Biomass
বায়োমাস (ইরড়সধংং) এক প্রকারের উদ্ভিদ এবং প্রাণীজ জৈব উপাদান যা অনুকূল পরিবেশে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক শক্তি থেকে তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে। কোনো এলাকায় পরিবেশস্থ জীবিত এবং জৈবিক পদার্থের মোট পরিমাণকে বৈজ্ঞানিকভাবে বায়োমাস হিসাবে গণ্য করা হয়। যদিও কার্বন জৈব পদার্থের প্রধান উপাদান, এতে সাধারণত হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন, কিছু ক্ষারীয় বা অম্লীয় উপাদান এবং ভারী ধাতুও থাকে। বায়োমাস এবং জীবাশ্ম জ্বালানির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হল বিশাল সময়ের ব্যবধান। জীবাশ্ম জ্বালানী যেমনÑ কয়লা, তেল বা জৈব পদার্থ থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ বছর সময় প্রয়োজন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির শক্তির তীব্রতাও অনেক গুণ বেশি। যখন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে শক্তি উৎপন্ন হয়, তখন কার্বন ডাই অক্সাইড এবং জলীয় বাষ্প শোষিত না হয়ে তা বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে যায় ফলে বাতাসে তাদের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, বায়োমাসে সঞ্চিত শক্তি মূলত রাসায়নিক শক্তি যা উদ্ভিদ সূর্যের ফোটন থেকে সালোকসংশ্লেষণের সময় আহরণ করে। যেহেতু উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া আমৃত্যু চলতে থাকে, তাই জৈববস্তুকে জৈব প্রক্রিয়া দ্বারা উৎপন্ন জ্বালানী পণ্যের নবায়নযোগ্য কাঁচামাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূলত, কৃষি ও বনজ পণ্যকে 'প্রাকৃতিক বায়োমাস' হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রাকৃতিক জৈববস্তু-ভিত্তিক শিল্পবর্জ্য পণ্য, পশুর বর্জ্য, জৈব বর্জ্য, জীবাণুবিয়োজ্য অংশের অবশিষ্টাংশ এবং শিল্প ও পৌর বর্জ্যের জৈব ভগ্নাংশকে 'বর্জ্য জৈববস্তু' বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। শহুরে আবর্জনা অণুজীব দ্বারা পচনের ফলে উৎপাদিত বায়োগ্যাস বা শস্যের মাড়, সেলুলোজ, শর্করা থেকে তৈরি ইথানল, শিল্প উৎপাদনে ব্যবহৃত উদ্ভিদ, বা ভোজ্য তেল, পশুর চর্বি, ইত্যাদি থেকে উৎপাদিত বায়োডিজেলগুলোকেও জৈব পদার্থ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের গ্রামীণ পরিবারের জন্য বায়োমাস প্রাথমিক শক্তির উৎস। কারণ বায়োমাস একটি নবায়নযোগ্য এবং কম সালফার-সমৃদ্ধ পরিবেশবান্ধব শক্তির উৎস। বায়োমাস অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় কম গ্রিনহাউস গ্যাস এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক গ্যাস নির্গমন করে। [আবু তোরাব মো. আবদুর রহিম]