নওগাঁ সদর উপজেলা
নওগাঁ সদর উপজেলা (নওগাঁ জেলা) আয়তন: ২৭৫.৭৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪৩´ থেকে ২৪°৫৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৭´ থেকে ৮৯°০১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বদলগাছি ও মহাদেবপুর উপজেলা, দক্ষিণে রানীনগর ও মান্দা, পূর্বে আদমদীঘি ও আক্কেলপুর উপজেলা, পশ্চিমে মহাদেবপুর ও মান্দা উপজেলা।
জনসংখ্যা ৩৫৪৫৭০; পুরুষ ১৮৩৬১৮, মহিলা ১৭০৯৫২। মুসলিম ৩২৪৮৪২, হিন্দু ২৮৭৮৫, বৌদ্ধ ২৩১, খ্রিস্টান ২৪ এবং অন্যান্য ৬৮৮। এ উপজেলায় সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় ছোট যমুনা এবং তুলসীগঙ্গা নদী, গোটিয়া বিল ও দীঘলি বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৮১০ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১২ | ২৩৭ | ২১৫ | ১২৪০৪৬ | ২৩০৫২৪ | ১২৮৬ | ৫৯.৩ | ৪২.০ |
পৌরসভা | |||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
৩৭.০৩ | ৯ | ৬২ | ১২৪০৪৬ | ৩৩৫০ | ৫৯.২৭ |
ইউনিয়ন | |||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন(একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার(%) | ||
|| || পুরুষ | মহিলা | ||||
কীর্ত্তিপুর ৭৩ | ৪৩৪৮ | ৮৭৫৮ | ৮২১৬ | ৪৯.৫৩ | |
চন্ডিপুর ৪৩ | ৩৬৮২ | ১২৬৪৪ | ১২২১৯ | ৪১.৪৮ | |
তিলকপুর ৯৪ | ৫৭২৫ | ১৫৩৯৪ | ১৪৫৯৩ | ৪৪.০৯ | |
দুবলহাটি ৫১ | ৭৩৫১ | ৯২৮৭ | ৮৬৫৩ | ৩৪.৯৮ | |
বখতিয়ারপুর ১৩ | ৪৩৬২ | ৮৩৪৮ | ৮০৩৯ | ৪৯.২৮ | |
বর্ষাইল ২১ | ৩৬৬৫ | ৯১২৬ | ৮৬০৯ | ৪৬.৭৫ | |
বলিহার ১৪ | ৫৮১৫ | ৮৭২৬ | ৮৩১১ | ৩৮.৬৮ | |
বোয়ালিয়া ২৯ | ১৭২৩ | ৮৩৯৭ | ৭৯৯৬ | ৫১.২৬ | |
শিকারপুর ৮৭ | ৮৪৪৬ | ৮৫৫২ | ৮২৭৬ | ৩৫.২২ | |
শৈলগাছী ৩৬ | ৩১৩৬ | ৬৩৮৫ | ৬০৪৪ | ৩৯.৯০ | |
হাপানিয়া ৫৮ | ৪৬১৯ | ১১৯০৮ | ১১১৩৪ | ৩৮.৯৭ | |
হাঁসাইগাড়ী ৬৫ | ৫৯১৮ | ১০৬৮৭ | ১০২২২ | ৩৪.৬৫ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ দুবলহাটির রাজবাড়ি, বলিহার রাজবাড়ি, শৈলগাছী রাজবাড়ি, কাশিমপুর জমিদার বাড়ি, কুমাইগাড়ীর তিন গম্বুজ মসজিদ ও বালুভরার মন্দির উল্লেখযোগ্য।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ১৮৫৯-৬০ সালে নীল বিদ্রোহ ও ১৮৮৩ সালে কৃষকনেতা আস্তান মোল্লার নেতৃত্বে জমিদারদের খাজনা বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন নওগাঁর অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় নওগাঁ ছিল ইপিআর ৭ নম্বর উইং এর হেড কোয়ার্টার। ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল পাকবাহিনী সুলতানপুর, পার নওগাঁ, ধোপাপাড়া, উকিলপাড়া ও হাট নওগাঁ থেকে প্রায় ১২৫ জন যুবককে ধরে এনে লর্ড লিটন ব্রিজের ওপর হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়। ২৩ এপ্রিল পাকবাহিনী মোহনপুর গ্রামের ১৭ জন এবং ২৫ এপ্রিল ফতেহপুর গড়েবাড়ি হাটে ১৩ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন নওগাঁ ব্রিজের মোড়ে স্বাধীনতার ভাস্কর্য, গণকবর ৫ (বোয়ালিয়া, পার নওগাঁ, বিহারী কলোনী, মালশন, কাঁঠালতলী)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩১২, মন্দির ৯২, গির্জা ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: নওগাঁ গাঁজা সোসাইটি মসজিদ, মঠের ঘাট মন্দির, পাদরী সাহেবের গির্জা।
শিক্ষার হার,'শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.২%; পুরুষ ৫৩.৪%, মহিলা ৪২.৫%। কলেজ ৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫৩, কিন্ডার গার্টেন ১১, মাদ্রাসা ৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নওগাঁ সরকারি কলেজ (১৯৬২), নওগাঁ সরকারি বিএমসি মহিলা কলেজ (১৯৭২), বলিহার মহাবিদ্যালয় (১৯৯৪), দুবলহাটী রাজা হরনাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৪), নগর কুসুম্বা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮২), নওগাঁ হাইস্কুল (১৮৮৪), ভীমপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), নওগাঁ পি এম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৯), চক আতিথা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), চাকলা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), কীর্ত্তিপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১), নওগাঁ সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুল (১৯২৬), পাহাড়পুর জি এম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৬), ইলশবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৩), ফতেহপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৮), নওগাঁ জিলা স্কুল (১৯৭২), জনকল্যাণ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮০), ইসলামিয়া মাদ্রাসা (১৯২১), নামাজগড় গাউসুল আযম কামিল মাদ্রাসা (১৯৫১), নওগাঁ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৬২)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: জযবাংলা ইশতেহার, আলোকবার্তা; সাপ্তাহিক: বঙ্গবাণী, বরেন্দ্রবার্তা, নববার্তা, বাংলার কথা, দেশের বাণী, বাঁকাচাঁদ, নবযুগ, এই সময়, বাংলার কথা; পাক্ষিক: সূর্যমুখী; মাসিক: নবদিগন্ত। এছাড়াও প্রতি বছর ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নওগাঁর জেলা প্রশাসন একটি বার্ষিকী প্রকাশ করে।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ২, লাইব্রেরি ২৬, সিনেমা হল ৩, নাট্যমঞ্চ ৩, নাট্যদল ৫, সংগীত দল ৭, স্টেডিয়াম ১, খেলার মাঠ ৮২, মহিলা সংগঠন ২।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৮.১৮%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৫২%, ব্যবসা ১৭.১৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৭.৪১%, চাকরি ৯.৩৩%, নির্মাণ ১.৯১%, ধর্মীয় সেবা ০.১৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৫৭% এবং অন্যান্য ১১.৭৯%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৩.২৫%, ভূমিহীন ৪৬.৭৫%।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, ডাল, সরিষা, শাকসবজি।
বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি গাঁজা, আউশ ধান, তিল, তিসি, কাউন।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপে।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন টমটম, পাল্কি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা রাইসমিল, কোল্ড স্টোরেজ, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, সূচিশিল্প।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২২, মেলা ৮। কীর্ত্তিপুর হাট, পাহাড়পুর হাট, শিবপুর হাট, তেঁতুলিয়া হাট, বটতলী হাট এবং বলিহার রথের মেলা, শিবপুর লক্ষ্মীপূজার মেলা, কাশিমপুর মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, গম, আলু, সরিষার তেল।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩২.২৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.২৭%, ট্যাপ ২.৩০%, পুকুর ০.১০% এবং অন্যান্য ৫.৩৩%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ অঞ্চলে ৩০.৬৮% (গ্রামে ১৪.৫৯% এবং শহরে ৬৩.৯৩%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৩.৯৫% (গ্রামে ৩৭.৯২% এবং শহরে ২৫.৭৬%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩৫.৩৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, মাতৃমঙ্গল ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র ১২, গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, ক্লিনিক ৩২।
এনজিও আশা, ব্র্যাক, প্রশিকা, কারিতাস।
[মো. মোখলেছুর রহমান]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নওগাঁ সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।