বাবুগঞ্জ উপজেলা
বাবুগঞ্জ উপজেলা (বরিশাল জেলা) আয়তন: ১৬৪.৮৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪৪´ থেকে ২২°৫৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১৫´ থেকে ৯০°২৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গৌরনদী, দক্ষিণে বরিশাল সদর ও ঝালকাঠি সদর উপজেলা, পূর্বে মুলাদী ও বরিশাল সদর উপজেলা, পশ্চিমে উজিরপুর উপজেলা।
জনসংখ্যা ১৪৬৭৪০; পুরুষ ৭৪০০৮, মহিলা ৭২৭৩২। মুসলিম ১৩৯১০৪, হিন্দু ৭৩৫৭, বৌদ্ধ ২০১, খ্রিস্টান ৬২ এবং অন্যান্য ১৬।
জলাশয় প্রধান নদী: শিকারপুর, আড়িয়াল খাঁ, কালিজিরা, আগরপুল, বরিশাল। রাজারবর খাল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন বাবুগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯০৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৬ | ৮১ | ৯০ | ৯১৪৪ | ১৩৭৫৯৬ | ৮৯০ | ৬৩.৯ | ৬০.৯ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
৭.৩০ | ৫ | ৯১৪৪ | ১২৫৩ | ৬৩.৮৭ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
পুরুষ | মহিলা | |||
আগরপুর ১৩ | ৭৫৭৮ | ১২৪১৭ | ১২৬৯৪ | ৫৮.৫০ |
কেদারপুর ৫৪ | ৭১১৭ | ১০৪০২ | ১০৩৩২ | ৫৫.৭০ |
চাঁদপাশা ২৭ | ৬৯৮৪ | ১৪০৬১ | ১৩৭৩৪ | ৬১.৪৩ |
দেহেরগাতি ৪০ | ৬৫১৫ | ১০৪৬৯ | ১১০৭১ | ৬৩.৩৩ |
মাধবপাশা ৬৭ | ৬৭৭৭ | ১৩৯৭৮ | ১৩২৬৬ | ৬৫.৪৫ |
রহমতপুর ৮১ | ৫৭৭১ | ১২৬৮১ | ১১৬৩৫ | ৬১.১৫ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ রামমোহনের সমাধি মন্দির (মাধবপাশা), দুর্গাসাগর দীঘি।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকসেনারা চাঁদপাশা ইউনিয়নের কারিকরনগর গ্রাম পুড়িয়ে দেয় এবং ১০ জন লোককে হত্যা করে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৮০, মন্দির ৯, গির্জা ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বাবুগঞ্জ জামে মসজিদ, খানপুরা জামে মসজিদ, আগরপুর জামে মসজিদ, শিকারপুর জামে মসজিদ।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬১.১%; পুরুষ ৬২.৭%, মহিলা ৫৯.৫%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বাবুগঞ্জ কলেজ (১৯৬৬), আবুল কালাম কলেজ (১৯৭০), আগরপুর কলেজ (১৯৯৫), রহমতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৯৮), মাধবপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আরজি কালিকাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শহীদ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর বীরশ্রেষ্ঠ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভূতেরদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২২, ক্লাব ২৭।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫০.৫৮%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৫৮%, শিল্প ১.১১%, ব্যবসা ১৩.৫৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৮১%, চাকরি ১৫.৯২%, নির্মাণ ১.৭৮%, ধর্মীয় সেবা ০.২৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৪.০১% এবং অন্যান্য ৬.৩৮%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৭৭.৯৯%, ভূমিহীন ২২.০১%। শহরে ৬৪.৯৪% এবং গ্রামে ৭৮.৮৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, আখ, ডাল, পান, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, পাট।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, কলা, নারিকেল, সুপারি, জাম, পেঁপে।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৬৩০, হাঁস-মুরগি ১৩৬।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৬০ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৬১ কিমি; নৌপথ ২৭ নটিক্যাল মাইল।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা অয়েল মিল ২, ফ্লাওয়ারমিল ২০, রাইসমিল ৬২, আইস ফ্যাক্টরি ১৮, ওয়েল্ডিং কারখানা ১৫।
কুটিরশিল্প লৌহশিল্প ১৭৫, দারুশিল্প ৪০০, বাঁশের কাজ ২১০।
হাটবাজার ও মেলা বাবুগঞ্জ মেলা, মীরগঞ্জ মেলা, ক্লাবগঞ্জ মেলা, খানপুরা মেলা, রহমতপুর মেলা, আগরপুর মেলা, দুর্গাসাগর মেলা এবং মোহনগঞ্জ বাজার উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, নারিকেল, সুপারি, পান, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৯.৫৮% (শহরে ৫৬.৫৮% ও গ্রামে ৩৮.৪২%) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.৩৪%, পুকুর ৩.৯৫%, ট্যাপ ১.৩৯% এবং অন্যান্য ২.৩২%। এ উপজেলায় অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৮.১৯% (শহরে ৭৭.৫৭% এবং গ্রামে ৬৭.৫৫%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৮.৫৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.২৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৭৬২ সালের ঝড় ও ভূমিকম্পে বাবুগঞ্জ উপজেলার অনেক স্থলভাগ ধসে বিলে রূপান্তরিত হয়। ১৭৭০ (বাংলা ১১৭৬) সালের ঝড় এবং ১৮২২, ১৮২৫, ১৮৩২ ও ১৮৫৫ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এই উপজেলার বহু লোক নিহত হয়। ১৭৮৭ সালের প্লাবনে এ অঞ্চলের ফসল নষ্ট হয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ১৯৬০ সালের ঝড় এবং ১৯৭০ সালের ১১ ও ১২ নভেম্বর ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে এ উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এনজিও কেয়ার, ব্র্যাক, কারিতাস, আশা, প্রশিকা।
[মাসুদ পারভেজ]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বাবুগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।