বালাগঞ্জ উপজেলা
বালাগঞ্জ উপজেলা (সিলেট জেলা) আয়তন: ৩৮৯.৫১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৬´ থেকে ২৪°৪৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৩৮´ থেকে ৯১°৫৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে দক্ষিণ সুরমা ও বিশ্বনাথ, দক্ষিণে রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলা, পূর্বে ফেঞ্চুগঞ্জ, পশ্চিমে বিশ্বনাথ, জগন্নাথপুর ও নবীগঞ্জ উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৫৬২৩৯; পুরুষ ১৩০৬০৭, মহিলা ১২৫৬৩২। মুসলিম ২৩২৯২১, হিন্দু ২৩১৫৮, বৌদ্ধ ৪৩, খ্রিস্টান ৯ এবং অন্যান্য ১০৮।
জলাশয় প্রধান নদী: কুশিয়ারা। হাইলা বিল, চেপতাই বিল, মাজাইল বিল, ধলাই বিল, ধুবুরিয়া বিল ও বেঘাতি বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন বালাগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯২২ সালের ১০ জানুয়ারি এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ১৪ | ২৪১ | ৪৭১ | ৫৬৪৩ | ২৫০৫৯৬ | ৬৫৮ | ৫৪.৪২ | ৪৭.৭০ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৪.৪১ | ২ | ৫৬৪৩ | ১২৮০ | ৫৪.৪২ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
ওমরপুর ৫১ | ৭৮৪৭ | ১০০৯৫ | ৯৩৯৮ | ৪৫.৮২ | ||||
ওসমানপুর ৫৫ | ৭৭৫৭ | ১২৯২০ | ১২৭৯৩ | ৫০.৫২ | ||||
গৌলা বাজার ৪০ | ৪৫৬৩ | ৯৫৫৮ | ৮৬৮৯ | ৪৮.৭৪ | ||||
তাজপুর ৮৮ | ৫৮২০ | ১০৮৬৬ | ১০১৯৮ | ৪৮.৬৯ | ||||
দয়ামীর ২৭ | ৭৯৮৮ | ১২৬৮৬ | ১২২৩৮ | ৫৫.৮৫ | ||||
দেওয়ান বাজার ৩৩ | ১০৯৭৬ | ১৩৫১৬ | ১৩১৬০ | ৫১.৬৯ | ||||
পশ্চিম গৌরীপুর ৬০ | ৬১৯০ | ৫৪৮১ | ৫৫৫৭ | ৪৬.১৯ | ||||
পশ্চিম পৈইলানপুর ৬৪ | ৫১৬৪ | ৫৮১১ | ৫৬৪০ | ৪২.১৬ | ||||
পূর্ব গৌরীপুর ৭০ | ৪৬৮৬ | ৬৭৯২ | ৬৭২৪ | ৪৯.৪০ | ||||
পূর্ব পৈইলানপুর ৬৭ | ৫০৯৪ | ৪৯৮০ | ৪৮৯২ | ৩৯.১৭ | ||||
বালাগঞ্জ ০৬ | ৭৯৭৪ | ১০৯৯৮ | ১০৪০০ | ৪৫.০৯ | ||||
বুরুঙ্গা ২০ | ৪৫৮৩ | ৭১৩৬ | ৬৬৫৮ | ৪০.৪২ | ||||
বোয়ালজুর বাজার ১৩ | ৫৮৩৪ | ৭৪৪৩ | ৭২৭৯ | ৪৯.৮৭ | ||||
সাদীপুর ৮১ | ১০৫৫৪ | ১২৩২৫ | ১২০০৬ | ৪৪.১৫ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আখড়া, নগেন্দ্রদাশ চৌধুরীর বাড়ির ভগ্নাবশেষ, চন্দ্রনাথ শর্মার মন্দির (বাবনোবাজার)।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকবাহিনী নির্বিচারে হত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ চালায়। ৬ মে পাকবাহিনী ইলাশপুরে গণহত্যা চালায় এবং আদিত্যপুরে ৩৬ জনকে হত্যা করে। শেরপুর ও সাদীপুরে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর বড় ধরনের দুটি যুদ্ধ হয়। দুটি যুদ্ধেই পাকবাহিনী পরাজিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ৪ (আদিত্যপুর, বুরুঙ্গা, ভাটপাড়া ও সলিমপুর); স্মৃতিসৌধ ১ (বালাগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৪০. মন্দির ৬, মাযার ৫। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ওসমানপুর জামে মসজিদ, বায়তুল মোয়াজ্জেম জামে মসজিদ (গোয়ালাবাজার), হরিনগর শিবমন্দির, নিশিকান্তদেব ব্রহ্মচারী মন্দির, শাহ তাজউদ্দিনের মাযার, ফকির কানাই শাহের মাযার, কটালী শাহের মাযার (শেরপুর), সৈয়দ উসমান বোগদাদীর (রঃ) মাযার, নারাইন শাহের মাযার।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৭.৮৫%; পুরুষ ৫০.০২%, মহিলা ৪৫.১৯%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪৩, কমিউনিটি বিদ্যালয় ২৭, মাদ্রাসা ২০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শরৎ সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৬), মঙ্গলচন্ডী নিশিকান্ত উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৭), নবগ্রাম হাজী মোঃ ছাইম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), সদরুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক বালাগঞ্জ বার্তা।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ২৭, অডিটোরিয়াম ১।
দর্শনীয় স্থান দয়ামীরে মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি এম.এ জি ওসমানীর পৈতৃক বাড়ি।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৯.৬১%, অকৃষি শ্রমিক ৫.১০%, শিল্প ০.৫৯%, ব্যবসা ১১.০৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৯৩%, চাকরি ৪.২৩%, নির্মাণ ১.৬১%, ধর্মীয় সেবা ০.৫৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১১.৫২% এবং অন্যান্য ১২.৭৬%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪২.৩৪% এবং ভূমিহীন ৫৭.৬৬%। শহরে ৩৭.১৯% এবং গ্রামে ৪২.৪৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, সরিষা, আলু।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক, মাষকলাই।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঠাল, নারিকেল।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৮৯.৩৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৭২.৮১ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।
কুটিরশিল্প শীতলপাটি, নকশি পাটি, বাঁশ ও বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা বালাগঞ্জ বাজার, গোয়ালা বাজার, তাজপুর বাজার, দয়ামীর বাজার, খালের মুখ হাট এবং ঘিওর খালের মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য নকশি পাটি, মাছ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৩.০৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৪৫.৫৭%, ট্যাপ ২.১৩%, পুকুর ৪৪.৫১% এবং অন্যান্য ৭.৭৯%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা ৪৫.৬০% (শহরে ৫৯.১৫% এবং গ্রামে ৪৫.২৫%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৩.৩৫% (শহরে ৩০.৪৪% এবং গ্রামে ৪৩.৬৯%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১১.০৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৬, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৬, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, কমিউনিটি ক্লিনিক ২৩, ক্লিনিক ৮, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ৪।
এনজিও ব্র্যাক, কেয়ার। [মহিউদ্দিন শীরু]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বালাগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।