ভট্টাচার্য, পঙ্কজ
ভট্টাচার্য, পঙ্কজ (১৯৩৯- ২০২৩) রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা। পঙ্কজ ভট্টাচার্য জন্মেছিলেন ১৯৩৯ সালের ৬ই আগস্ট চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। ছাত্র রাজনীতি করার পাশাপাশি তিনি একজন মেধাবী ফুটবল খেলোয়াড়, সংস্কৃতিকর্মী হিসেবেও সুপরিচিত ছিলেন। ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৫৯ সালে তিনি বহিষ্কৃত হন। যখন বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ও তৎকালীন ছাত্রলীগ (আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন) একসঙ্গে প্রগতিশীল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিল, তখন পঙ্কজ ভট্টাচার্য নির্বাচিত হন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এবং পরবর্তীতে, ১৯৬২ সালে, নির্বাহী সভাপতি।
তাঁর সততা এবং ১৯৬০-এর শিক্ষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সংগঠকের ভূমিকা পালন করার কারণে, সব রাজনৈতিক দলের কর্মীরা পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। ১৯৯০ সালে দেশের রাজনৈতিক দলসমূহের ৩ জোটের মধ্যে ঐক্য রক্ষায় তিনি মুখ্য ভূমিকা রাখেন, যা জাতীয় রাজনীতিতে স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারকে উৎখাত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পঙ্কজ ভট্টাচার্য ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টি গেরিলা বাহিনী গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি উক্ত বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার পর তিনি জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) -এর সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। তিনি আইয়ুব শাসন আমলে ১৯৬৬ সালে কারাবরণ করেন।
১৯৯৩ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম প্রতিষ্ঠিত হলে, তিনি এর অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য মনোনীত হন। পরবর্তীতে, তিনি দেশের প্রগতিশীল ও গণতন্ত্রকামীদের নিয়ে ‘সামাজিক আন্দোলন’ নামক একটি ফোরাম গড়ে তোলেন। ২০১০ সালে তিনি গঠন করেন বামপন্থী ঐক্য ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ঐক্য ন্যাপ)।
প্রথমা প্রকাশনী থেকে ২০২৩ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় পঙ্কজ ভট্টাচার্যের স্মৃতিকথা ‘আমার সেইসব দিন’। এতে তিনি বর্ণনা করেন গত ছয় দশক ধরে বাংলাদেশের ঘটনাবহুল রাজনৈতিক ইতিহাস, যেমন তিনি দেখেছেন।
২৩শে এপ্রিল ২০২৩ তারিখে ৮৩ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরপূর্বে, ২০২২-এর এপ্রিলে তাঁর স্ত্রী, সুপরিচিত নারী অধিকারকর্মী রাখী দাস পুরকায়স্থ মৃত্যুবরণ করেন। তাঁদের কোনো সন্তান ছিল না। [গোবিন্দ চক্রবর্তী]