প্লাইসটোসিন সোপান
প্লাইসটোসিন সোপান (Pleistocene Terrace) সোপান হচ্ছে সমুদ্রতল প্রান্তে স্তরে স্তরে বেঞ্চি আকৃতির গঠন। প্লাইসটোসিন যুগে গঠিত এই ধরনের সোপান প্লাইসটোসিন সোপান নামে পরিচিত। পৃথিবীর কয়েকটি অংশেই বড় বড় বদ্বীপীয় অঞ্চলে প্লাইসটোসিন বহুমুখী পাললিক সোপান নিয়মিত গড়ে উঠেছে। প্লাইসটোসিন যুগে মহাদেশের হৈম-তুষারের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতায় তারতম্য ঘটেছে। হিমবাহ যতই এগিয়ে এসেছে, সমুদ্রতলও একইভাবে নেমে গেছে। প্রতিটি হিমযুগে সমুদ্রে নিপতিত অধিকাংশ নদীর নতিমাত্রা আকস্মিকভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে নদীউপত্যকাসমূহ সম্মুখভাগে দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বর্তমান সময়ের চেয়ে ১০০ থেকে ১৪০ মিটার নিচে একটি নতুন ভিত্তি সমতল (baselevel) লাভ করেছে। হিমবাহ গলে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠ আবার স্ফীত হয়ে ওঠে এবং ক্ষয়প্রাপ্ত উপত্যকাসমূহ পলিজ অবক্ষেপে পূর্ণ হয়ে ধীরে ধীরে তাদের মোহানাজাত বৈশিষ্ট্য হারাতে থাকে।
আন্তঃহিমবাহ যুগের মেয়াদ হিমবাহ যুগের স্থিতি কালের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। দুই হিমবাহ যুগের মধ্যবর্তী দীর্ঘ সময়ে প্রায় উপকূলরেখার সমান্তরাল অবক্ষেপপূর্ণ খাদে অবনমন অব্যাহত থাকে এবং এর ক্ষতিপূরক হিসেবে অভ্যন্তরীন ভূমির উত্থান সংঘটিত হয়। সমুদ্রমুখী অবনমন ও স্থলমুখী উত্থানের যুগপৎ প্রভাবে পাললিক সোপানসমূহে তোবড়িয়ে (warping) যায়। এগুলোকেই প্লাইসটোসিন সোপান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মধুপুর ও বরেন্দ্র এলাকার উত্তর-দক্ষিণ প্রলম্বিত লালাভ বাদামি দ্বীপসমূহ বাংলাদেশে প্লাইসটোসিন সোপানের নমুনা বলে ধারণা করা হয়। ভূ-সাংস্থানিক ভাবে এই সব সোপান সংলগ্ন সক্রিয় প্লাবনভূমির চেয়ে সামান্য উঁচু এই সোপানসমূহের অবক্ষেপ অত্যন্ত আবহবিকারে আক্রান্ত এবং দারুণভাবে জারিত। মধুপুর-বরেন্দ্র এলাকার প্রাথমিক ভূ-পৃষ্ঠ বর্ষার প্রবল বারিপাত ও অন্যান্য ক্ষয়কারী কার্যক্রমের কারণে উত্তর- প্লাইসটোসিন যুগে ব্যাপকভাবে ব্যবচ্ছেদের শিকার হয়েছে। যা থেকে এইসব প্লাইসটোসিন সোপান মুক্ত থেকেছে। পরবর্তীতে এই সব ব্যবচ্ছেদিত উপত্যকা উর্বর পলিমাটিতে পূর্ণ হয়ে যায় যা প্রাথমিক প্লাইসটোসিন সোপান সমূহের চেয়ে অধোভাগে সাম্প্রতিক (recent) প্লাবনভূমির সৃষ্টি করেছে।
[মোঃ হোসেন মনসুর]