শাহাবুদ্দীন, খাজা
শাহাবুদ্দীন, খাজা (১৮৯৮-১৯৭৭) রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিক। ঢাকার নওয়াব পরিবারে তিনি ১৮৯৮ সালের ৩১ মে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা খাজা নিজামউদ্দীন জমিদার ও ঢাকা পৌরসভার কমিশনার ছিলেন। তার মাতামহ ছিলেন নওয়াব স্যার খাজা আহসানুল্লাহ। তিনি গৃহশিক্ষকের নিকট আরবি, ফারসি, উর্দু ও ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি কুরআন শরীফ মুখস্তও করেছিলেন। ১৯১৫ সালে খাজা শাহাবুদ্দীন নওয়াবজাদা খাজা আতিকুল্লাহর কন্যা ফারহাত বানুকে বিবাহ করেন।
খাজা শাহাবুদ্দীন নওয়াব সলিমুল্লাহর পুত্র ও উত্তরাধিকারী নওয়াব হাবিবুল্লাহর উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। তিনি ১৯১৮ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ঢাকা পৌরসভার কমিশনার ছিলেন। তিনি ১৯২১ সালে ঢাকা জেলা বোর্ডের সদস্য হন এবং ১৯২৩ থেকে ১৯২৪ পর্যন্ত এর চেয়ারম্যান ছিলেন। এ সময়ে তিনি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কটি নির্মাণ করেন। তিনি ঢাকা জেলা মুসলিম লীগের সভাপতি (১৯২৮-১৯৪৪), বাংলার গভর্নরের নির্বাহি কাউন্সিলের সদস্য (১৯৩৬) এবং ১৯৩০ থেকে ১৯৩৮ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ছিলেন। খাজা শাহাবুদ্দীন ১৯৩৭ সালে নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য এবং তার স্ত্রী ফারহাত বানু ধামরাই এলাকা থেকে মুসলিম মহিলা আসনে নির্বাচিত হন।
এ.কে ফজলুল হক যখন বাংলার মন্ত্রিসভা গঠন করেন, তখন খাজা শাহাবুদ্দীন সরকারি দলের চীপ হুইপ হন। তিনি ১৯৩৭ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি খাজা নাজিমউদ্দীনের মুসলিম লীগের মন্ত্রিসভায় বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্পমন্ত্রী ছিলেন (১৯৪৩-১৯৪৫)। খাজা শাহাবুদ্দীন পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেমবির চীপ হুইপ ছিলেন। তিনি ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র, তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব লাভ করেন। ১৯৫১ সালে তিনি উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের গভর্নর পদে নিযুক্ত হন।
খাজা শাহাবুদ্দীন ১৯৫৪ সালে ইয়েমেনের অতিরিক্ত দায়িত্বসহ সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি ১৯৫৮ সালে সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত হন। ||
এ সময় মিশরের দায়িত্বও তার ওপর ন্যস্ত ছিল। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি একই সাথে নাইজেরিয়ায় পাকিস্তানের হাই কমিশনার এবং ক্যামেরুন, সেনেগাল, টোগো ও সিয়েরালিয়োনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে কাশ্মীর সম্পর্কে পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন দেশে প্রেরিত প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। এ বছরে কাবুলে অনুষ্ঠিত মানবাধিকার সম্পর্কিত সেমিনারে পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলেরও নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি মোহাম্মদ আইয়ুব খানের অধীনে তথ্য ও বেতার মন্ত্রী ছিলেন। এ সময়ে বেতার ও টেলিভিশনে রবীন্দ্র সংগীতের প্রচার বন্ধ করে দেয়ায় তিনি বাঙালিদের দ্বারা ভীষণভাবে সমালোচিত হন। ১৯৭৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি করাচিতে তাঁর মৃত্যু হয় এবং সেখানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। [মোহাম্মদ আলমগীর]