বাগেরহাট সদর উপজেলা

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৫:৩৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বাগেরহাট সদর উপজেলা (বাগেরহাট জেলা)  আয়তন: ৩১৬.৯৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৩৫´ থেকে ২২°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩৮´ থেকে ৮৯°৫৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ফকিরহাট ও চিতলমারী উপজেলা, দক্ষিণে রামপাল ও মোড়েলগঞ্জ, পূর্বে কচুয়া (বাগেরহাট), পশ্চিমে ফকিরহাট ও রামপাল উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৫৭২৭৩; পুরুষ ১৩৩৫১৪, মহিলা ১২৩৭৫৯। মুসলিম ২০৭০৬৪, হিন্দু ৪৯৬৯৪, বৌদ্ধ ৪১১, খ্রিস্টান ১৯ এবং অন্যান্য ৮৫।

জলাশয় ভৈরব, চিত্রা ও দাউদখালী নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন বাগেরহাট থানা গঠিত হয় ১৮৪২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০ ১৬৯ ১৮৩ ৪৬৪৫৫ ২১০৮১৮ ৮১২ ৬৮.৫ ৫৯.২
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৭.২৪ ৩১ ৪৬৪৫৫ ৬৪১৬ ৬৮.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাড়াপাড়া ৬৯ ৬৩৮৯ ১৬৩৩৬ ১৫০১৬
খানপুর ৭৭ ৫২৭৫ ৭৯৩৪ ৭৬১৫ ৫৯.৮১
গোটাপাড়া ৫১ ৭৫৬৪ ১১৮২৭ ১১২০০ ৫৬.৪২
ডেমা ৩৫ ১০৯৩১ ৮৩১২ ৭৬০৭ ৫৭.০১
বারুইপাড়া ১৭ ৮৩৪৭ ১৩১৩৮ ১২০২৯ ৫৭.২৫
বিষ্ণুপুর ৩৪ ৭৬৯৫ ১০৯৫৫ ১০৬৩০ ৫৭.১১
বেমরতা ২৫ ৯৫২৭ ১২৮২৪ ১২১১৫ ৫৯.৬৪
যাত্রাপুর ৬০ ৬৪৩০ ৯৭১০ ৮৯৩২ ৫৮.৯২
রাখালগাছি ৮৬ ৪৫৫৭ ৬২৯০ ৬০৬২ ৬১.৯৩
ষাটগম্বুজ ৯৪ ৮৯৫০ ১১৪৪৩ ১০৮৪৩ ৬৩.১৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ খান জাহান আলী সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স, ষাটগম্বুজ মসজিদ, নয়গম্বুজ মসজিদ, অযোধ্যার মঠ, চিল্লাখানা মসজিদ, সোনা মসজিদ, আনার খাঁ মসজিদ, দরিয়া খাঁ মসজিদ, কাটানী মসজিদ, পঁচা দীঘি, এখতিয়ার খাঁ দীঘি, বুড়া খাঁ দীঘি।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি  খান জাহান আলী পনেরো শতকের প্রথমার্ধে বাগেরহাট, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা ও বরিশাল নিয়ে খলিফাতাবাদ রাজ্য গঠন করেন। এ রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনার কেন্দ্র ছিল বাগেরহাট। এখানে তিনি একটি টাকশাল ও অনেক মসজিদ নির্মাণসহ বেশসংখ্যক পুকুর ও দীঘি খনন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা এ উপজেলার একটি পরিবারের ১৮ জনকে জবাই করে হত্যা করে। এছাড়াও উপজেলার পানিঘাট, দেবীর বাজার ও মাধবকাঠিতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই হয়। ১৭ ডিসেম্বর বাগেরহাট শত্রুমুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১ (বান্দাপাড়া); বধ্যভূমি ১ (ডাকবাংলো ঘাট); স্মৃতিস্তম্ভ ১।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৫২, মন্দির ১৩। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ষাটগম্বুজ মসজিদ, কোর্ট মসজিদ, রেলওয়ে মসজিদ, সরুই জামে মসজিদ, রাজেশ্বর মন্দির, মুনিগঞ্জ কালী মন্দির, বারুই রাধেশ্যাম মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬০.৯%; পুরুষ ৬৩.৩%, মহিলা ৫৮.৪%। কলেজ ১৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৪, কারিগরি বিদ্যালয় ২, ইনস্টিটিউট ৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬০, মাদ্রাসা ১৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হোমিওপ্যাথিক কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, খানজাহান আলী কলেজ, শারীরিক শিক্ষা কলেজ, রাংদিয়া স্কুল এন্ড কলেজ (১৯০২), অন্ধ বধির ইনস্টিটিউট, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল, ধাত্রী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও নার্সিং স্কুল, প্রফুল্ল চন্দ্র রায় মহাবিদ্যালয় (১৯১৮), বাগেরহাট বহুমুখী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৭৮), বারুইপাড়া পূর্ণচন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৪), মধুদিয়া ইচ্ছাময়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৫), চিরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৭), খানজাহানীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৩), সুগন্ধি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (১৯৩০), বাগেরহাট ফাজিল মাদ্রাসা, খানপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: দক্ষিণ কণ্ঠ, দূত, উত্তাল, দক্ষিণ বাংলা; সাপ্তাহিক: খানজাহান, বাগেরহাট দর্পণ, বাগেরহাট বার্তা।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১০, ক্লাব ২৫, মহিলা সংগঠন ১, জাদুঘর ১, নাট্যদল ২, নাট্যমঞ্চ ১, মুক্তমঞ্চ ১, সিনেমা হল ২,  খেলার মাঠ ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪২.০১%, অকৃষি শ্রমিক ৭.৪১%, শিল্প ১.২৭%, ব্যবসা ২১.৩১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৫৫%, চাকরি ১০.৬১%, নির্মাণ ১.৭৮%, ধর্মীয় সেবা ০.২৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৫৪% এবং অন্যান্য ১০.২৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৬.৩৮%, ভূমিহীন ৪৩.৬২%। শহরে ৫২.০৮% এবং  গ্রামে ৫৭.২৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, আখ, আলু, পান, ডাল, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি সরিষা, তামাক।

প্রধান ফল-ফলাদি সফেদা, আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, আতা, জামরুল, জাম, নারিকেল, সুপারি।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার চিংড়ি ঘের ১০৪৬১ (গলদা ও বাগদা), গবাদিপশু ৪২, হাঁস-মুরগি ৩২০, হ্যাচারি ১০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৫৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৬৭ কিমি; রেলপথ ১২.৭৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা রাইসমিল, ফ্লাওয়ারমিল, অয়েল মিল, ফিসফিডমিল, আইস ফ্যাক্টরি, চানাচুর ফ্যাক্টরি, বিড়ি ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, মধুচাষ প্রকল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩১, মেলা ৫। যাত্রাপুর হাট, বারাকপুর হাট, বাবুর হাট, কাটাখালি হাট এবং পানিঘাটের মেলা, যাত্রাপুরের রথ মেলা, কোড়ামারার কাসুন্দির মেলা, কৃষি মেলা ও শিল্প মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য নারিকেল, সুপারি, চিংড়ি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪০.৭৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৭০.৫৫%, পুকুর ১৩.৭৩%, ট্যাপ ১৩.৯৫% এবং অন্যান্য ১.৭৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৯.৯% (গ্রামে ৪৫.৩৭% এবং শহরে ৭১.৪৫%) পরিবার স^াস্থ্যকর এবং ৪৫.৯৪% (গ্রামে ৫০.১৬% এবং শহরে ২৫.৮৫%) পরিবার অস^াস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪.১৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, শিশু ও মাতৃসদন কেন্দ্র ১, ধাত্রী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, নার্সিং স্কুল ১, ক্লিনিক ৮১।

এনজিও কেয়ার, ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা।  [এইচ.এম খালেদ কামাল]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বাগেরহাট সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।