সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ
সরকারি কর্মচারী .বিশেষ বিধান') 'অধ্যাদেশ ১৯৭৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জারিকৃত এ অধ্যাদেশে (১৯৭৯ সালের ১১নং অধ্যাদেশ) সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা রক্ষার বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত হয়। একজন সরকারি কর্মচারী এ আইনের আওতায় পড়বেন যদি তিনি (ক) কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টির তৎপরতায় লিপ্ত হন বা শৃঙ্খলা বিধানে বিঘ্ন সৃষ্টি করেন বা অন্য যেকোন সরকারি কর্মচারীর কর্তব্য পালনে বাধা প্রদান করেন; (খ) বিনানুমতিতে বা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকেন অথবা কর্তব্য পালনে বিরত থাকেন বা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন এবং তা অন্যের সঙ্গে যোগসাজসে হোক বা না-ই হোক; (গ) উত্তেজনা সৃষ্টি অথবা অন্য যেকোন সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকতে বা দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে বা কর্তব্য পালন না করতে প্ররোচিত করেন; (ঘ) যেকোন সরকারি কর্মচারীকে তার দায়িত্ব পালনে তৎপর হতে বা তার কর্তব্য সম্পাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। এর যেকোন একটি অপরাধের নির্ধারিত শাস্তি হলো চাকুরিচ্যুতি বা চাকুরি থেকে অব্যাহতি অথবা পদাবনতি বা বেতন হ্রাস।
এ অধ্যাদেশে তদন্তকার্য ও শাস্তি দানের যে কার্যপ্রণালী নির্দিষ্ট করা হয়েছে তা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ১৯৭৫-এর কার্যপ্রণালীর তুলনায় সংক্ষিপ্ত। এ অধ্যাদেশে তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রথমত, কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে অধ্যাদেশে বর্ণিত কোনো অভিযোগ আনতে হলে তার নিয়োগ কর্তৃপক্ষ বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে একটি অভিযোগ গঠন করতে হবে। অতঃপর অভিযোগপত্রের কপিসহ অভিযুক্ত কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হবে। অধ্যাদেশের বিধানমতে কেন তাকে উল্লিখিত অভিযোগে শাস্তি প্রদান করা হবে না এ মর্মে নোটিশ জারির পর থেকে সর্বনিম্ন ২ দিন বা সর্বোচ্চ ৫ দিনের মধ্যে তার উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা করে এবং তিনি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে তার বক্তব্য পেশ করতে ইচ্ছুক কিনা তা জানিয়ে তাকে নোটিশের জবাব দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, অভিযুক্ত ব্যক্তি নোটিশের জবাবে কোনো কারণ দর্শালে এবং উপস্থিত হয়ে কোনো বক্তব্য পেশ করলে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনা করবেন। এরপর যদি নিয়োগ কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত কর্মচারীকে তার বিরুদ্ধে গঠিত অভিযোগে দোষী বলে মনে করেন অথবা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি কোনো কারণ না দর্শান তাহলে উল্লিখিত অধ্যাদেশে বর্ণিত শাস্তি তার ওপর কেন বলবৎ করা হবে না, ৩ দিনের মধ্যে তার কারণ দর্শানোর জন্য একটি নোটিশ প্রদান করবেন।
তৃতীয়ত, দ্বিতীয়বার প্রদত্ত কারণ দর্শাও নোটিশের জবাব বিবেচনা করে অথবা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো কারণ ব্যাখ্যা করা না হলে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশে বর্ণিত যেকোন শাস্তি অভিযুক্ত কর্মচারীর ওপর বলবৎ করতে পারেন। যদি ডাকযোগে অভিযুক্তের নিকট নোটিশ পাঠানো হয় অথবা তার সর্বশেষ জ্ঞাত আবাসস্থলের প্রকাশ্য স্থানে তা লটকিয়ে জারি করা হয় অথবা অন্যূন দুটি দৈনিক সংবাদপত্রে তা প্রকাশ করা হয়, তাহলে ধরে নেওয়া হবে যে নোটিশ জারি করা হয়েছে।
এ অধ্যাদেশ বলে আরোপিত শাস্তির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারীর আপীল করার সুযোগ রয়েছে। আরোপিত শাস্তির আদেশ প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে আপীলের আবেদন পেশ করতে হবে। নিয়োগ কর্তৃপক্ষের অব্যবহিত ঊর্ধ্বতন যেকোন কর্তৃপক্ষ বরাবরে আপীল করতে হবে। আপীল কর্তৃপক্ষ দায়েরকৃত আপীল বিষয়ে তার বিবেচনায় সঙ্গত যেকোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। আপীলের রায়ই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এ অধ্যাদেশের কোনো বিধানের আওতায় গৃহীত কার্যধারা বা আদেশ সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না। [এ.এম.এম শওকত আলী]