শূন্যপুরাণ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০৩, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

শূন্যপুরাণ  ধর্মপূজার শাস্ত্রগ্রন্থ, রচয়িতা রামাই পন্ডিত। রামাই পন্ডিতের কাল মুসলিম বিজয়োত্তর তেরো শতক বলে অনুমান করা হয়। ‘নিরঞ্জনের রুষ্মা’ নামে শূন্যপুরাণের একটি অংশ আছে। তাতে মুসলিম পীর-গাজী কর্তৃক ব্রাহ্মণদের অত্যাচার থেকে সদ্ধর্মী তথা বৌদ্ধদের রক্ষা করার বিবরণ আছে। ভাষাগত বৈশিষ্ট্য থেকে কোনো কোনো পন্ডিত এই অংশকে শূন্যপুরাণের পরবর্তীকালের রচনা বলে মনে করেন। তাঁদের মতে ‘নিরঞ্জনের রুষ্মা’ অংশটি হিন্দু-মুসলমানের ধর্মসমন্বয়ের চেতনা থেকে পরে প্রক্ষিপ্ত হয়েছে।

মূল গ্রন্থে ধর্মপূজার যে বিবরণ আছে তাতে বৌদ্ধধর্মের শূন্যবাদ ও হিন্দু লোকধর্মের মিশ্রণ ঘটেছে। বঙ্গে পালদের পতন ও সেনদের আবির্ভাবে বৌদ্ধমত ও ব্রাহ্মণ্যবাদের দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়ের যুগসন্ধিক্ষণের ধর্মীয় চেতনা থেকে ধর্মপূজার উদ্ভব হয়। রামাই পন্ডিত একে সংগঠিত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন।

শূন্যপুরাণ গদ্য ও পদ্যের মিশ্রণে রচিত একটি চম্পূকাব্য। এর প্রথম পাঁচটি অধ্যায়ে সৃষ্টিতত্ত্ব সম্বন্ধে বর্ণনা আছে। এতে ধর্মদেবতা নিরঞ্জনের যে কল্পনা করা হয়েছে তা বৌদ্ধদের শূন্যবাদের অনুরূপ। সেতাই, নীলাই, কংসাই, রামাই ও গোসাঁই এই পঞ্চপন্ডিত পঞ্চ ধ্যানীবুদ্ধের প্রচ্ছন্ন রূপ। গ্রন্থের পরের ৪৬টি অধ্যায়ে ধর্মপূজার রীতি-পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। ‘দেবীর মনঞি’ অধ্যায়ে হিন্দুদের অনুরূপ পশুবলির কথা আছে; কিন্তু বৌদ্ধধর্মে পশুবলি নিষিদ্ধ। শেষের দুটি অধ্যায়ে নাথদেবতার উল্লেখ আছে। এটিও প্রক্ষিপ্ত, কেননা নাথধর্ম ও ধর্মপূজা দুটি ভিন্ন ধর্ম। ধর্মপূজা পশ্চিমবঙ্গে এবং নাথধর্ম উত্তরবঙ্গে প্রচারিত হয়। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে শূন্যপুরাণ শিল্পকর্ম হিসেবে নয়, ধর্মগ্রন্থ হিসেবেই ঐতিহাসিক গুরুত্ব পেয়ে আসছে।

[ওয়াকিল আহমদ]