শিবালয় উপজেলা
শিবালয় উপজেলা (মানিকগঞ্জ জেলা) আয়তন: ১৯৯.০৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৪৪´ থেকে ২৩°৫৫´ উত্তর অক্ষাংশ ৮৯°৪২´ থেকে ৮৯°৫৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে দৌলতপুর (মানিকগঞ্জ) ও ঘিওর উপজেলা, দক্ষিণে হরিরামপুর ও গোয়ালন্দ উপজেলা, পূর্বে ঘিওর ও হরিরামপুর উপজেলা, পশ্চিমে বেড়া উপজেলা।
জনসংখ্যা ১৫৪২৩৯; পুরুষ ৭৯৭১০, মহিলা ৭৪৫২৯। মুসলিম ১৩২৫৭৭, হিন্দু ২১৫৪২, বৌদ্ধ ১০৩, খ্রিস্টান ১৩ এবং অন্যান্য ৪। জলাশয় প্রধান নদী: পদ্মা, যমুনা, ইছামতি।
প্রশাসন শিবালয় থানা গঠিত হয় ১৯১৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৭ | ২০২ | ২৫৩ | ৪১৭৫ | ১৫০০৬৪ | ৭৭৫ | ৫০.৯৬ | ৪০.৬৭ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
২.৮৩ | ৫ | ৪১৭৫ | ১৪৭৫ | ৫০.৯৬ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আরুয়া ১১ | ৫০০০ | ৬৭২৩ | ৬৪৮৯ | ৩৩.৮৮ | ||||
উথলী ৮৩ | ৫৮৫৪ | ১০৭২৯ | ১০২৯৮ | ৪৩.০৫ | ||||
উলাইল ৭১ | ৪৮৭৭ | ১১২৪৭ | ১০৯৬৫ | ৪১.৪৪ | ||||
তেওতা ৫৯ | ১২৫০৫ | ১৫৭১৬ | ১৫০১১ | ৩৫.২৪ | ||||
মহাদেবপুর ২৩ | ৫৪২১ | ১০৭৭৬ | ১০৩৭৮ | ৪০.১১ | ||||
শিবালয় ৪৭ | ৪৬৯৭ | ১৩৪৬০ | ১০৭৮৪ | ৪৯.৫২ | ||||
শিমুলিয়া ৩৫ | ৬৭০০ | ১১০৫৯ | ১০৬০৪ | ৪১.৫৫ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ একডালা দুর্গ (আমডালা), কাটাসগড় দুর্গ, ঢাকীজোড়ার দুর্গ, দাসচিরা বৌদ্ধবিহার ও স্তূপ, নবরত্ন মঠ (তেওতা), তেওতা জমিদার বাড়ি, মাচাইন মসজিদ, শাহ রুস্তমের মাযার (মাচাইন), টেপড়া কালীমন্দির, শ্রীবাড়ি (টেপড়া), তেওতার নীলকুঠি।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পাকসেনারা নয়াবাড়ি গ্রামে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প আক্রমণ করলে দুই পে চার ঘণ্টা ব্যাপী যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণে পাকসেনারা পশ্চাদপসরণ করে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৬৬, মন্দির ৯০, মাযার ৫, গির্জা ১, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান: মাচাইন মসজিদ, উপজেলা পরিষদ মসজিদ, শিবালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ, তেওতা মসজিদ, ইন্তাজগঞ্জ জামে মসজিদ, রূপসা মসজিদ, আনুলিয়া মসজিদ, বোয়ালীপাড়া মসজিদ, জাফরগঞ্জ মসজিদ, টেপড়া মন্দির, দাসচিরা বৌদ্ধবিহার, নবরত্ন মঠ, শাহ রুস্তমের মাযার।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪০.৯৫%; পুরুষ ৪৬.৯৫%, মহিলা ৩৪.৫৩%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মহাদেবপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), শিবালয় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬১), উথলী পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৭৩), তেওতা একাডেমি (১৮৯১), বরংগাইল গোপালকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), নালী বগরিয়া কৃষ্ণচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, নাট্যদল ৫, নাট্যমঞ্চ ১, সিনেমা হল ১, কাব ৩৪।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬০.৯২%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১৪%, শিল্প ০.৯৯%, ব্যবসা ১৫.১৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৮২%, চাকরি ৮.১৮%, নির্মাণ ১.০৬%, ধর্মীয় সেবা ০.১৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৬% এবং অন্যান্য ৬.১১%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৩.১০%, ভূমিহীন ৪৬.৯০%। শহরে ৪৪.০৫% এবং গ্রামে ৫৩.৩৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, আলু, ডাল, চীনাবাদাম, আখ, তৈলবীজ, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিসি, চীনা, যব, মটর, ছোলা, তিল, কাউন, মিষ্টি আলু।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, নারিকেল, তাল, খেজুর।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৪১০, গবাদিপশু ও দুগ্ধ খামার ১৯০, হাঁস-মুরগি ২৭২, হ্যাচারি ৬।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৭০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৭৯ কিমি; নৌপথ ১৩.৫০ নটিক্যাল মাইল। আরিচাঘাট এ উপজেলায় অবস্থিত।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, তাল গাছের শালতি নৌকা।
শিল্প ও কলকারখানা বিদ্যুতের খুঁটি তৈরির কারখানা, মোমবাতি ও আগরবাতি তৈরির কারখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, কাঁসা ও পিতলশিল্প, স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, শাঁখাশিল্প, রেশমশিল্প, বিড়িশিল্প, বাঁশের কাজ, সেলাই কাজ, কাঠের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৯, মেলা ৪। বরংগাইল হাট, মহাদেবপুর হাট, উথলী হাট, জাফরগঞ্জ হাট, তেওতা হাট, শিবালয় বাজার, রাজগঞ্জ বাজার, টেপড়া বাজার ও নালী বাজার এবং রথমেলা ও বারুণী মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য বিদ্যুৎ লাইনের খুঁটি, বিড়ি, ধান, পিঁয়াজ, মরিচ, ডাল, তাল, তৈলবীজ, শাকসবজি, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, মাছ, বাঁশ, বেত, খেঁজুর গুড়, দুধ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৪.৬৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.৭৮%, ট্যাপ ০.৮৭%, পুকুর ০.৬৪% এবং অন্যান্য ৩.৭১%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৮.৩৬% (গ্রামে ৩৭.৬৩% ও শহরে ৬৪.১৮%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৬.৫৮% (গ্রামে ৫৭.২৪% ও শহরে ৩৩.৫৯%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫.০৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫, কমিউনিটি ক্লিনিক, চক্ষু হাসপাতাল ১।
এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা। [এম. এ রমজান]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; শিবালয় উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।