রব, মেজর জেনারেল এম.এ
রব, মেজর জেনারেল এম.এ (১৯১৯-১৯৭৫) সামরিক কর্মকর্তা, রাজনীতিক। জন্ম ১৯১৯ সালের ১ জানুয়ারি হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানার খাগউড়া গ্রামে। পিতার নাম মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন এবং মাতা রশিদা বেগম। ১৯৩৫ সালে তিনি হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা এবং ১৯৩৭ সালে সিলেট এম.সি কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। একই কলেজ থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪২ সালে তিনি আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৪৪ সালে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
এম.এ রব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বার্মা ফ্রন্টে এবং পরে মালয়, সুমাত্রা, জাভা ও কাশ্মীর সীমান্তে যুদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তিনি রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট নিযুক্ত হন। এরপর ক্রমান্বয়ে স্টাফ মেজর, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে এম্বাকেশন কমান্ডার পদে কর্মরত থাকাকালে ১৯৭০ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
এম.এ রব ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সিলেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। প্রাথমিক প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়লে তিনি এপ্রিল মাসে ভারতে আশ্রয় নেন। মুজিবনগর সরকার তাঁকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ ও সেকেন্ড-ইন-কমান্ড নিয়োগ করে। স্বাধীনতার পর তাঁকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়। ১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসিকতা ও কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীরউত্তম’ খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৭৩ সালে তিনি সিলেট থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর এম.এ রব মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনে নেতৃত্ব দেন। তিনি এর প্রথম অবৈতনিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০০ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন তাঁর নামে ঢাকার একটি সড়কের নামকরণ করেছে বীরউত্তম এম এ রব সড়ক।
[আবু মো. দেলোয়ার হোসেন]