বনরুই
বনরুই (Pangolin) pholidota বর্গের Manidae গোত্রের বর্ম-ঢাকা, দন্তহীন স্তন্যপায়ী Manis crassicaudata। পৃথিবীতে বনরুইয়ের প্রজাতি ৭, তন্মধ্যে এশিয়ায় ৩। এশীয় বনরুইদের ৩ প্রজাতিই বাংলাদেশে আছে। অাঁশযুক্ত পিপীলিকাভুক নামেও পরিচিত এই জন্তুটি বাংলাদেশে অতি বিপন্ন। এদের শরীর ও লেজ গাঢ় বাদামি রঙের। বুক ও পেটে সামান্য লোম; অাঁশের ফাঁকে ফাঁকেও লোম দেখা যায়। নাক সরু ও চোখা। জিভ লম্বা ও আঠালো। চোখ ও কান সরু। সামনের নখরগুলি পেছনের নখরের তুলনায় দ্বিগুণ লম্বা। মাথাসহ শরীরের দৈর্ঘ্য ৬০-৭৫ সেমি, লেজ ৪৫ সেমি। শরীর নিচু ও প্রায় মাটি-ছোঁয়া। পিঠ, পাশ, হাত-পায়ের উপরদিক ও গোটা লেজ বড় বড় ত্রিকোণ শক্ত অাঁশে ঢাকা। নিচের চামড়া থেকে অাঁশ গজায় এবং বুকের দিক ছাড়া গোটা শরীর রক্ষা করে। অাঁশ একেকটি করে ঝরে পড়ে ও নতুন করে গজায়। ভয় পেয়ে বলের মতো শরীর গুটিয়ে ফেলে, অাঁশগুলি খাড়া করলে বনরুইকে সজারুর মতো দেখায়। এরা দুর্গন্ধযুক্ত এক ধরনের তরল নিঃসরণ ঘটাতে পারে।
বনরুই বড় ও মজবুত নখর দিয়ে কাঠের শক্ত গুঁড়ি ফেড়ে ফেলে এবং লম্বা ও আঠালো জিভ দিয়ে পোকামাকড় চেটে খায়। বুকে অবস্থিত গ্রন্থি পর্যাপ্ত লালা যুগিয়ে জিভ ভিজিয়ে রাখে। পিঁপড়া ও উইয়ের ঢিবি ভাঙার জন্য ওরা অগ্রপদের বাঁকা নখরগুলি কাজে লাগায়। নাকে ঢাকনি রয়েছে এবং পিঁপড়া খাওয়ার সময় পুরু চোখের পাতা পিঁপড়ার কামড় থেকে চোখগুলি বাঁচায়। নখরগুলি গুটিয়ে অগ্রপদের উপর ভর দিয়ে শরীর টেনে টেনে হাঁটে, কিন্তু শুধু পিছনের পায়ে ভর দিয়ে লেজের সাহায্যে ভারসাম্য রেখে দৌড়াতে পারে।
এরা নিশাচর, দিনের বেলায় নিজের খোঁড়া ২০০-৫০০ সেমি গভীর গর্তে কিংবা পাথরের মাঝখানে শরীর গুটিয়ে লুকিয়ে থাকে।বছরে একটি বা দৈবাৎ দুটি বাচ্চা প্রসব করে।
দেশের পূর্ব ও উত্তরের জেলাগুলির পত্রঝরা শালবন বা মিশ্র-চিরসবুজ বনে এদের বাস। অনেকে বনরুইয়ের মাংস খায়। বাসস্থান ধ্বংসের জন্যই এরা মূলত বিপন্ন। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায়ও বনরুই আছে। বাংলাদেশে প্রাপ্ত বনরুইয়ের মধ্যে আছে Indian Pangolin/Scaly Anteater (Manis crassicaudata), Malayan Pangolin (Manis javanica) ও Chinese Pangolin (Manis pentadactyla)।
[মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম]