কালাই, পান, আলু, পিঁয়াজ, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আখ, কাউন, চীনা।
প্রধান ফল-ফলাদি কলা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৩২, গবাদিপশু ১৮১, হাঁস-মুরগি ১৭২, হ্যাচারি ১।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৬০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৫৪ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ডুলী।
শিল্প ও কলকারখানা সিমেন্ট কারখানা ১, কোল্ডস্টোরেজ ১, রাইসমিল ৫১৬, স’মিল ৪৪, আটাকল ২৫১, বরফকল ১০, তেলকল ১২।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প ৪৬০, সূচিশিল্প ৫৪৭, স্বর্ণশিল্প ৭২, মৃৎশিল্প ৬৬, লৌহশিল্প ৩৩৫, বাঁশ ও কাঠের কাজ ৬৭৫।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৪, মেলা ৭। শেরপুর হাট, মির্জাপুর হাট, রানীর হাট, ভবানীপুর হাট, সুঘাট হাট, চান্দাইকোনা হাট এবং কেল্লাপোষীর মেলা, রানী ভবানীর মেলা ও বিজয় দশমীর মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, গম, ভুট্টা, পান, কলা, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৯.৭৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯০.৮৬%, ট্যাপ ০.৫২%, পুকুর ০.২১% এবং অন্যান্য ৮.৪১%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৩.১৮% (গ্রামে ২৬.৫৮% ও শহরে ৭০.৬২%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৬.২২% (গ্রামে ৩৯.১৫% ও শহরে ১৯.৫৫%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩০.৬১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৯, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ২, ক্লিনিক ৮, এবিসি চক্ষু হাসপাতাল ১, দাতব্য চিকিৎসালয় ২।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৮৫ সালের ভূমিকম্পে এ উপজেলায় অসংখ্য মানুষ দালান চাপা পড়ে মারা যায়।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন। [মোঃ সিরাজুল ইসলাম]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; শেরপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।