মুকুল, এম.আর আখতার
'মুকুল, 'এম আর আখতার (১৯২৯-২০০৪) সাংবাদিক, লেখক, সম্পাদক এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত সাড়া জাগানো অনুষ্ঠান ‘চরমপত্র’-এর কথক। জন্ম ১৯২৯ সালের ৯ আগস্ট বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ের অন্তর্গত চিংগাসপুর গ্রামে। পুরো নাম মুস্তাফা রওশন আখতার মুকুল। পিতা বিশিষ্ট সাহিত্যিক সা’দত আলি আখন্দ, মাতা রাবেয়া খাতুন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন এবং এ কারণে তাঁকে একাধিকবার জেল খাটতে হয়েছে। ১৯৪৮-৪৯ সালে জেল থেকেই স্নাতক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৪১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। জীবিকার জন্য তিনি বীমা কোম্পানি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন বিভাগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি সময় কেটেছে সাংবাদিকতার পেশায়। বিভিন্ন সময়ে তিনি দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইত্তেফাক ও পূর্বদেশ পত্রিকায় কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড প্রেস অফ পাকিস্তান (ইউপিআই)-এর ঢাকা ব্যুরো প্রধান ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় রণাঙ্গন পরিদর্শন শেষে তাঁর রচিত এবং স্বকণ্ঠে প্রচারিত ‘চরমপত্র’ অনুষ্ঠানটি ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমে তাঁকে বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক নিয়োগ করা হয়। ১৯৭২ সালে তিনি লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রেস মিনিস্টার নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এ চাকরি হারিয়ে অনেক বছর তিনি লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন। এ সময় জীবিকার তাগিদে তাঁকে এমনকি পোশাকপ্রস্ত্ততকারক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক হিসেবেও কাজ করতে হয়েছে। ১৯৮৭ সালে দেশে ফিরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র সম্পাদনার দ্বিতীয় পর্যায়ে কিছুদিন কাজ করেছেন।পরে তিনি ঢাকায় সাগর পাবলিশার্স নামে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
এ সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁর রচিত ৬০টিরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: পল্লী এক্সপ্রেস (অনুবাদ, ১৯৬০), রূপালী বাতাস (১৯৭২), রূপালী বাতাস সোনালী আকাশ (১৯৭৩), মুজিবের রক্তলাল (১৯৭৬), ভাসানী মুজিবের রাজনীতি (১৯৮৪), পঞ্চাশ দশকে আমরা ও ভাষা আন্দোলন (১৯৮৫), চল্লিশ থেকে একাত্তর (১৯৮৫), আমি বিজয় দেখেছি (১৯৮৫), বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন (১৯৮৬), লন্ডনে ছক্কু মিয়া (১৯৮৬), ওরা চারজন (১৯৮৬), কোলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবি (১৯৮৭), বায়ান্নোর জবানবন্দী (১৯৮৭), বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র (সংক্ষিপ্ত সংস্করণ, ১৯৮৭), লেছড়াগঞ্জের লড়াই (১৯৮৭), নকশালদের শেষ সূর্য (১৯৮৯), একাত্তরের বর্ণমালা (১৯৮৯), বিজয় ’৭১ (১৯৯০), আমিই খালেদ মোশাররফ (১৯৯০), মহাপুরুষ (১৯৯১), একুশের দলিল (১৯৯২), দুমুখী লড়াই: আমরাই বাঙালী (১৯৯২), আমাকে কথা বলতে দিন (১৯৯৩), বাংলা নাটকের গোড়ার কথা (১৯৯৪), কে ভারতের দালাল (১৯৯৫), খন্দকার থেকে খালেদা (১৯৯৬), একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবিদের ভূমিকা (১৯৯৭), বঙ্গবন্ধু (১৯৯৭), জিন্নাহ থেকে মুজিব (১৯৯৮) এবং ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা (১৯৯৯)। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন রোগভোগের পর ২০০৪ সালের ২৬ জুন তাঁর মৃত্যু হয়।
[মনি হায়দার এবং মোহাম্মদ কবিরুল হাসান]