কুষ্টিয়া সদর উপজেলা

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা (কুষ্টিয়া জেলা)  আয়তন: ৩১৬.২৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪২´ থেকে ২৩°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫৫´ থেকে ৮৯°০৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পাবনা সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলা, দক্ষিণে হরিণাকুন্ড ও শৈলকূপা উপজেলা, পূর্বে কুমারখালী উপজেলা, পশ্চিমে মিরপুর (কুষ্টিয়া) ও আলমডাঙ্গা উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪২৩৮১৮; পুরুষ ২১৯১৪৪, মহিলা ২০৪৬৭৪। মুসলিম ৪০৪৬৪২, হিন্দু ১৮৭৬৯, বৌদ্ধ ১৭২, খ্রিস্টান ৩৪ এবং অন্যান্য ২০১। এ উপজেলায় বাগদী, বুনো, বাঁশফোড় প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় পদ্মা, কালীগঙ্গা, গড়াই ও কুমার নদী এবং সাগরখালী খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন কুষ্টিয়া সদর থানা গঠিত হয় ১৮২৩ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। ১৯৬৯ সালে পৌরসভা গঠিত হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৪ ১১৭ ১৬৫ ৯৯৭০৫ ৩২৪১১৩ ১৩৪০ ৭০.৫ ৪১.৩
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার(%)
১৩.৩১ ১২ ৩০ ৮৩৬৫৮ ৬২৮৫ ৭১.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১.০১ ১৬০৪৭ ১৫৮৮৮ ৬৬.৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আইলচড়া ১৭ ৫৩০৭ ৯৩৩৫ ৮৭৭৩ ৩৭.২৬
আব্দালপুর  ১৬ ৬২০২ ১২৮৫৮ ১১৭৪৬ ৩৫.৮২
আলমপুর ১৮ ৬৬৫৯ ১২৪৭০ ১১৭২৯ ৪১.৬৬
উজানগ্রাম ৯৪ ৫২৯৪ ১০৪১৩ ৯৬৪০ ৩৮.২৮
গোস্বামীদুর্গাপুর ৩১ ৫৫৪৭ ৮৯৪৪ ৮৫৮২ ৩০.১৪
জগতি ৫০ ৫১৭৩ ১৮৪৪১ ১৭৭৭০ ৪৩.৪৮
জিয়ারোখী ৫৬ ৫৭৩২ ১১২০৬ ১০৫৯৪ ৪০.৯৭
ঝাউদিয়া ৬৩ ৬৬০১ ১০৯৪৮ ১০১৫৮ ৩০.৮৬
পাটিকাবাড়ী ৮৮ ৪২২৩ ৮৬১৯ ৮২৬৭ ৩১.৯৪
বারখাদা ২৫ ৪১৮৪ ১৮১৭৪ ১৬৯৪৬ ৫৯.৬৬
মজমপুর ৭৫ ২০০৮ ১৭৮৯৩ ১৬৯৬০ ৫৮.৯২
মনোহরদিয়া ৮২ ৫২৪৩ ৯৩৩৪ ৮৬১২ ৩৫.৪০
হরিনারায়ণপুর ৩৭ ৩৮০৪ ১৩০৫৯ ১১২৬০ ৪৮.১৬
হাট্শ হরিপুর ৪৪ ৭০৬০ ১৪০৪৯ ১৩৩৮০ ৩৫.২৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মুগল আমলে নির্মিত ঝাউদিয়া মসজিদ এবং শায়েস্তা খাঁর আমলের স্বস্তিপুর মসজিদ।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি বাংলার অন্যান্য অংশের মতো কুষ্টিয়ায়ও নীল বিদ্রোহ সংঘঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ১৪৭ জন পাকসেনা কুষ্টিয়া পৌঁছালে তারা সেখানকার পুলিশ, আনসার, ছাত্র এবং স্থানীয় জনগণ কর্তৃক ব্যাপক বাধার সম্মুখীন হয়। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ কুষ্টিয়ায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয়। ৫ সেপ্টেম্বর বংশীতলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বেশসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাকবাহিনী উপজেলার মিলপাড়া কোহিনূর লজ নামক বাড়িতে একই পরিবারের ১২ জনকে হত্যা করে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ৩ (কুষ্টিয়া জেলা স্কুল, কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন ও গড়াই নদীর তীরে); কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত বাংলা ভাস্কর্য; সমাধিস্তম্ভ ১ (বংশীতলা)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান শাহ সুজার মসজিদ, পাটিকাবাড়ী শাহী মসজিদ, কুঠিপাড়া পুরাতন জামে মসজিদ, লাহিনী কারিকরপাড়া দ্বিতল জামে মসজিদ, কুষ্টিয়া বড় জামে মসজিদ, ইসলামপুর শাহী মসজিদ, গোস্বামী দুর্গাপুর রাধা রমণের মন্দির, লাহিনী সর্বজনীন পূজা মন্দির, চার্চ অব বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.৪%, পুরুষ ৫১.৮%, মহিলা ৪৪.৬%। বিশ্ববিদ্যালয় ১, কলেজ ১৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪০, মাদ্রাসা ১৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৭৯), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ (১৯৪৬), কুষ্টিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (১৯৪৭), কুষ্টিয়া কারিগরি মহাবিদ্যালয় (১৯৬৪), কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৬৭), কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ (১৯৬৭), কুষ্টিয়া সেবিকা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, কুষ্টিয়া পি টি আই, গোস্বামী দুর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৬০), হরিনারায়ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৯১), কুষ্টিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), দিনমনি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৩০), মোহনীমোহন বিদ্যাপীঠ (১৯৪৪), কুষ্টিয়া টেকনিক্যাল স্কুল (১৯৫৮), কুষ্টিয়া জেলা স্কুল (১৯৬০), মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯৮)।

পত্র-পত্রিকা এবং সাময়িকী  দৈনিক: বাংলাদেশ বার্তা, আন্দোলনের বাজার, আজকের আলো, বজ্রপাত, কুষ্টিয়া, আজকের সূত্রপাত, দেশভূমি, দেশতথ্য, হাওয়া, শিকল; সাপ্তাহিক: ইস্পাত, দেশব্রতী।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১০, নাট্যমঞ্চ ২, সিনেমা হল ৪, সাহিত্য সংগঠন ৪, মহিলা সংগঠন ৯।

বিনোদন কেন্দ্র শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শিশু পার্ক।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪১.১২%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৫৮%, শিল্প ৩.১৬%, ব্যবসা ২.১২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৯৪%, চাকরি ১৩.৩১%, নির্মাণ ২.০৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬২% এবং অন্যান্য ২৭.৯৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৭.৬৬%, ভূমিহীন ৫২.৩৪%। শহরে ৩১.৩০% এবং গ্রামে ৫২.৩২% পরিবারের কৃষিভূমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, আখ, আলু, তামাক, পান।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসল  নীল।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কলা, কাঁঠাল, লিচু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এবং হ্যাচারি রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৬৫ কিমি; রেলপথ ১৯ কিমি; রেল স্টেশন ৩।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা রাবার শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, এ্যালুমিনিয়াম শিল্প, গার্মেন্টসশিল্প, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, ঔষধ ফ্যাক্টরি, সুগার মিল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

কুটিরশিল্প মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, নকশি কাঁথা, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

হাটবাজার ও মেলা কমলাপুর হাট, জিয়ারোখী হাট, হরিনারায়ণপুর হাট, ঝাউদিয়া হাট এবং রথ মেলা ও বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   তামাক, পান, কলা এবং আখ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৮.৩১% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.৭৯%, ট্যাপ ২.৫৯%, পুকুর ০.১৬% এবং অন্যান্য ৪.৪৬%। উপজেলার ৮.০৪% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৮.৬৫% (গ্রামে ৩৮.৩৫% এবং শহরে ৮৪.৮৫%) পরিবার স্বাস্থ্যকর  এবং ৩১.৬৬% (গ্রামে ৩৭.১৯% এবং শহরে ১২.২১%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৯.৬৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১, মাতৃসদন এবং শিশুসেবা কেন্দ্র ১, টিবি হাসপাতাল ১, ডায়াবেটিক কেন্দ্র ১, চক্ষু হাসপাতাল ১, শিশু হাসপাতাল ১, হাসপাতাল ২, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৪, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ৫০।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৭৬ ও ১৮৯৭ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার কয়েক হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, জাগরণী, দৃষ্টি।  [এস.এম রাকিব নেহাল]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।