শিক্ষা কমিশন
শিক্ষা কমিশন ব্রিটিশ ভারতে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ও পুনর্গঠনের সর্বপ্রথম উদ্যোগ সূচিত হয় ১৮৫৪ সালের উডের শিক্ষা ডেসপ্যাচের মাধ্যমে। ব্রিটিশ হাউজ অব কমন্সের সিলেক্ট কমিটি কর্তৃক ভারতে শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কিত সমীক্ষার ফলই হলো উড-এর শিক্ষা প্রস্তাব। বস্ত্তত উডের ডেসপ্যাচই বাংলায় আধুনিক গণশিক্ষার আইনি ভিত্তি রচনা করে। প্রতিটি প্রদেশে শিক্ষা বিভাগ সৃষ্টি, বিশ্ববিদ্যালয় ও গ্রেডেড স্কুল প্রতিষ্ঠা, পরিদর্শন ও তদারকি ব্যবস্থার প্রবর্তন, বেসরকারি বিদ্যালয়ে অর্থ মঞ্জুরী প্রদান, শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, এবং ইংরেজি ও মাতৃভাষার মাধ্যমে বাস্তবসম্মত জ্ঞানদানের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন ছিল উডের ডেসপ্যাচের মুখ্য ফলশ্রুতি। উডের ডেসপ্যাচ প্রকাশের পরেই কেবল মাধ্যমিক শিক্ষা সামগ্রিক শিক্ষা কাঠামোর একটি স্বতন্ত্র পর্যায় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উডের ডেসপ্যাচ ছিল বাংলায় মেয়েদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রচলনের সুপারিশ সম্বলিত অন্যতম প্রথম দলিল।
ভাইসরয় লর্ড রিপন ১৮৮২ সালে উইলিয়ম হান্টারকে চেয়ারম্যান করে প্রথম ইন্ডিয়ান এডুকেশন কমিশন নিয়োগ করেন। এই কমিশন সরকারি অনুদান ব্যবস্থার মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যক্তি উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেয়া, স্কুলে অভ্যন্তরীণ ও প্রবেশিকা পরীক্ষা অনুষ্ঠান এবং মাধ্যমিক স্কুলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে। ১৯০১ সালে সিমলায় অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান কনফারেন্সের পর লর্ড কার্জন একটি সরকারি সিদ্ধান্তের আদলে ১৯০৪ সালে তাঁর শিক্ষানীতি প্রকাশ করেন। এই শিক্ষানীতিতে হাইস্কুল পর্যায়ে বিশেষত পাবলিক স্কুলে মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষালাভের সুযোগ সম্প্রসারিত হয়।
১৯১৯-১৯২১ সালের শিক্ষা সংস্কারের আওতায় পৌরসভা এলাকায় ও গ্রামাঞ্চলে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করা হয় এবং ১৯৩০ সালের বেঙ্গল প্রাইমারী এডুকেশন অ্যাক্টের মাধ্যমে বঙ্গদেশে প্রথম সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রচলনের পদক্ষেপ গৃহীত হয়। ১৯৩০ সালে প্রাদেশিক শিক্ষা বিভাগ গঠিত হয় এবং এই করে শুরু হয় শিক্ষাকে কেন্দ্রনির্ভর ও আমলা নিয়ন্ত্রিত করার প্রক্রিয়া। ফলত প্রণীত হয় ১৯৩১ সালের বেঙ্গল এডুকেশন কোডের মতো বিখ্যাত আইন এবং এ আইনবলে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার নিয়ন্ত্রক প্রশাসনিক দপ্তর ডিস্ট্রিক্ট স্কুলবোর্ড। ১৯২৭ সালের হার্টগ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ১৯৩৫ সালে শিক্ষাক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণী সংস্থা হিসেবে গঠিত হয় একটি কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা বোর্ড।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পাকিস্তানে শিক্ষাক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট দিগনির্দেশনা দানের প্রয়াস চালানো হয়। উপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়ন এবং জাতীয় ভাবাদর্শের নিরীখে প্রচলিত ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালে করাচিতে প্রথম শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় (২৭ নভেম্বর-১ ডিসেম্বর)। সম্মেলনের দ্বিতীয় মুখ্য বিবেচনার বিষয় ছিল বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি জনশক্তির উন্নয়ন। আলোচ্যসূচীর তৃতীয় প্রতিপাদ্য ছিল জাতির সৃজনী প্রতিভা ও আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিক্ষার পরিকল্পনা প্রণয়ন। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ও পুনর্গঠনের পথনির্দেশনামূলক সুপারিশ পেশ করার জন্য বিভিন্ন সময়ে পর পর শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছে।
মওলানা আকরম খাঁ শিক্ষা কমিশন (১৯৪৯) প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়ন এবং শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ও পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে সুপারিশ পেশ করার জন্য ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানে প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। এই কমিটির প্রধান ছিলেন মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ এবং এই কমিটি আকরম খাঁ কমিটি অন এডুকেশন নামে পরিচিত। কমিটি ১৯৫২ সালে রিপোর্ট পেশ করে।
আতাউর রহমান খান শিক্ষা কমিশন (১৯৫৭) পূর্ব পাকিস্তান সরকার প্রদেশে শিক্ষার সার্বিক সংস্কার সুপারিশের জন্য ১৯৫৭ সালের জানুয়ারি মাসে আতাউর রহমান খানকে চেয়ারম্যান করে একটি শিক্ষা কমিশন নিয়োগ করে। এই কমিশন প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা স্তরে কতিপয় সংস্কারের সুপারিশসহ ১৯৫৭ সালে রিপোর্ট পেশ করে।
এই কমিশন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে আনার সুপারিশ করে। কমিশন পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা এবং ছয় বছর মেয়াদি মাধ্যমিক শিক্ষা চালুর প্রস্তাবসহ তিন বছর মেয়াদি কোর্স সম্বলিত জুনিয়র হাইস্কুল (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী) এবং তিন বছর মেয়াদি কোর্স সম্বলিত সিনিয়র হাইস্কুল (নবম থেকে একাদশ শ্রেণী) অথবা পূর্ণ ছয় বছর মেয়াদি কোর্সসহ হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে। কমিশন সুপারিশ করে যে, প্রদেশের সকল এলাকায় সমতার ভিত্তিতে মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে, প্রতি ২৫,০০০ জনসংখ্যার জন্য একটি জুনিয়র হাইস্কুল এবং প্রতি ৫০,০০০ জনসংখ্যার জন্য একটি সিনিয়র হাইস্কুল। রিপোর্টে স্কুলগুলোতে বাধ্যতামূলক সরকারি অনুদান প্রদান এবং সমহারে ছাত্রবেতন নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়। কমিশন মাধ্যমিক স্তরে মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালু করা এবং এই ভাষাকে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে। মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণে প্রণোদনা সৃষ্টির লক্ষ্যে মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রীদের অবৈতনিক শিক্ষাদানের সুপারিশ করা হয়। কমিশন ইন্টারমিডিয়েট কোর্স বিলোপ করে তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি কোর্স চালু করার সুপারিশ করে।
কমিশন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যসূচি সম্পর্কেও সুপারিশ করে। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক স্তরে গণিত বিষয়ে দশমিক পদ্ধতির প্রবর্তন, জুনিয়র হাইস্কুলে ভাষা, সমাজ পাঠ, সাধারণ বিজ্ঞান, গণিত, ধর্ম বা নীতিশাস্ত্র, চিত্রকলা, সঙ্গীত ও বাদ্য, হস্তশিল্প, ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যশিক্ষা বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণ। সিনিয়র হাইস্কুলের সিলেবাসে আবশ্যিক তত্ত্ববিদ্যা, বিজ্ঞান, কারিগরী বিষয়, বাণিজ্য, কৃষি, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ও ইসলামী শিক্ষা ইত্যাদি বহুমুখী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করারও সুপারিশ করা হয়।
জাতীয় শিক্ষা বিষয়ক কমিশন (১৯৫৮) পশ্চিম পাকিস্তানের শিক্ষাসচিব এস এম শরীফকে চেয়ারম্যান এবং দশজন শিক্ষাবিদকে সদস্য করে পাকিস্তান সরকার ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর এই কমিশন গঠন করে। চেয়ারম্যানের নামানুসারে এই কমিশন শরীফ কমিশন নামেও পরিচিত। ১৯৫৯ সালের জানুয়ারি মাসে কমিশনের কার্যক্রম উদ্বোধনকালে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান কমিশনের ম্যান্ডেট নির্ধারণ করে দেন যেন এমন একটি জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা বিকাশ লাভ করে যাতে স্বাধীন পাকিস্তানের অন্তর্জাগতিক, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ আরো স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয় এবং এই শিক্ষা ব্যবস্থা কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নয়নে সহায়তা করে জাতির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পুরণ করতে পারে।
কমিশন ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর মাসে রিপোর্ট পেশ করে। এই রিপোর্টে শিক্ষাকে একটি উৎপাদনমুখী কার্যক্রম এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে জাতীয় বিনিয়োগ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে নিম্নোক্ত সুপারিশ পেশ করা হয়: (ক) আবাসিক মাধ্যমিক স্কুল গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উৎসাহ দান করতে হবে; (খ) মাধ্যমিক স্কুল কারিকুলামে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রবণতার কতিপয় ঐচ্ছিক বিষয়সহ গুরুত্বপূর্ণ আবশ্যিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; (গ) ইন্টারমিডিয়েট কোর্স পরিচালনার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের উপর ন্যস্ত করতে হবে; (ঘ) ডিগ্রি কোর্স তিন বছর মেয়াদি করতে হবে; (ঙ) প্রাথমিক স্তর থেকে শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য সমন্বিত বৃত্তি প্রদান কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে; (চ) নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দানের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশ্বের এ অংশে শিক্ষার সম্প্রসারণ অনেকাংশে ব্যাক্তি উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার ফল এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা নেহাতই কম বিধায় কমিশন সরকার ও জনগণের প্রতি আহবান জানিয়েছেন যেন তারা এ যাবতকাল যে দায়িত্বভার বহন করে এসেছেন তার চেয়েও বেশি দায়ভার গ্রহণ করেন। কাজেই কমিশন প্রস্তাব দেয় যে, যেখানে সরকার ও কম্যুনিটিকে সমভাবে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করতে হবে, সেখানে মাধ্যমিক শিক্ষায় ব্যয়ের তিন-পঞ্চমাংশ সংগ্রহ করতে হবে ছাত্রবেতন থেকে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কম্যুনিটিকে আগের চেয়ে শিক্ষাব্যয়ের আরো বেশি অংশ বহন করতে হবে।
শরীফ কমিশনের রিপোর্ট ছিল শিক্ষার বহুতর বিষয় সম্বলিত একটি পূর্ণাঙ্গ বিবরণ। কমিশন অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, নিরক্ষরতা দূরীকরণ এবং জাতীয় ভাষার উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছে। কমিশন প্রশাসনিক কাঠামোতেও কতিপয় মৌলিক পরিবর্তনের সুপারিশ করে, যেমন প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনার বিকেন্দ্রীকরণ, পরীক্ষা পদ্ধতির পুনর্বিন্যাস এবং কারিগরী শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন ব্যবস্থাপনা কাঠামো উদ্ভাবন। মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এই রিপোর্টের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে এক কথায় বলা যায়: ‘(ক) একজন ভালো কর্মী, (খ) একজন ভালো নাগরিক, (গ) একজন ভালো ব্যক্তি এবং (ঘ) একজন ভালো দেশপ্রেমিক’ গড়ে তোলা। কমিশন একটি নতুন রাষ্ট্রের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্ধারণ করলেও বাস্তবায়ন পরিকল্পনার অভাবের কারণে এ নীতিমালায় ঐসব উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য পুরণে সুস্পষ্ট কর্মকৌশল নির্দেশে ব্যর্থ হয়েছে।
পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ শরীফ কমিশনের রিপোর্টকে সরাসরি প্রত্যাখান করে। তারা রিপোর্টের গোটা বক্তব্যকে গণবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল এবং বাঙালিদের জাতীয় স্বার্থবিরোধী বলে চিহ্নিত করে। ছাত্রদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার এবং রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার অধিকারের অস্বীকৃতি, ভর্তি ও প্রমোশনের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি শর্ত আরোপ এবং পাবলিক পরীক্ষার মান উন্নীত করে উচ্চতর শিক্ষালাভের সুযোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, তিন বছর মেয়াদী ডিগ্রি কোর্স, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ইংরেজি ভাষা কোর্সের গুরুভার, নতুন প্রস্তাবিত সিলেবাসে অধিকতর গুরুভার কোর্স আরোপ, স্কুল ও কলেজে ছাত্রবেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব, প্রভৃতি পদক্ষেপ ছাত্র সমাজকে শরীফ কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রবুদ্ধ করে। ১৯৬৪ সালে যখন ছাত্র আন্দোলন প্রকট রূপ নেয় তখন সরকার একটি সমঝোতায় এসে তাৎক্ষণিকভাবে কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বন্ধ করার ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়।
ছাত্র সমস্যা ও ছাত্রকল্যাণ বিষয়ক কমিশন (১৯৬৪) গণমুখী শিক্ষানীতির অনুকূলে ছাত্রসমাজ কর্তৃক শরীফ কমিশন রিপোর্ট প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর পাকিস্তান সরকার ১৯৬৪ সালে বিচারপতি হামুদুর রহমানকে প্রধান করে ছাত্র সমস্যা ও ছাত্র কল্যাণ বিষয়ে একটি নতুন কমিশন নিয়োগ করে। কমিশন এর রিপোর্টে দেশের এলিট শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করে যা সমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কমিশন মতপ্রকাশ করে যে, ‘উচ্চমান ও নিম্নমানের স্কুলের ধারণা একদিকে যেমন আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তেমনি সঙ্গতিপূর্ণ নয় ইসলামের সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতির সঙ্গে যা আমাদের সংবিধানের মুখবন্ধে রাষ্ট্রের ঘোষিত নীতি হিসেবে বিধৃত হয়েছে।’
এয়ার মার্শাল নূর খান কমিশন (১৯৬৯) জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের উপায় ও করণীয় নির্ধারণের জন্য এয়ার মার্শাল নূর খানকে প্রধান করে ১৯৬৯ সালে একটি কমিটি নিয়োগ করে। একটি বিদ্যমান শিক্ষানীতি সত্ত্বেও অপর একটি শিক্ষানীতি প্রণয়নের পেছনে এই যুক্তি ছিল যে, দেশে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয় সংহতি বিকাশে ব্যর্থ হয়েছে বিশেষত পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবের কারণে, এবং বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয় উন্নয়নে যথার্থ ভূমিকা পালন করে নি। শিক্ষিত যুবকদের একটা বিরাট অংশ তখন ছিল কর্মহীন এবং একাডেমিক মান ছিল নিম্নস্তরে। প্রণীত শিক্ষানীতিতে ইসলামের অনুশাসনের উপর ভিত্তিশীল সমন্বিত সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের বিকাশ কল্পনা করা হয়েছিল। এর মূল্য লক্ষ্য ছিল একটি শিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলা এবং বৃত্তিমূলক ও কারিগরী মানবসম্পদের উন্নয়ন। এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদানের লক্ষ্যে যে সুপারিশ করা হয় তা ছিল মাদ্রাসা শিক্ষাকে প্রচলিত স্কুল শিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে একীভূত করা এবং স্কুলের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতির ভাবাদর্শগত চাহিদার সঙ্গে সমন্বিত করা, নিম্ন ও মধ্য প্রাইমারী স্কুলগুলোকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করা, বয়স্ক শিক্ষার একটি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ, শিক্ষা প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন প্রতিষ্ঠা। এই কমিটি ইংরেজির পরিবর্তে উর্দু ও বাংলাকে ১৯৭৫ সাল নাগাদ পাকিস্তানে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালু করারও সুপারিশ করে।
জাতীয় শিক্ষা কমিশন (১৯৭২) বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-ই-খুদাকে চেয়ারম্যান করে ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই গঠিত হয় বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’। ১৯৭২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কমিশনের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চেয়ারম্যানের নামানুসারে এই কমিশন কুদরত-ই-খুদা কমিশন নামেও পরিচিতি পায়। কমিশন প্রশ্নমালার আকারে শিক্ষিত এলিট শ্রেণীর লোকদের নিকট থেকে মতামত গ্রহণ করে, এবং ঐসব মতামত সতর্কতার সঙ্গে যাচাই বাছাই করে প্রণীত রিপোর্টে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসের সুপারিশ করে। কমিশন ১৯৭৪ সালের ৩০ মে সরকারের নিকট রিপোর্ট পেশ করে।
দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা এবং সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের উপর ভিত্তি করে কমিশন তার রিপোর্ট প্রণয়ন করে। এই রিপোর্ট প্রণয়নে সমসাময়িক বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতও বিবেচনায় আনা হয়। কমিশনের রিপোর্টে শিক্ষার সকল স্তরে সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা চালু এবং ভবিষ্যত কর্ম-সংশ্লিষ্ট কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এতে শিক্ষার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কতিপয় বড় ধরণের পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়।
কমিশনের মতে প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ হবে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত মোট আট বছর এবং মাধ্যমিক শিক্ষার মেয়াদ হবে নবম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মোট চার বছর। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি চার বছর মেয়াদী সম্মিলিত ডিগ্রি কোর্স এবং এক বছরের মাস্টার্স কোর্স চালু হবে। কমিশন প্রাথমিক স্তরে সর্বজনীন ও অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তন, প্রচলিত অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা (১ম থেকে ৫ম শ্রেণী) ১৯৮০ সালের মধ্যে বাধ্যতামূলক করণ এবং ১৯৮৩ সাল নাগাদ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করে। প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়া ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় এনে নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করে পনের বছর বয়স পর্যন্ত তাদের শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়।
কমিশন রিপোর্টে মাধ্যমিক স্তরে সমন্বিত বহুমুখী কোর্স চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা হবে যুগপৎ তিন বছর মেয়াদী বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং চার বছর মেয়াদী সাধারণ শিক্ষা। মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা হবে অধিকাংশ ছাত্রের জন্য প্রান্তিক বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং স্বল্পসংখ্যক ছাত্রের জন্য উচ্চশিক্ষার প্রস্ততিমূলক স্তর। প্রান্তিক বৃত্তিমূলক শিক্ষা মোটামুটি একাদশ শ্রেণী পর্যন্ত এবং সাধারণ শিক্ষা দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এরূপে নবম শ্রেণী থেকে পাঠক্রম দুটি ভাগে বিভক্ত হবে: (ক) বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও (খ) সাধারণ শিক্ষা।
কারিকুলাম, সিলেবাস ও পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে কমিশন প্রাথমিক স্তরের জন্য সমরূপ কারিকুলাম চালুর সুপারিশ করেছে। কমিশন প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য এডুকেশন্যাল রিসার্চ বোর্ড প্রতিষ্ঠার কথাও বলেছে।
কমিশন উন্নতমানের মূল্যায়ন পদ্ধতির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার সকল স্তরে ছাত্রদের পড়াশুনার মান মূল্যায়নের ক্ষেত্রে লেটার গ্রেডিং পদ্ধতি প্রয়োগের সুপারিশ করেছে। সাধারণ ও বৃত্তিমূলক উভয় কোর্সের ছাত্ররা দশম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়নের পর পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে এবং সার্টিফিকেট পাবে। দশম শ্রেণীর কোর্স সমাপ্তির পর সাধারণ কোর্সের ছাত্ররা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য নির্ধারিত বহুমুখী সাধারণ কোর্সের মধ্যে একটি কোর্স নির্বাচন করবে, এবং দ্বাদশ শ্রেণীর কোর্স সমাপ্ত করে তারা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবে। দ্বাদশ শ্রেণীর কোর্স সমাপ্তি শেষে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং উত্তীর্ণ ছাত্ররা সার্টিফিকেট লাভ করবে। বৃত্তিমূলক কোর্সের ছাত্ররা তাদের নবম ও দশম শ্রেণীতে পঠিত কোর্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একাদশ শ্রেণীতে এক বছর বিশেষ প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর তাদের বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্পূর্ণ করবে। একাদশ শ্রেণীতে প্রশিক্ষণের পর তারা পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে এবং সার্টিফিকেট পাবে। বৃত্তিমূলক কোর্সের ছাত্ররা দশম শ্রেণীর বৃত্তিমূলক কোর্স সমাপ্তির পর দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে চাইলে তাদের জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামে যোগদানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। কোনো ছাত্র দশম বা একাদশ শ্রেণীর কোর্স সমাপ্ত করে সংশ্লিষ্ট বৃত্তিমূলক বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হলে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবে। কমিশন দৃঢ় মত প্রকাশ করেছে যে, মেয়েদের শিক্ষা এমন হতে হবে যা তাদের গার্হস্থ্য জীবনে সহায়ক হয়, এবং তাদের পাঠক্রমের মধ্যে অবশ্যই শিশুপালন, রুগীর সেবা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, খাদ্য ও পুষ্টি প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কমিশন আরো সুপারিশ করে যে, মেয়েদের ‘তাদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী পেশায়’ নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে, যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, নার্সিং ও টাইপিং।
জাতীয় কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়ন কমিটি (১৯৭৬) কুদরত-ই-খুদা কমিশনের সুপারিশের (১৯৭৪) আলোকে ১৯৭৫ সালে সরকার জাতীয় কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে। প্রফেসর শামসুল হকের নেতৃত্বে ৫১ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সমন্বয়ে গঠিত এই জাতীয় কমিটি ১৯৭৬ সালের মার্চ মাসে এর কার্যক্রম শুরু করে। এই কমিটি জাতীয় কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি বিশদ কার্যপ্রণালী ও কর্মকৌশল গড়ে তোলে। লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে কমিটি দশটি সাব-কমিটি ও ২৭টি সাবজেক্ট কমিটি গঠন করে। কমিটি ১৯৭৬, ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালে সাত খন্ডে এর সুপারিশ সরকারের নিকট পেশ করে। কমিটি সুনির্দিষ্টভাবে একমুখী ও সমরূপ মাধ্যমিক শিক্ষা পদ্ধতির প্রবর্তন এবং ১৯৮০ সালের স্কুল সেশন থেকে নবম শ্রেণী স্তরে এই পদ্ধতি চালু করার সুপারিশ করে।
জাতীয় শিক্ষা উপদেষ্টা কমিটি (১৯৭৮) ১৯৭৮ সালে সরকার কুদরত-ই-খুদা কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এবং শিক্ষার সমস্যাবলি নতুনভাবে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে একটি উপদেষ্টা কমিটি নিয়োগ দেয়। এই কমিটি ১৯৭৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তীকালীন শিক্ষানীতি সুপারিশ শিরোনামে একটি রিপোর্ট পেশ করে। এই রিপোর্টে দেশে শিক্ষিতের হার বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় যাতে জনগণ দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। রিপোর্টে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রচলিত কাঠামোকে তিনটি উপ-পর্যায়ে ভাগ করা হয়, যথা নিম্ন মাধ্যমিক (৩ বছর), মাধ্যমিক (২ বছর) এবং উচ্চ মাধ্যমিক (২ বছর)। তদুপরি রিপোর্টে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নির্ধারণ করা হয়: (ক) মাধ্যমিক শিক্ষার সকল স্তরে টার্মিনাল পরীক্ষা জেলা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিচালিত হবে; (খ) বৃত্তিমূলক, কারিগরী, কৃষি ও চিকিৎসা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে; (গ) নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরে যেকোন একটি কারিগরী বিষয়ে দক্ষতা অর্জন ও বৃদ্ধির সুযোগ থাকবে। মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পর্কে অন্তর্বর্তীকালীন শিক্ষানীতিতে সুস্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে যে, সাধারণ শিক্ষাস্তরের সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষার স্তরের সমানুপাতের বিষয়টি এমনভাবে নিশ্চিত করা প্রয়োজন যাতে মাদ্রাসার ‘দাখিল’ স্তর সাধারণ মাধ্যমিক স্তরের এবং ‘আলিম’ স্তর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সমপর্যায়ভুক্ত হয়।
মজিদ খান শিক্ষা কমিশন (১৯৮৩) ১৯৮৩ সালে গঠিত মজিদ খান শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট ব্যাপক প্রচারলাভ করে নি এবং এই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের কোনো আনুষ্ঠানিক উদ্যোগও নেয়া হয় নি।
বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষা কমিশন (১৯৮৭) বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর মফিজউদ্দীন আহমদকে প্রধান করে একটি শিক্ষা কমিশন নিয়োগ করে। এই কমিশনকে দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার, পুনর্বিন্যাস ও উন্নয়নের উপায় সুপারিশের দায়িত্ব দেয়া হয়। কমিশনের চেয়ারম্যানের নামানুসারে এটি মফিজউদ্দীন শিক্ষা কমিশন নামেও পরিচিতি লাভ করে। এই কমিশন সেমিনার, আলোচনাসভা ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, পেশাজীবী শ্রেণী, রাজনীতিক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে পরামর্শ ও প্রস্তাব গ্রহণ করে। কমিশনের দুই সদস্য বিশিষ্ট দুটি দল উন্নততর শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার লক্ষ্যে থাইল্যান্ড, চীন, ফিলিপাইন ও জাপান সফর করেন। কমিশন ১৯৮৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারের নিকট রিপোর্ট পেশ করে।
কমিশন দেশে উচ্চশিক্ষার অগ্রগতি ও উৎকর্ষের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট দিগনির্দেশনা সম্বলিত সুপারিশ পেশ করে। রিপোর্টে তিন বছর মেয়াদী ডিগ্রি কোর্স এবং দুই বছরের মাস্টার্স কোর্স প্রবর্তন এবং ডিগ্রি কলেজগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়। কমিশন প্রস্তাব দেয় যে, ডিগ্রি পর্যায়ের ছাত্ররা তাদের পঠনীয় হিসেবে তিনটি বিষয় নির্বাচন করবে এবং তৃতীয় বর্ষে তার মধ্যে যেকোন একটি বিষয়ে কারিগরী শিক্ষা গ্রহণ করবে। কোনো ছাত্র ফাইনাল পরীক্ষায় এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে যে বিষয়ে ৭০% এর অধিক নম্বর পাবে তাকে ওই বিষয়ে অনার্স ডিগ্রি প্রদান করা হবে। কমিশনের অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে ছিল: (ক) প্রতি বৃহত্তর জেলায়, বিভাগীয় শহরে এবং রাজধানীতে একটি করে কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণ, (খ) দুটি অধিভুক্তি দাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং প্রথম ডিগ্রি প্রদানকারী সকল সাধারণ কলেজকে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনয়ন, (গ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের জন্য নীতি ও বিধিমালা প্রণয়ন এবং কার্যকরণ, (ঘ) সরকার কর্তৃক বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের পূর্ণ বেতন ও ভাতাদি প্রদান, (ঙ) বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের ক্ষেত্রে গবেষণা পরিচালনার জন্য সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার স্থাপন ও গবেষণা কেন্দ্রের উন্নয়ন, মাস্টার্স কোর্সে গবেষণার সুযোগ, পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নের জন্য ছাত্রদের ফেলোশিপ প্রদান, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ও পিএইচডি পরবর্তী গবেষণার জন্য কোনো বিশেষ বিভাগকে ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ হিসেবে গড়ে তোলা, (চ) বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপয়মেন্ট ব্যুরো স্থাপন করে ছাত্রদের জন্য চাকরি লাভের সুযোগ সৃষ্টি।
শামসুল হক শিক্ষা কমিশন (১৯৯৭) বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালের ১৪ জানুয়ারি জারীকৃত এক আদেশবলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর এম শামসুল হককে চেয়ারম্যান করে ৫৬ সদস্যের একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে। কমিশনকে দায়িত্ব দেয়া হয় একটি বাস্তবধর্মী, গণমুখী ও গতিশীল শিক্ষানীতি প্রণয়নের। কমিশন দেশের জন্য উপযোগী একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা চালায়। কমিশন ১৯৯৭ সালে এর রিপোর্ট পেশ করে। কমিশন কর্তৃক প্রণীত শিক্ষানীতির লক্ষ্য ছিল: (ক) ছাত্রদের ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে নিজেদের মধ্যে নৈতিক, মানবিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়তা দান, (খ) মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ছাত্রদের অনুপ্রাণিত করা এবং তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা, দেশপ্রেম ও সুনাগরিকের গুণাবলীর বিকাশ, (গ) দেশে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন সাধনের লক্ষ্যে শিক্ষাকে বাস্তবমুখী, উৎপাদনশীল ও সৃজনশীল করা, (ঘ) ছাত্রদের দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা, (ঙ) তাদের মধ্যে বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ, অসাম্প্রদায়িক মনোভাব, পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতার মনোভাব সৃষ্টি এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে গড়ে তোলা, (চ) গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশের লক্ষ্যে তাদের মধ্যে পরস্পরের মতামতের প্রতি সহনশীলতার মনোভাব সৃষ্টি, এবং (ছ) তাদের মধ্যে জীবন সম্পর্কে বাস্তবমুখী ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে তোলা। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে মেধা ও প্রবণতার ভিত্তিতে শিক্ষাক্ষেত্রে সমঅধিকার নিশ্চিত করার প্রতি কমিশন বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে।
কমিশনের রিপোর্টে শিক্ষার তিনটি পর্যায়ের সুপারিশ করা হয়েছে, প্রাথমিক স্তর, মাধ্যমিক স্তর ও উচ্চশিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষার পরিধি পাঁচ বছরের পরিবর্তে আট বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এম.এ বারী শিক্ষা কমিশন (২০০১) শিক্ষাক্ষেত্রে আশু বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কার চিহ্নিত করার লক্ষ্যে ২০০১ সালে ড. এম এ বারীর নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ২০০২ সালে রিপোর্ট পেশ করে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে কতিপয় সংস্কার ও পরিবর্তনের সুপারিশ করে। এসব সুপারিশ ২০০৩ সালে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বে গঠিত শিক্ষা কমিশন কর্তৃক বিবেচনায় আনা হয়।
বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন (২০০৩) শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের অন্যতম প্রধান উদ্যোগ ছিল ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন। এই কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়া। চেয়ারম্যানের নামানুসারে এই কমিশন মনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশন নামেও পরিচিত। কমিশন ২০০৪ সালের মার্চ মাসে সরকারের নিকট রিপোর্ট পেশ করে।
এই শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট তিন ভাগে বিভক্ত ছিল: সাধারণ শিক্ষা, পেশাগত শিক্ষা, বিশেষায়িত শিক্ষা। কমিশন শিক্ষার সার্বিক ক্ষেত্রে মোট ৮৮০টি সুপারিশ প্রণয়ন করে। কমিশন ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়, লিঙ্গ, আর্থিক অবস্থা ও ভৌগোলিক অবস্থানের পার্থক্য নির্বিশেষে সকলের জন্য শিক্ষালাভের সমান সুযোগ সৃষ্টির এবং অনুন্নত এলাকায় সরকারি অর্থায়নে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার অধিকতর সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করে। কমিশন সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, একমুখী মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত হ্রাস, শিক্ষকদের যোগ্যতা আপগ্রেড করা, কারিকুলাম ও শিক্ষাদান পদ্ধতির সংস্কার এবং মাধ্যমিক স্তরে মূল্যায়ন ও পরীক্ষা পদ্ধতির উৎকর্ষের সুপারিশ করে। কমিশন এর রিপোর্টে একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র কমিশনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নির্বাচনের সুপারিশ করে। শিক্ষকদের বেতন স্কেল, পদোন্নতির মানদন্ড এবং চাকরির শর্তাবলী এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে সমাজে শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। কমিশন মত প্রকাশ করে যে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির সুফল কাজে লাগাবার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে একটি টেলিভিশন চ্যানেল নিয়োজিত করা যায়। এ ছাড়াও প্রাক-প্রাথমিক স্তর ও অবারিত শিক্ষার জন্য টেলিভিশনের মাধ্যমে দূরশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা যায়। মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমন পদ্ধতিতে গড়ে তুলতে হবে যাতে ঝরে পড়া ছাত্রছাত্রীরাও জীবিকা অর্জনের কোনোও না কোনো পথ বেছে নিতে পারে। মানবসম্পদের যথার্থ ব্যবহারের এমন জাতীয় নীতি রূপদান করা প্রয়োজন যাতে শিক্ষিত বেকারত্বের সৃষ্টি না হয়।
কমিশন সুপারিশ করে যে, সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ভাষা সম্পর্কীয় একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ন প্রয়োজন। অধিকন্তু আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞানের আলোকে বিজ্ঞান বিষয়ক একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ন এবং যথাশীঘ্র সম্ভব বাস্তবায়ন করা উচিত। কমিশন সরকারি অর্থে কৃষি, প্রযুক্তি, চিকিৎসা প্রভৃতি বিষয়ক একমুখী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকে নিরুৎসাহিত করেছে, কারণ এ ধরণের প্রতিষ্ঠান একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং অন্যদিকে ব্যয়বহুল। উচ্চশিক্ষা তুলনামূলকভাবে ব্যয়সাধ্য বিধায় ব্যাক্তি উদ্যোগে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাকে উৎসাহিত করা যায়। তবে ব্যাক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকৌশল প্রয়োগ করতে হবে। কমিশন বিশেষভাবে মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রশাসনের এমন বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ করেছে যাতে কোনো ব্যাক্তির এক্তিয়ারে কর্তৃত্ব কেন্দ্রীভূত না হয়, প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যাক্তি বা এজেন্সির মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের সৃষ্টি না হয়; যাতে আরো দ্রুত এবং স্থানীয় পর্যায়েই সমস্যার সমাধান করা যায়। আরও সুপারিশ করা হয় যে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষার কোনো কোনো বিষয়ে ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে; প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করতে হবে। পেশাগত শিক্ষার (যেমন কৃষি, প্রযুক্তি, চিকিৎসা) ক্ষেত্রে গবেষণার যথাযথ সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
কমিশন দেশে একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে যার কার্যক্রম হবে: শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ; শিক্ষাক্ষেত্রে সমস্যা শনাক্তকরণ এবং নিরবচ্ছিন্ন গবেষণার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের সুপারিশ; শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন চিন্তা ও ধারণার উদ্ভাবন এবং তা বাস্তবায়ন।
কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিশন (২০০৯) সরকার ২০০০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিকে সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে জাতীয় অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করে। এই কমিটি ১৯৭৪ সালের কুদরাত-ই-খুদা কমিশন রিপোর্ট এবং ১৯৯৭ সালের শামসুল হক শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের আলোকে একটি নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯-এর খসড়া সরকারের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করা হয় ২০০৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর।
কমিটির সুপারিশের মুখ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে: স্নাতকপূর্ব শিক্ষার প্রচলিত তিনটি পর্যায়কে দু’টি পর্যায়ে রূপান্তর, শিক্ষার সকল পর্যায়ে কতিপয় আবশ্যিক বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণ, শিক্ষাকে আরও প্রয়োজন-নির্ভর করা, এবং একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন। নীতিপত্রে সুপারিশের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে: বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ আট বছর পর্যন্ত বাড়ানো, অষ্টম শ্রেণী সমাপনের পর প্রাথমিক স্তরের ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠান, এবং পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মাধ্যমিক স্কুল বৃত্তি প্রদান। নতুন শিক্ষানীতিতে আরও সুপারিশ করা হয় যে, মাধ্যমিক স্তরের মেয়াদ হবে চার শিক্ষা বছর, নবম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী, এবং সরকারি বৃত্তি পরীক্ষা গৃহীত হবে দশম শ্রেণী সমাপ্তির পর। দ্বাদশ শ্রেণী সমাপনের পর মাধ্যমিক স্তরের ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কারিকুলামের বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলা ভাষা, নীতি শিক্ষা, বাংলাদেশ স্টাডিজ, গণিত, প্রাকৃতিক পরিবেশ, সমাজ পাঠ, তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞানসহ কতিপয় মৌলিক বিষয় আবশ্যিক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে। এই শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কতক ধরনের কারিগরী ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রবর্তনের কথা বলা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ আবশ্যিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করে মাদ্রাসা শিক্ষাকে পুনর্বিন্যাস করার কথাও বলা হয়। কমিটি বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য একটি কমিশন গঠনেরও সুপারিশ করে। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]