পঞ্চগড় সদর উপজেলা
পঞ্চগড় সদর উপজেলা (পঞ্চগড় জেলা) আয়তন: ৩৪৭.০৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৬°১৭´ থেকে ২৬°২৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৩১´ থেকে ৮৮°৪৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তর ও পূর্বে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, দক্ষিণে বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া উপজেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। ছিটমহল ২। এ উপজেলায় ভারতীয় ছিটমহলগুলি হচ্ছে গারাতি ও সিংগীমারী।
জনসংখ্যা ২২৯২৩৭; পুরুষ ১১৮২২৬, মহিলা ১১১০১১। মুসলিম ২১৪৪৪২, হিন্দু ১৪৫৫৩, বৌদ্ধ ১৮৫, খ্রিস্টান ১৭ এবং অন্যান্য ৪০।
জলাশয় করতোয়া, তালমা ও চাওয়াই নদী উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন ব্রিটিশ আমলে এ উপজেলাকে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে একটি থানা করা হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮০ সাল থেকে পঞ্চগড় মহকুমার অধীনে আসে। পঞ্চগড় সদর থানা গঠিত হয় ১৯০৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১০ | ৮৩ | ১৯৬ | ৩৮৯২৯ | ১৯০৩০৮ | ৬৬০ | ৬১.৪ | ৪২.২ |
পৌরসভা | |||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার(%) |
২০.৭২ | ৯ | ৩২ | ৩৮৫৪২ | ১৮৬০ | ৬১.৫ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
- | ১ | ৩৮৭ | - | ৫৫.৩ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন(একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার(%) | |
|| || পুরুষ | মহিলা | |||
অমরখানা ১১ | ৮৩৬৬ | ৯৯৫৬ | ৯৪১৪ | ৩৮.৭৮ |
কামাত কাজলদিঘি ৫৯ | ৬১৭২ | ৭১৮৩ | ৬৭৬০ | ৪৬.৩৫ |
গড়িনাবাড়ি ৪৩ | ৭১০৫ | ৮৯২৬ | ৮৩৬৯ | ৪৩.৮৫ |
চাকলারহাট ২৩ | ১১৫৬৮ | ১০৭৫৩ | ১০১৭১ | ৪০.২৬ |
ধাক্কামারা ৩৬ | ৭১৯২ | ১১২৮৬ | ১০৭৫৮ | ৪৯.২৩ |
পঞ্চগড় সদর ৭১ | ৮৫৬০ | ১১০৮৮ | ৯৯৮০ | ৪২.৯৪ |
মাগুড়া ৬৫ | ৫৭৮৩ | ৭৪৬৫ | ৬৯১৫ | ৪৬.০৯ |
সাতমারা ৮৩ | ১১০৩৬ | ১২১০২ | ১১১০৬ | ৩৪.১৯ |
হাড়িভাসা ৪৭ | ১২১৯৬ | ১১০৭৭ | ১০৯৮০ | ৪০.৪৬ |
হাফিজাবাদ ৩৫ | ৫৯২২ | ৮৪০১ | ৮০০৫ | ৪৩.৫০ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ১৯৪৯-৫০ সালে ভারতের জলপাইগুড়ি শহরে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা সংঘটিত হলে বিপুলসংখ্যক মুসলমান পালিয়ে এসে পঞ্চগড় শহর ও গ্রামে বসতি গড়ে তোলে। সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ (১৭৬২-১৮০০), তেভাগা-আন্দোলন (১৯৩৮-৩৯, ৪৬-৪৭), ভাষা-আন্দোলন, পঞ্চগড়ে মহকুমা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন (১৯৪৯-৮০), কৃষক-আন্দোলন (১৯৫৮-৬৮), সীমান্তবর্তী ইপিআরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান প্রভৃতি আন্দোলন ও বিদ্রোহে উপজেলার জনগণ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরুতে পাকসেনাদের গুলিতে ২ জন ইপিআর শহীদ হন এবং ১৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। তাছাড়া পাকবাহিনীর উত্তরদিকের গতিরোধ করার নিমিত্তে গেরিলারা অমরখানা ক্যাম্পের নিকট চাওয়াই নদীর সেতু বিধ্বস্ত করে দেয়। ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পাকবাহিনী উপজেলা শহরে এবং মীরগড়ে অর্ধশতাধিক নিরীহ লোককে হত্যা করে। জুলাই মাসে অমরখানায় পাকবাহিনী ১৬ জনকে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১ (করতোয়া নদীর তীরে); শহীদ ফারুক আহাম্মাদ স্মৃতিস্তম্ভ (পঞ্চগড় শহরের ধাক্কামারায়); শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সকিম উদ্দিনের কবর (জগদল হাটের বায়তুল আমান মসজিদের সামনে)।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৫.৭%; পুরুষ ৫১%, মহিলা ৪০%। কলেজ ১২, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১, ব্যবসায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৭৭, কিন্ডার গার্টেন ১০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বিষ্ণু প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৪), মীরগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৮), ময়নাগুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৮)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: পঞ্চগড় বার্তা; পাক্ষিক: এই সময়; বিলুপ্ত : উত্তর আশা. করতোয়া, পঞ্চরূপা, আলোড়ন বার্তা, উন্মেষ, দুর্জয়, পিলসুজ।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রে্রি ৬, ক্লাব ৩, শিল্পকলা পরিষদ ১, অডিটোরিয়াম ১, স্টেডিয়াম ১, ডাকবাংলো ১, সিনেমা হল ৪।
বিশেষ আকর্ষণ মহারাজদিঘি ও গড় (ভিতর গড়), রক্স মিউজিয়াম (পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ), কাজলদিঘি (টুনির হাট), পঞ্চগড় ফরেস্ট (শহরের উপকণ্ঠ)।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৯.৭৩%, অকৃষি শ্রমিক ৬.৪৪%, শিল্প ০.৬৩%, ব্যবসা ১১.৮৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৬৩%, চাকরি ৮.১৫%, নির্মাণ ০.৮৪%, ধর্মীয় সেবা ০.১৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৯% এবং অন্যান্য ৭.৩৮%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৩.৪৩%, ভূমিহীন ৪৬.৫৭%। শহরে ৩৯.৪৭% এবং গ্রামে ৫৬.২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আখ, আলু, তিল, তিসি, তরমুজ, বাঁশ, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক, অড়হর, আউশ ধান, ধেমসি।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, কলা, ডালিম, আনারস, আতা, তরমুজ, সুপারি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি ও গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা সুগারমিল, রাইসমিল, হাসকিং মিল, স’মিল, কারেন্ট পিলার ইন্ডাস্ট্রি, জাজ ডিস্টিলারিজ (ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্পিরিট), হোমিও ল্যাবরেটরি, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশ ও কাঠের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৭, মেলা ৫। রাজনগর হাট, জগদল হাট, ঝলই হাট, হাড়িভাসা হাট, মডেল হাট, ফুটকীবাড়ি হাট, মাগুড়া-দলুয়া হাট, চাকলা হাট, গলেহা হাট, তালমা হাট, মীরগড় হাট, জিয়াবাড়ি হাট, টুনির হাট, দেওয়ান হাট, কাজীর হাট এবং জেলা পরিষদ চত্তর, পঞ্চগড় সদর ও আমলাহারে অনুষ্ঠিত মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, গম, পাট, সুপারি, তরমুজ, চিনি, বিদ্যুৎ লাইনের খুঁটি, এলকোহল, বাঁশ ও বাঁশের চাটাই।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১১.৯২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ নুড়ি পাথর, বালু।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৭৩.৭২%, ট্যাপ ১.৬৭%, পুকুর ১.০৯% এবং অন্যান্য ২৩.৫২%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৯% (গ্রামে ১৯.৬৯% ও শহরে ৭৫.৯৭%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৭.০৭% (গ্রামে ২৯.৯৭% ও শহরে ১২.৪৩%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪৩.৯৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র সদর হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ১, হাসপাতাল ১, ক্লিনিক ১০।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, আরডিআরএস।
[মো. আহসান হাবীব]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পঞ্চগড় সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।