বরিশাল জিলা স্কুল
বরিশাল জিলা স্কুল বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন স্কুল। তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. গ্যারেট প্রথম একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং তাঁরই নির্দেশনায় ১৮২৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর স্থানীয় জনসাধারণের আর্থিক সহায়তায় শ্রীরামপুর মিশন বরিশাল ইংলিশ স্কুল নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। এ বিদ্যালয়টি (প্রোটেস্ট্যান্ট গীর্জার পশ্চিম দিকে) স্থানীয় জমিদার মি. লুকাসের জমির মধ্যে অবস্থিত ছিল। পরে ব্রাউন কম্পাউন্ড এবং ১৮৪২ সালে বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়। এই জমির মালিক ছিলেন মি. স্পেনসার। তৎকালীন বাংলার গভর্নরের নির্দেশমতো জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং স্কুলের সেক্রেটারি ই জে বার্টন (E. J Barton) সরকারকে বিদ্যালয়টি উন্নয়নের জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দিতে থাকেন। তিনি নিজ প্রচেষ্টায় সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গের নিকট থেকে ৩৮,৮১৭ টাকা চাঁদা আদায় করে সরকারের হাতে বুঝিয়ে দেন। এর ফলস্বরূপ বিশাল পরিমাণ জমির উপর বরিশাল জিলা স্কুল গড়ে উঠে। যা সংস্কারের জন্য বর্তমানে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
১৮৫৩ সাল থেকে এই বিদ্যালয়ের ব্যয়ভার সরকার গ্রহণ করে এবং তখন থেকে এর নামকরণ হয় বরিশাল জিলা স্কুল। ১৮২৯ সালে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মি. জন স্মিথ। ১৯৬১ সাল থেকে এই স্কুলকে পাইলট স্কুলে পরিণত করা হয়। তখন আমেরিকান বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে এর নানাবিধ পরিবর্তন ও সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করা হয়।
শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক, খান বাহাদুর হাশেম আলী খান, সাবেক স্পিকার আবদুল জববার খান, সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস, কমরেড প্রমোদ দাশ গুপ্ত, দার্শনিক সরদার ফজলুল করিম, ভাষা সৈনিক কাজী বাহাউদ্দিন আহমেদ, একুশের গানের সুরকার শহীদ আলতাফ মাহমুদ, কালী প্রসন্ন ঘোষ, শিল্পী গোলাম মুস্তাফা, কথা শিল্পী বুদ্ধদেব গুহ, সাবেক সেনা প্রধান হাসান মশহুদ চৌধুরী প্রমুখ এই স্কুলের কৃতী ছাত্র ছিলেন। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে এই স্কুলের ছাত্ররা গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখে।
১৮০ বছরের প্রাচীন বিদ্যালয়টির জমির পরিমাণ ২০ একর। বিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনসহ একাডেমিক ভবনের সংখ্যা ৬টি। স্কুলে ১টি মসজিদ, ১টি ছাত্রাবাস, প্রধান শিক্ষকের বাসভবন ও ২টি খেলার মাঠ রয়েছে। ২০০৮-২০০৯ শিক্ষা বর্ষ থেকে কলেজ শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক কোর্স চালু করা হয়। কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য একটি আধুনিক ল্যাবরেটরি রয়েছে। বিদ্যালয়ে ২ শিফটে মোট ২৪০০ ছাত্র লেখাপড়া করছে। এখানে ৫৩ জন শিক্ষক আছেন।
ছাত্রদের জন্য রয়েছে বিজ্ঞানাগার, গ্রন্থাগার, শিল্পকলা বিভাগ, বিএনসিসি, কাব ও স্কাউট কার্যক্রম। এছাড়া ছাত্রদের জন্য বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়। বার্ষিক মিলাদ ও বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান পালিত হয় এবং ম্যাগাজিন (সবুজপাতা) প্রকাশিত হয়।
২০০৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ৯৭.২৭% এবং ২০০৮ সালে পাশের হার ৯৯.৩০%। [সাবিনা ইয়াসমিন]