মিত্র, শম্ভু
মিত্র, শম্ভু (১৯১৫-১৯৯৭) অভিনেতা ও নাট্য-নির্দেশক। ১৯১৫ সালের ২২ আগস্ট কলকাতায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল সামান্যই, কিন্তু নাট্যাভিনয়ে তিনি অসামান্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।
কলকাতার রঙ্গমহল নাট্যমঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর নটজীবন শুরু হয়। ১৯৪৪ সালে বামপন্থী ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ভারতীয় গণনাট্য সংঘে যোগ দেন। এই সংঘের হয়ে বিজন ভট্টাচার্যের নবান্ন নাটকটি যৌথভাবে প্রযোজনা করে ও অভিনয়ে অংশ নিয়ে তিনি নাট্যজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেন এবং পুরনো নাট্যভাবনায় পরিবর্তন আনেন। ১৯৪৮ সালে তিনি কলকাতায় নিজের নাট্যদল বহুরূপী প্রতিষ্ঠা করেন। বহুরূপীই বাংলা থিয়েটারে নব-নাট্যান্দোলন তথা গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের পথিকৃৎ। এ নাট্যদলের মাধ্যমে শম্ভু মিত্র সংগঠক, অভিনেতা ও নাট্য-নির্দেশক হিসেবে বিখ্যাত হন। শম্ভু মিত্র চলচ্চিত্রেও অভিনয় ও নির্দেশনায় সাফল্য অর্জন করেন। সফোক্লিসের রাজা অয়দিপাউস, রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী, রাজা, চার অধ্যায়, ইবসেনের পুতুল খেলা এবং দশচক্র নাটকের প্রযোজনা শম্ভু মিত্রের কুশলী অভিনয় ও নির্দেশনায় খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করে।
শম্ভু মিত্র রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। একজন আবৃত্তিকার ও গদ্য-পাঠক হিসেবেও তিনি নন্দিত ছিলেন। প্রখ্যাত অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্র তাঁর সহধর্মিণী এবং শাঁওলী মিত্র তাঁর কন্যা। নাট্যচর্চায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি, সঙ্গীত-নাটক একাডেমীর ফেলোশিপ, পদ্মভূষণ উপাধি (১৯৭০), ম্যাগসেসাই পুরস্কার (১৯৭৬) এবং চলচ্চিত্রের জন্য কার্লোভিভারি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৭ সালের ১৮ মে কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। [আতাউর রহমান]