হাঁপানি
হাঁপানি (Asthma) শ্বাসনালীর এক ধরনের বৈকল্য, যে কারনে শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা হয়। অধিকাংশ হাঁপানির আক্রমণ মৃদু, তবে উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে অবস্থা মারাত্মক হতে পারে। অনেক সময়ে রোগটিতে সাঁ সাঁ শব্দসহ মারাত্মক রকমের শ্বাসকষ্ট হয়।
হাঁপানির দুটি প্রধান ধরন চিহ্নিত করা গেছে। প্রথমটিতে নাক, গলা, সাইনাস, এমনকি ফুসফুসেরও সংক্রমণ ঘটে, যাকে প্রায়শই ক্লোমনালি প্রদাহ বা ব্রংকাইটিস বলা হয়। দ্বিতীয়টি ব্যাপকতর। এটি একটি অ্যালার্জিক বিক্রিয়া যা বংশগত হতে পারে। অ্যালার্জিঘটিত হাঁপানিতে রোগী ফুলের রেণু, গৃহস্থালির ধুলাবালি, ছত্রাক, পশুর লোম, নির্দিষ্ট কিছু বস্ত্তর গন্ধ, কীটনাশক, বিশেষ খাবার অথবা ঔষধের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে। উভয় ধরনের হাঁপানিতে ক্লোমনালির অভ্যন্তরীণ পথের মিউকাস আবরণী স্ফীত হওয়ার দরুন নালিগুলি সরু হয়ে যায় এবং মিউকাস রোধক তৈরি হয়।
আবেগময় মানসিক চাপসহ বিভিন্ন কারণে হাঁপানির আক্রমণ মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। আর্দ্রতার পরিবর্তন (স্যাঁতসেঁতে ভাব), তাপমাত্রা, বায়ুদূষণ ইত্যাদি হাঁপানির আক্রমণ তরান্বিত করে। হাঁপানির সাধারণ উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে গলনালির অাঁটসাঁট অবস্থা, অবিরাম কাশি ও শ্বাসকষ্ট। মারাত্মক অবস্থায় রোগী শ্বাসকষ্টসহ দমবন্ধ অবস্থা অনুভব করতে পারে।
বাংলাদেশ অ্যাজমা অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ বক্ষ ও হূৎপিন্ড সমিতির তথ্য থেকে জানা যায় যে, প্রায় ৭০ লক্ষ লোক অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫% এই রোগে ভুগছে। হাঁপানি রোগীর মাত্র ১০% দেশে উপযুক্ত চিকিৎসা পেয়ে থাকে। ঢাকা শহরের বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল হলো একমাত্র কেন্দ্র, যেখানে এই রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা সুবিধাদি রয়েছে। অ্যাজমা অ্যাসোসিয়েশন-এর উদ্যোগেও চিকিৎসার কিছুটা সুবিধা গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ জেলা হাসপাতালে এই রোগের সুচিকিৎসা ও ঔষধপত্রের অভাব রয়েছে। অন্যান্য কারণ ছাড়াও পরিবেশগত পরিবর্তন, বিশেষত বায়ুদূষণ হাঁপানি রোগীর সংখ্যাবৃদ্ধির কারণ বলে অনুমিত হয়। হাসপাতাল সূত্র থেকে জানা যায় যে, বিগত কয়েক বছরে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অ্যালার্জেন বা হাঁপানি-প্ররোচক কোন বস্ত্তর সংস্পর্শ থেকেই সম্ভবত হাঁপানি শুরু হয়।
[এস.এম হুমায়ুন কবির]
আরও দেখুন অ্যালার্জি; ব্রংকাইটিস।