ফরিদপুর জেলা
ফরিদপুর জেলা (ঢাকা বিভাগ) আয়তন: ২০৭২.৭২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১৭´ থেকে ২৩°৪০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৯´ থেকে ৯০°১১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে রাজবাড়ী এবং মানিকগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে গোপালগঞ্জ জেলা, পূর্বে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলা, পশ্চিমে নড়াইল ও মাগুরা জেলা।
জনসংখ্যা ১৭৫৬৪৭০; পুরুষ ৮৯৩৩৫৮, মহিলা ৮৬৩১১২। মুসলিম ১৫৭৬৭১৩, হিন্দু ১৭৮৩৫৪, বৌদ্ধ ১০৭৩, খ্রিস্টান ৫৮ এবং অন্যান্য ৩৭০।
জলাশয় প্রধান নদ-নদী: পদ্মা, পুরাতন কুমার, আড়িয়াল খাঁ, গড়াই; ঢোল সমুদ্র, রামকেলী, ঘোড়াদার এবং শকুনের বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন ফরিদপুর জেলা গঠিত হয় ১৮১৫ সালে। ফরিদপুর পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে ফরিদপুর সদর উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪০৭.০২ বর্গ কিমি) এবং সবচেয়ে ছোট উপজেলা আলফাডাঙ্গা (১৩৬ বর্গ কিমি)।
জেলা | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
আয়তন(বর্গ কিমি) | উপজেলা | পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |
শহর | গ্রাম | ||||||||
২০৭২.৭২ | ৮ | ৪ | ৭৯ | ১০৩৮ | ১৮৬০ | ২২৭৪৭১ | ১৫২৮৯৯৯ | ৮৪৭ | ৪০.৯ |
জেলার অন্যান্য তথ্য | ||||||||
উপজেলার নাম | আয়তন(বর্গ কিমি) | পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
আলফাডাঙ্গা | ১৩৬ | - | ৬ | ৯২ | ১২১ | ১০০৫৯৮ | ৭৪০ | ৪৩.০ |
চরভদ্রাসন | ১৪১.৫৯ | - | ৪ | ২৪ | ৮৮ | ৭৬৩৬৬ | ৫৩৯ | ৩৪.৩ |
নগরকান্দা | ১৯৬.০৬ | ১ | ৯ | ১৪০ | ১৬৫ | ১৭৭৭১০ | ৯০৬ | ৩৬.২ |
ফরিদপুর সদর | ৪০৭.০২ | ১ | ১১ | ১৫৭ | ৩৩২ | ৪১৩৪৮৫ | ১০১৬ | ৪৯.৭ |
বোয়ালমারী | ২৭২.৩৪ | ১ | ১১ | ১৭৩ | ২৫১ | ২৩৩৬৮৩ | ৮৫৮ | ৩৬.৪ |
ভাঙ্গা | ২১৬.৩৪ | ১ | ১২ | ১৩৬ | ২০৫ | ২৩২৩৮৬ | ১০৭৪ | ৩৮.১ |
মধুখালী | ২৩০.২০ | - | ৯ | ১২৯ | ২৪১ | ১৮৭৭৭৫ | ৮১৬ | ৪৩.৩ |
সদরপুর | ২৯০.২০ | - | ৯ | ৮৮ | ২৯৬ | ১৮৮৭৫৭ | ৬৫০ | ৩৬.৩ |
সালথা | ১৮২ | - | ৮ | ৯৯ | ১৬১ | ১৪৫৭১০ | ৭৯৬ | ৩১.১৬ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল পাকবাহিনী জেলার শ্রীঅঙ্গন জগবন্ধু আশ্রমের ৮ জন ব্রহ্মচারীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ৩০ এপ্রিল পাকসেনারা ভাঙ্গা থানায় গণহত্যা চালায় এবং জানদী গ্রামে ১৭ জন ও নগরকান্দায় ২১ জন মহিলাসহ বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে। ২ মে জেলা সদরের ইশান গোপালপুর গ্রামে ৩৪ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ২১ মে চাঁদহাটে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াইয়ে প্রায় ৩০ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। ৩০ মে পাকসেনারা কোদালিয়া থেকে বাগাট পর্যন্ত ৫ টি গ্রামের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ১৮ জন নিরীহ লোক মারা যায়। ৩১ মে পাকসেনারা হেলিকপ্টার দিয়ে গুলিবর্ষণ করে এবং ৯ টি গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে। করিমপুর ব্রিজের কাছে মুক্তিদ্ধোদের সাথে পাকবাহিনীর এক লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধারা তালমা ক্যাম্প আক্রমণ করে ৮ জন রাজাকারকে হত্যা করে। নগরকান্দা উপজেলায় পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণে রাজাকারসহ বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয় এবং ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১৭ ডিসেম্বর ফরিদপুর পুলিশ লাইনে পাকসেনারা আত্মসমর্পণ করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ৪; বধ্যভূমি ১; স্মৃতিস্তম্ভ ৪; ভাস্কর্য ১। ফরিদপুর স্টেডিয়াম, ফরিদপুর হাউজিং স্টেটের গণকবর উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪০.৯%; পুরুষ ৪৪.৬%, মহিলা ৩৭%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ফরিদপুর জেলা স্কুল (১৮৪০), সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ (১৯১৮), ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ (১৯৮৫), সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ, হিতৈষী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৯), ভাঙ্গা পাইলট হাইস্কুল (১৮৮৯), বোয়ালমারী জর্জ একাডেমী (১৯১১), বাইশরশি শিবসুন্দর একাডেমী (১৯১৪), ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), কালামৃধা গোবিন্দ হাইস্কুল, কোরকদি রামবিহারী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), কৃষ্ণপুর হাইস্কুল (১৯১০), বাকিগঞ্জ ইসলামিয়া মাদ্রাসা (১৯২২)।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৮.৬০%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮৮%, শিল্প ১.০৭%, ব্যবসা ১৪.০৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৫৮%, নির্মাণ ১.৯১%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, চাকরি ৮.৮৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৫০% এবং অন্যান্য ৬.৩১%।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: জাগরণ, গণমন (১৩৭০ বাংলা), চাষিবার্তা, ইদানিং, ঠিকানা, ভোরের রানার, ফরিদপুর (১৯৯৭), কুমার (২০০৬); সাপ্তাহিক: কালভাবনা (২০০৪), প্রগতির দিন (১৯৯৫), বোয়ালমারী সংবাদ, আল হেলাল, ভাংগা খবর, পাক্ষিক: নজির বাংলা; অবলুপ্ত: ফরিদপুর দর্পণ (১৮৬১), চিত্রকর (১২৮৩ বাংলা), কোহিনুর (১৮৯৬), সঞ্জয় (১৯০০), আর্যকায়স্থ (১৩১৮ বাংলা), ফরিদপুর হিতৈষী (১৩২৯ বাংলা), ফরিদপুর আঙ্গিনা (১৩২৯ বাংলা), বার্তা (১৯২৬), মোয়াজ্জিন (১৩৩৫ বাংলা), The Servant of Humanity (১৯৬০), সিরাজ (১৯৩২), লাঙ্গল (১৯৩২), সেবা (১৩৫০ বাংলা), খেদমত (১৩৭৩ বাংলা), যুবশক্তি (১৯৭২), সাপ্তাহিক বাংলাদেশ (১৯৭২), সত্যযুগ (১৯৭৫), ফরিদপুর বার্তা (১৯৭৯), একাল (১৯৭৯), সমাচার (১৯৮০), অর্ধ সাপ্তাহিক বাংলা সংবাদ (১৯৮২)।
লোকসংস্কৃতি ফরিদপুর জেলায় একসময় বাউল, মরমী, বিচার, মুর্শিদী-মারফতি, ফকিরালী গান, গাজীরগান, কবিগান, জারিগান প্রভৃতি প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে এসব লোকগান অবলুপ্ত। তবে নববর্ষ, ঈদ, বড়দিন, নবান্ন উৎসব, পৌষ উৎসব, রথযাত্রা, রামের বিয়ে, দোল পূর্ণিমার উৎসব, দূর্গোৎসব এবং বৃষ্টির জন্য আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়। এছাড়া জন্মদিন, অন্নপ্রাসন, মহররম, বিবাহ, জামাই ষষ্ঠী, ভাদ্রমঙ্গলচন্ডী উপলক্ষে এবং অন্যান্য লোক বিশ্বাস, লোকাচার, পারিবারিক নানা অনুষ্ঠানে নারীরা অংশগ্রহণ করে এবং গান পরিবেশন করে। লোকজ খেলার মধ্যে দাড়িয়াবান্ধা, নৌকাবাইচ, হাডুডু, মোরগলড়াই উল্লেখযোগ্য।
দর্শনীয় স্থান পাতরাইল শাহী মসজিদ ও দীঘি, মথুরাপুরের দেউল, পিকনিক কর্ণার, পল্লীকবি জসিমউদ্দিনের বাড়ি, জগবন্ধুসুন্দরের আশ্রম, শাহ সাহেবের বাড়ি, চৌদ্দরশি জমিদার বাড়ি, কানাইপুর শিকদার বাড়ি এবং নদী গবেষণা ইন্সটিটিউট ক্যাম্পাস। [মাসুদ রেজা]
আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফরিদপুর জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; ফরিদপুর জেলার উপজেলা সমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।