আনন্দবিহার
আনন্দবিহার প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে সমৃদ্ধ কুমিল্লার নিকটবর্তী কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত। এ বিহার ময়নামতীতে আবিষ্কৃত সৌধমালার মধ্যে সর্ববৃহৎ। এ এলাকার সর্ববৃহৎ পুষ্করিণীসহ আনন্দবিহার কমপ্লেক্সটি সাত শতকের শেষ বা আট শতকের প্রথম দিকের কোনো এক সময়ে প্রথম দেববংশের তৃতীয় শাসক শ্রী আনন্দ দেব কর্তৃক নির্মিত হয়। ১৯৪৪-৪৫ সালে ইটলুণ্ঠনকারী ঠিকাদারদের দ্বারা এবং পরে সেনানিবাস তৈরীর সময় প্রত্নস্থলটির প্রভূত ক্ষতি সাধিত হয়।
এখানে খননকাজ এখনও অসম্পূর্ণ। তবে এ যাবৎ যতখানি কাজ হয়েছে তাতে এখানে শালবন বিহারের মতো একটি বিশাল বিহারের রূপরেখা পরিদৃষ্ট হয়। বর্গাকৃতি এ বিহারের প্রত্যেক দিকের পরিমাপ ১৯৮ মিটার। এখানেও শালবন বিহারের মতো বর্গক্ষেত্রের চারটি বাহুতে বিন্যস্ত সন্ন্যাসীদের কক্ষ লক্ষ করা যায়। বিহারের খোলা আঙিনার মধ্যস্থলে অবস্থিত এক বিরাট ক্রুশাকার মন্দিরের চারপাশ ঘিরে এ কক্ষগুলি সন্নিবেশিত। বিহারের উত্তর দিকের মধ্যস্থলে রয়েছে এর একমাত্র মনোরম প্রবেশদ্বার। প্রবেশদ্বারের বহির্ভাগটি সুপরিসর ও বৃহদায়তন এবং তা বাইরের দিকে সম্প্রসারিত। এ বিহার শালবন বিহারের চেয়েও বড় ও সুবিস্তৃত। ‘অফসেট’ ও ছাঁচের তৈরী নকশার জন্য এর পুরু বহিঃপ্রাচীরটি দেখতে অপেক্ষাকৃত সুন্দর। ভেতরের বারান্দার দেয়ালও ছাঁচের অলঙ্করণ ও নকশা করা ইট দ্বারা সজ্জিত। উত্তর সারির কয়েকটি কক্ষ এবং মধ্যবর্তী মন্দিরের দক্ষিণ দিকের অংশবিশেষ খনন কাজের ফলে উন্মুক্ত হয়েছে। এগুলি থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, এসব কক্ষ ও মন্দিরের অংশ দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহূত হয়ে আসছিল। তবে এ প্রত্নস্থলে খনন কাজ এখনও অনেক বাকি। প্রাথমিক পর্যায়ের পরে খনন কাজ অব্যাহত রাখা হয় নি। এ বিহারের বিশাল আকার এবং এখানে আবিষ্কৃত একটি তাম্রশাসন, ৬৩টি রৌপ্য মুদ্রা, বহুসংখ্যক ব্রোঞ্জমূর্তি ও পোড়ামাটির ভাস্কর্য ফলক এবং মঠের বাইরে মৃৎপাত্র পোড়ানোর একটি ভাঁটির অস্তিত্ব এ প্রত্নস্থলের সম্ভাবনাময় গুরুত্বের ইঙ্গিতবহ। [এম. হারুনুর রশিদ]