সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৬:৩২, ৬ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Robot: Automated text replacement (-'''''তথ্যসূত্র''''' +'''তথ্যসূত্র'''))

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা (সুনামগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ২৬৮.৬১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪৯´ থেকে ২৫°১০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১৪´ থেকে ৯১°২৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে দোয়ারাবাজার উপজেলা, পশ্চিমে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ২১৯৩৩৮; পুরুষ ১১৩০১৬, মহিলা ১০৬৩২২। মুসলিম ১৯৫৬২১, হিন্দু ২২৭৩৬, বৌদ্ধ ৭৮৮, খ্রিস্টান ২৫ এবং অন্যান্য ১৬৮।  এ উপজেলায় হাজং, মনিপুরী, গারো প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: সুরমা। কান্দার হাওড়, বাহানা বিল, রাউয়া বিল, সফেলা বিল, সুরইয়া বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন সুনামগঞ্জ সদর থানা গঠিত হয় ১৮৭৭ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে। পৌরসভা গঠিত হয়  ১৯৬০ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৪৩ ৩০৭ ৫৭৩১৭ ১৬৮৬৭৪ ৮১৭ ৫৭.৮৯ ৩১.২০



পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৭.৩৯ ৪৪ ৫০৬৬৪ ২৯১৩ ৬১.০৭


উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
- ৬৬৫৩ - ৩২.২৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আফতাব নগর ১০ ৫২০১ ৮৬৩৯ ৮০৪৪ ৩১.৭০
কাতৈর ৬০৬৮ ২৬০৩ ২৫০৯ ২৬.১৯
গৌরারং ২৭ ১০৫১১ ১৪০৬৪ ১৩৩১৬ ২৯.৬৭
জাহাঙ্গীরনগর ৮০৭০ ৭১৯৮ ৭১৬৪ ৩৩.৭২
মোল্লাপাড়া ৫৫ ৭৩৮৪ ৮৫৩১ ৭৯০৭ ২৮.৫২
মোহনপুর ৫০ ৭৮৬৯ ১১১৪৯ ১০৭৬৮ ৩০.০০
রঙ্গার চর ৭২ ১৪৭৭৮ ১০৬৫১ ১০৪৮৩ ২৯.৪৮
লক্ষ্মণশ্রী ৩৯ ৪৯৭৯ ৬৩৮০ ৫৯১২ ৩৫.০৪
সুরমা ৮১৯৯ ১৭০০৩ ১৬৩৫৩ ৩৪.৭৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ গুদিগাঁও (মঙ্গলকাটা) প্রাচীন মসজিদের অংশ বিশেষ, পাগলা জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর সৈয়দ উমেদ হারুন বোগদাদীর মাযার, হাছন রাজার সমাধি ও বাড়ি, জুবিলী স্কুলের পুরাতন ভবন।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী সুনামগঞ্জ শহর, কৃষ্ণনগর, আহসানমারা ফেরিঘাট এবং উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গণহত্যা ও নারী নির্যাতনসহ অগ্নিসংযোগ চালায়। সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউজ ও আহসানমারা ফেরী ঘাট এলাকায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ চলাকালে পাকবাহিনীর আক্রমণে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মঙ্গলকাটার কৃষ্ণনগরে ৪৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ডলুরায় তাদের সমাহিত করা হয়।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা


মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১; স্মৃতিস্তম্ভ ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ১১৩, মন্দির ৭৮, গির্জা ২, মাযার ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কোর্ট জামে মসজিদ, পাগলা জামে মসজিদ, পাথারিয়া বৈষ্ণব আখড়া, সৈয়দ উমেদ হারুন বোগদাদীর মাযার।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.৬৩%; পুরুষ ৫৩.০৯%, মহিলা ৪৩.৭৬%। কলেজ ৫, কারিগরি বিদ্যালয় ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৫, কমিউনিটি বিদ্যালয় ২৬, কিন্ডার গার্টেন ৮, মাদ্রাসা ৭। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ (১৯৪৪), সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৮৪), সুনামগঞ্জ পৌর কলেজ (১৯৯৫), মঈনুল হক কলেজ (২০০৪), সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৭), সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০), রঙ্গারচর হরিণাপাটি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), নারায়ণতলা মিশন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭২), সুনামগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৮০), কৃষ্ণনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোসেনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিয়ামতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ দ্বীনি মাদ্রাসা (১৯৭৪), দামোদরতপী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা (১৯৬৫)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: হাওর বার্তা, দেশপ্রান্ত (২০০৬); সাপ্তাহিক: স্বজন (১৯৯১), সুনামকণ্ঠ (২০০০), সুরমা এক্সপ্রেস (২০০৬), সুনামগঞ্জ রিপোর্ট (২০০৫), সুনামগঞ্জের জনপথ (২০০৬), সুনামগঞ্জ সংবাদ (১৯৯১), সুনামগঞ্জ বার্তা (১৯৮৫), অনল (১৯৯১), গ্রাম বাংলার কথা (২০০৭); সাপ্তাহিক (অবলুপ্ত): সুনাম (১৯৮৪), দিন যায় (১৯৯২), সুনামগঞ্জের কাগজ (১৯৯১)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৪, নাট্য সংগঠন ৬, মহিলা সংগঠন ৫, প্রেসক্লাব ১, শিল্পকলা একাডেমী ১, রেস্ট হাউজ ৩, অডিটোরিয়াম ৩, শিশু একাডেমী ১, সংগীত বিদ্যালয় ৪, নাট্যমঞ্চ ২, স্টেডিয়াম ২, খেলার মাঠ ৩৫, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৮।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬২.০৬%, অকৃষি শ্রমিক ৬.৪৫%, শিল্প ০.৮৫%, ব্যবসা ১০.৯৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৬৫%, চাকরি ৫.০১%, নির্মাণ ০.৬৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৪২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.০৮% এবং        অন্যান্য ৯.৮৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৭.৬০%, ভূমিহীন ৫২.৪০%। শহরে ৪২.৬৬% এবং গ্রামে ৪৮.৪৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, সরিষা, আখ, চীনাবাদাম, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  তিল, কাউন, অড়হর, তামাক।

প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, আনারস, পেয়ারা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৭০, গবাদিপশু ১১০, হাঁস-মুরগি ২১০, হ্যাচারি ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮৯.৫৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪০৫.৫৯ কিমি; নৌপথ ২০ নটিক্যাল মাইল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চালকল, আটাকল, বরফকল, করাতকল, হিমাগার, মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩০, মেলা ২। পাগলা বাজার, টুকের বাজার, মঙ্গলকাটা বাজার, মুন্সিগঞ্জ বাজার, মুরাদপুর বাজার, পাথারিয়া বাজার, জয়নগর বাজার, হরিণাপাটি বাজার, রঙ্গারচর বাজার, বনগাঁও বাজার, চৌমুহনী বাজার, হাসাউড়া বাজার, বৈঠাখালী বাজার, জয়কলস বাজার, নোয়াখালী বাজার, গনিগঞ্জ বাজার, বিটগঞ্জ বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   ধান, মাছ, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৫.৩৭% পরিরবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ  প্রাকৃতিক গ্যাস।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৭৬.৪৪%, পুকুর ৯.৮২%, ট্যাপ ২.১৪% এবং অন্যান্য ১১.৬০%। জেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী উপজেলার ৫৭৭১ টি নলকূপের মধ্যে ৯২৬ টির পানি আর্সেনিকযুক্ত এবং ২২৬ টি অপরীক্ষিত। এই হিসেবে, আর্সেনিক আক্রান্ত নলকূপ ১৭%। এ পর্যন্ত উপজেলায় ৯৫ জন আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১৮.৯৭% (গ্রামে ১২.১৪% ও শহরে ৫৪.৮৪%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬৮.৯২% (গ্রামে ৭৪.৬৭% ও শহরে ৩৫.২৮%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১২.১১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ২, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ২, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৮, ক্লিনিক ২, মাতৃসদন ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে ২৮৭ জন লোক প্রাণ হারায় এবং ঘরবাড়ি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া ১৯৭৪, ১৯৮৮ ও ২০০৪ সালের বন্যায় ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এনজিও এফআইভিডিবি, বার্ড, ব্র্যাক, আশা, সুজন, ইরা, হ্যান্স।  [অলক ঘোষ চৌধুরী]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।