হাসান, এস.এম.এ রাশীদুল
হাসান, এস.এম.এ রাশীদুল (১৯৩২-১৯৭১) শিক্ষাবিদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বড়শিজা গ্রামে ১৯৩২ সালের ১ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ আবু সাঈদ এবং মাতা খাদিজা বেগম। রাশীদুল হাসান তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন মুর্শিদাবাদ জেলার ভাবতা আজিজিয়া মাদ্রাসায়। একই মাদ্রাসা থেকে তিনি ১৯৪৭ সালে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৯৪৯ সালে তিনি ঢাকা ইসলামিয়া ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ১৯৫২ সালে বিএ অনার্স এবং ১৯৫৪ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
রাশীদুল হাসান ১৯৫৪ সালে নরসিংদী কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। এক বছর পর তিনি পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে তিনি এডওয়ার্ড কলেজের চাকরি ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণচন্দ্র কলেজে ইংরেজি বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে লেকচারার পদে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালে তিনি সিনিয়র লেকচারার পদে উন্নীত হন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল (বর্তমান জহুরুল হক হল) সংলগ্ন শিক্ষকদের আবাসিক ভবনের চার তলায় রাশীদুল হাসান সপরিবারে বসবাস করতেন। এসময় ঢাকায় অপারেশনরত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ গড়ে উঠে। বিষয়টি পাকিস্তানি গোয়েন্দা বাহিনীর গোচরীভূত হয়। সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখ পাকিস্তানি আর্মি তাঁকে গ্রেফতার করে। ১২ দিন পর তিনি মুক্তি লাভ করেন।
এরপর নিরাপত্তাহীনতার কারণে রাশীদুল হক তাঁর পরিবারসহ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আনোয়ার পাশার বাসভবনে থাকতেন এবং খুব সকালে তাঁর নিজের বাসায় চলে যেতেন। ১৩ ডিসেম্বর রাতে তাঁরা আনোয়ার পাশার ফ্ল্যাটে যান। ১৪ তারিখ সকালে খাকি কাপড় পরা মুখোশধারী কিছু লোক আনোয়ার পাশার ফ্ল্যাটে যায় এবং এ দু’জন শিক্ষককেই ধরে নিয়ে যায়। ২২ দিন পর ঢাকার মিরপুর এলাকার বধ্যভূমিতে রাশীদুল হাসানের মৃতদেহ পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
জাতির জন্য তাঁর আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকারের ডাক বিভাগ ১৯৯১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এস.এম.এ রাশীদুল হাসানের নামে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করে। [মোঃ মাহমুদুল হাসান]