পীরগঞ্জ উপজেলা (ঠাকুরগাঁও)
পীরগঞ্জ উপজেলা (ঠাকুরগাঁও জেলা) আয়তন: ৩৫৩.৩০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৪০´ থেকে ২৫°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°১৫´ থেকে ৮৮°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, পূর্বে বীরগঞ্জ ও বোচাগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে রানীশংকাইল উপজেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।
জনসংখ্যা ২১৫৭৫৪; পুরুষ ১১১৪৫৮, মহিলা ১০৪২৯৬। মুসলিম ১৫১০০২, হিন্দু ৬১৯৮৩, বৌদ্ধ ১৪৬১, খ্রিস্টান ৬৮ এবং অন্যান্য ১২৪০। এ উপজেলায় সাঁওতাল, ওরাওঁ, মুন্ডা প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় টাংগন নদী, কাহালাই নদী এবং কাচবা বিল, চন্ডীপুর বিল, বোয়ালমারি বিল ও বড়বাড়ী বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন পীরগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৮৭০ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ৭ নভেম্বর ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১০ | ১৬৮ | ১৬৮ | ২৭০৬৭ | ১৮৮৬৮৭ | ৬১১ | ৫৩.০ | ৩৯.৫ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার(%) | |||
১৬.৮৪ | ৯ | ১১ | ২৩৫৭৩ | ১৪০০ | ৫২.৬ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কুশা রাণীগঞ্জ ৬৯ | ৮৬৬২ | ১০০০৬ | ৯৪৫৯ | ৪১.৫৫ | ||||
খনগাঁও ৬০ | ৮৮৫০ | ৯৮৬৯ | ৯০৫৯ | ৩৯.৩৫ | ||||
জাবরহাট ৫১ | ৯৮৪৮ | ১১৮৭৯ | ১১৩৭৮ | ৩৮.৯৯ | ||||
দৌলতপুর ৩৪ | ৭০৬৮ | ৭৪০৭ | ৬৭৮৯ | ৪১.৭৯ | ||||
পীরগঞ্জ ৭৭ | ৫৪৭৫ | ৮৭৫৩ | ৮২০৮ | ৪৭.১৪ | ||||
বৈরচুনা ২৩ | ৯১৬২ | ১০৫৬৮ | ৯৮১৮ | ৪৩.৯৩ | ||||
ভোমরাদহ ২৫ | ৭২০২ | ১০৩৫৪ | ৯৬০৪ | ৩৫.৫৫ | ||||
সেনগাঁও ৯৪ | ৮৮৮০ | ৯৫৩৪ | ৯০৭৩ | ৩৪.৯৫ | ||||
সৈয়দপুর ৮৬ | ৮৫৩১ | ৯৪৪৬ | ৯২৩৭ | ৪১.০৩ | ||||
হাজীপুর ৪৩ | ৮৬৮৫ | ১১৩৩৫ | ১০৪০৫ | ৩৫.৬৮ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ পীর শেখ সিরাজউদ্দীনের (রঃ) মাযার, ঢেমটিয়া গ্রামের প্রাচীন মন্দির।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি হাজী দানেশের নেতৃত্বে এ অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলন সংঘটিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল পাকসেনারা পীরগঞ্জের কয়েকজন বাঙালিকে ভাতারমারি ফার্মে রাস্তার পাশে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৯ ডিসেম্বর পীরগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১ (পীরগঞ্জ মাদ্রাসা সংলগ্ন)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৭, মন্দির ৪০, গির্জা ২, মাযার ২।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪১.৩%; পুরুষ ৪৮.১%, মহিলা ৩৪%। কলেজ ২২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭২, মাদ্রাসা ২৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পীরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৪), পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), জাবরহাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬০), পীরগঞ্জ বণিক সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০), জাবরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৯), পীরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩৩), ভাদুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩৪), পীরডাঙ্গী এস আই সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬৫), ভামদা সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬৫), হাটপাড়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৭৬)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী অনিয়মিত: স্বরগম, সিঞ্চন, ব্যতিক্রম, স্পন্দন, ছাড়পত্র, দীপালোক, রবীন্দ্র স্মরণীকা, বীর বাঙালী, রক্তাক্ত প্রান্তর, দুর্বাদল, রক্তের রং নীল, রক্তঝরা দিন। সাময়িকী: ঐকান্তিক, সমকাল, মুকুল, আবে হায়াত। বার্ষিকী: সিঁড়ি।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, ক্লাব ৫৮, নাট্যদল ২, সিনেমা হল ২, মিলনায়তন ২, খেলার মাঠ ৩৮।
দর্শনীয় স্থান সাগুনী শালবন ও থুমনিয়া শালবন।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৭.৩৪%, অকৃষি শ্রমিক ১.৯৫%, শিল্প ০.৪০%, ব্যবসা ১০.০৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৩০%, চাকরি ৩.৮২%, নির্মাণ ০.৯৬%, ধর্মীয় সেবা ০.১২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৮% এবং অন্যান্য ২.৮৮%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৬.৪০%, ভূমিহীন ৪৩.৬০%। শহরে ৪৬.৩৭% এবং গ্রামে ৫৭.৭৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আখ, ভূট্টা, আলু, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আউশ ধান, পাট।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, কলা, পেঁপে, তরমুজ।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৩০, হাঁস-মুরগি ২৩।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮০ কিমি; কাঁচারাস্তা ৫৮৬.৮ কিমি; রেলপথ ১৮ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি ও গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ধানকল ১, তেলকল ১০, চিড়াকল ৫০, হাসকিং মিল ২৪১, স’মিল ১২, বিস্কুট ফ্যাক্টরী ৫, চানাচুর ফ্যাক্টরী ৩০, জুতা তৈরী কারখানা ৩, ওয়েল্ডিং কারখানা ২১।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ, পাটের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩০। পীরগঞ্জ কলেজ হাট, নসীবগঞ্জ, জাবরহাট, নাকাটি হাট, খনগাঁও হাট, কালিয়াগঞ্জ হাট, ভাবনাগঞ্জ হাট, কালুপীর হাট ও লোহাগড়া হাট উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, চাল, তরমুজ, সবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৯.৫৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.৭৯%, পুকুর ০.১১%, ট্যাপ ০.৩১% এবং অন্যান্য ৪.৭৯%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫.৩৮% (গ্রামে ৩.৫০% এবং শহরে ১৮.৯০%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৪.১৪% (গ্রামে ২২.৩৭% এবং শহরে ৩৭.১৪%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৭০.৪৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৯, ক্লিনিক ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালের বন্যায় ঘরবাড়ি ধ্বংসসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, আরডিআরএস, ওয়ার্ল্ড ভিউ। [আবু মো. ইকবাল রুমী শাহ]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পীরগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।