ভুরুঙ্গামারী উপজেলা
ভুরুঙ্গামারী উপজেলা (কুড়িগ্রাম জেলা) আয়তন: ২৩৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৬°২০´ থেকে ২৬°১৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩৬´ থেকে ৮৯°৪৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম রাজ্য, দক্ষিণে নাগেশ্বরী উপজেলা, পূর্বে আসাম রাজ্য, পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। ছিটমহল ১০।
জনসংখ্যা ১৯৭০৭০; পুরুষ ৯৭৭৭৫, মহিলা ৯৯২৯৫। মুসলিম ১৯৩৬৩৬, হিন্দু ৩৩৯০, বৌদ্ধ ১০ এবং অন্যান্য ৩৪।
জলাশয় প্রধান নদী: দুধকুমার, ফুলকুমার। দিয়াডাঙ্গা বিল, সর্বজায়া বিল ও মরা সাঙ্কোশ বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন ভুরুঙ্গামারী থানা গঠিত হয় ১৯১৫ সালে এবং ১৯৮৩ সালের ১০ এপ্রিল থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ১০ | ৭০ | ১২৫ | ২২৭৯৭ | ১৭৪২৭৩ | ৮৩৫ | ৪৫.১৮ | ২৭.৪৮ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
১৪.৯২ | ৩ | ২২৭৯৭ | ১৫৪৭ | ৪৫.১৮ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আন্ধারী ঝাড় ০৯ | ৬৫২৩ | ৯৫৮২ | ৯৬০৯ | ২৭.২০ | ||||
চর ভুরুঙ্গামারী ৪৭ | ৪৬০২ | ৬২০১ | ৬৩২০ | ২৪.০১ | ||||
জয়মনিরহাট ৫৭ | ৪৩৭২ | ৭৮৪২ | ৭৮৬৬ | ৩৫.৩৭ | ||||
তিলাই ৯৫ | ৪৭৮৫ | ৬৮০৫ | ৭০৩৯ | ২৭.৭৬ | ||||
পাইকের ছড়া ৬৬ | ৬৩২০ | ১০৯৪০ | ১০৯৫৭ | ২৪.৪৬ | ||||
পাথরডুবি ৭৬ | ৬৩৬৩ | ৯৭০২ | ৯৯৪২ | ৩০.৯৮ | ||||
বঙ্গসোনাহাট ৩৮ | ৫৩৩১ | ৭৯৮৪ | ৮২৮৮ | ২১.৩৯ | ||||
বলদিয়া ২৮ | ৬১২৬ | ১০৪১৬ | ১১০১৭ | ২৫.৭৭ | ||||
ভুরুঙ্গামারী ১৯ | ৭১৬২ | ১৯১৬৯ | ১৮৬৬৫ | ৩৮.৮৯ | ||||
শিলখুড়ি ৮৫ | ৬৭৩২ | ৯১৩৪ | ৯৫৯২ | ২৮.৮১ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ দেওয়ানের খামার জামে মসজিদ, পাটেশ্বরী বাজারের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে একটি পুরনো মসজিদের ধ্বংসাবশেষ (মুগল আমলে নির্মিত), ইন্দ্রপ্রসাদ দেব মন্দির, জয়মনির জমিদার বাড়ি।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর ভূরুঙ্গামারী মুক্ত করতে পাকসেনাদের সাথে লড়াইয়ে ভারতীয় বাহিনীর মেজর রামসিংহসহ মিত্রবাহিনীর ৬৯ জন এবং মুক্তিবাহিনীর ৫ জন সদস্য শহীদ হন। ভুরুঙ্গামারী মুক্ত করার পর ২০ নভেম্বর এক লড়াইয়ে পাকবাহিনীর শতাধিক সৈন্য নিহত হয় এবং লেফটেন্যান্ট আবু সাঈদ মোহাম্মদ আশফাকুস সামাদসহ (বীর উত্তম) অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়াও এ উপজেলায় পাকসেনাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ২৬ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সোনাহাট ব্রিজ ধ্বংস করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১ (টিএনও বাসভবনের পেছনে গণকবর); বধ্যভূমি ১ (হাসপাতালের পেছনে); ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়নের বাগভান্ডার গ্রামে ৩০-৩২টি মানুষের মাথার খুলি পাওয়া গেছে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৫২০, মন্দির ১৪।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ২৯.৬%; পুরুষ ৩৪.৯৩%, মহিলা ২৪.৪৩%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩৫, মাদ্রাসা ২৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ভুরুঙ্গামারী ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৭), ভুরুঙ্গামারী মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৪), ভুরুঙ্গামারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), পাটেশ্বরী বরকতিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫০), থানাঘাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬১), ধামেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৫০), ভুরুঙ্গামারী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাউশমারী সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৩৮), ভুরুঙ্গামারী সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৪৮)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ১৫, সিনেমা হল ৩, খেলার মাঠ ৮।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৫.২%, অকৃষি শ্রমিক ৪.১৫%, শিল্প ০.৪%, ব্যবসা ৮.০৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৪৮%, চাকরি ২.৯৯%, নির্মাণ ০.৪৪%, ধর্মীয় সেবা ০.১১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩% এবং অন্যান্য ৬.৮৭%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৪.৪৫%, ভূমিহীন ৪৫.৫৫%। শহরে ৪৪.২৩% এবং গ্রামে ৫৫.৭৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, আলু, গম, আখ, বাঁশ, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি চীনা, আউশ ধান, অড়হর।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, সুপারি, কামরাঙা, জলপাই, পেয়ারা, জাম, চালতা, জামরুল, লটকন, লিচু।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৫, হাঁস-মুরগি ৩২, মৎস্য নার্সারি ১০।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪২.৫৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৩৫.৪১ কিমি; নৌপথ ৩.২৪ নটিক্যাল মাইল।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও মহিষের গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা চা’কল, আগরবাতি ফ্যাক্টরি, বলপেন ফ্যাক্টরি, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, ওয়েল্ডিং কারখানা, মোমবাতি কারখানা, সার কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, পাটশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৫, মেলা ২। জয়মনিরহাট, সোনাহাট, শাহী বাজার হাট, ভুরুঙ্গামারী হাট এবং ভরতের মেলা (পাটেশ্বরী) ও বারনী মেলা (কালিরহাট) উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পাট, সুপারি, ধান, বাঁশ, মুরগি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.৫৫%, পুকুর ০.২২%, ট্যাপ ০.৩১% এবং অন্যান্য ৬.৯২%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪১.২৬% (গ্রামে ৩৮.৭৫% ও শহরে ৬০.৫৫%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২২.৯৯% (গ্রামে ২৩.৭৭% ও শহরে ১৭.০২%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩৫.৭৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪, পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক ১০, স্যাটেলাইট ক্লিনিক ৪২, ক্লিনিক ৩, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৫৭ সালের ঘূর্ণিঝড় ও ১৯৯৩ সালের বন্যায় এ অঞ্চলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এনজিও কেয়ার, ব্র্যাক, আরডিআরএস, আশা। [মো. কামাল হোসেন]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ভুরুঙ্গামারী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।