দে, রামদুলাল
দে, রামদুলাল (১৭৫২-১৮২৫) প্রথম আধুনিক বাঙালি উদ্যোক্তা, কোটিপতি এবং ব্যবসা ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব। দমদম পরগণার (বর্তমানে কলকাতার দমদম বিমান বন্দর) রেকজানি গ্রামের একজন দিনমজুরের পুত্র রামদুলাল দে জনৈক বলরাম সরকারের নিকট ব্যবসায় হিসাব রক্ষণের কাজ শেখেন। পরবর্তী সময়ে মামা রামসুন্দর বিশ্বাস তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসেন এবং একটি ইংলিশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হিসাব রক্ষকের চাকরি দেন। সেখানে তিনি আধুনিক বুক কিপিং ও সনাতন হিসাব রক্ষণের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। কলকাতার জনৈক বানিয়া মদনমোহন দত্তের একজন জাহাজ সরকার বা হিসাব রক্ষক হিসেবে একটি ছোট পদে রামদুলাল দের চাকরি হয়। রামদুলাল দের শততা ও বুদ্ধিমত্তা এবং ব্যবসায়ে তাঁর উৎসাহ দেখে মদনমোহন দত্ত একবার তাঁকে প্রথম ভাঙা জাহাজ নিলামে ক্রয় করার দায়িত্ব দেন, যা থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এক লক্ষ রূপী মুনাফা হয়। এ ঘটনার পর মদনমোহন দত্ত নিলামের পুরো অর্থ তাঁর সরকার রামদুলালকে দান করেন এবং তাঁকে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করার অনুমতি দেন। এ টাকাই ছিল রামদুলালের ভাগ্য গড়ার দীর্ঘ যাত্রার মূল চাবি-কাঠি।
রামদুলাল দে’র জীবনী লেখক উল্লেখ করেছেন যে, তিনি যে কাজে হাত দিতেন সেখানেই সোনা ফলত। তিনি তাঁর প্রভুর দেয়া অর্থের সদ্ব্যবহার করেন এবং সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে শ্রিঘ্রই কলকাতার একজন ধনাঢ্য ব্যক্তিতে পরিণত হন। আমেরিকান বণিকদের সঙ্গে পারস্পরিক সংযোগের মাধ্যমেই রামদুলাল ব্যবসায়ে অধিক সাফল্য অর্জন করেন। ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে আমেরিকান বনিকরা বঙ্গোপসাগরের পথে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বাংলায় আগমন শুরু করে। ১৮০০ সাল পর্যন্ত কলকাতা বন্দরে আসা সকল জাহাজই রামদুলালকে তাদের মুৎসুদ্দি বা স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করে। পাশাপাশি আমেরিকানদের সঙ্গে নৌবাণিজ্যে রামদুলাল নিজে প্রচুর পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করেন এবং প্রভূত মুনাফার অধিকারী হন। ১৮০০ সালে তিনি কলকাতায় নিজস্ব ক্লিয়ারিং ও ফরোয়ার্ডিং এজেন্সিও প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর সুযোগ্য নির্দেশনায় আমেরিকানরাও যথেষ্ট লাভবান হয়। প্রতিদান স্বরূপ তারা রামদুলাল দে’কে আমেরিকায় নিয়ে জনসমক্ষে সম্বর্ধনা দেয়ার প্রস্তাব করে। কিন্তু ধর্মীয় কারণে সাগর পাড়ি দিয়ে তাঁর বিদেশ যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
অবশ্য আমেরিকানরা বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে তাঁকে অন্যভাবে সম্মাণীত করে। তারা তাদের জাতির পিতা প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের একটি প্রমাণ আকারের পোট্রেট উপহার দেয়।রামদুলাল দে’র জীবনী লেখক উল্লেখ করেছেন যে, তিনি যে কাজে হাত দিতেন সেখানেই সোনা ফলত। তিনি তাঁর প্রভুর দেয়া অর্থের সদ্ব্যবহার করেন এবং সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে শ্রিঘ্রই কলকাতার একজন ধনাঢ্য ব্যক্তিতে পরিণত হন। আমেরিকান বণিকদের সঙ্গে পারস্পরিক সংযোগের মাধ্যমেই রামদুলাল ব্যবসায়ে অধিক সাফল্য অর্জন করেন। ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে আমেরিকান বনিকরা বঙ্গোপসাগরের পথে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বাংলায় আগমন শুরু করে। ১৮০০ সাল পর্যন্ত কলকাতা বন্দরে আসা সকল জাহাজই রামদুলালকে তাদের মুৎসুদ্দি বা স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করে। পাশাপাশি আমেরিকানদের সঙ্গে নৌবাণিজ্যে রামদুলাল নিজে প্রচুর পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করেন এবং প্রভূত মুনাফার অধিকারী হন। ১৮০০ সালে তিনি কলকাতায় নিজস্ব ক্লিয়ারিং ও ফরোয়ার্ডিং এজেন্সিও প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর সুযোগ্য নির্দেশনায় আমেরিকানরাও যথেষ্ট লাভবান হয়। প্রতিদান স্বরূপ তারা রামদুলাল দে’কে আমেরিকায় নিয়ে জনসমক্ষে সম্বর্ধনা দেয়ার প্রস্তাব করে। কিন্তু ধর্মীয় কারণে সাগর পাড়ি দিয়ে তাঁর বিদেশ যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। অবশ্য আমেরিকানরা বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে তাঁকে অন্যভাবে সম্মাণীত করে। তারা তাদের জাতির পিতা প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের একটি প্রমাণ আকারের পোট্রেট উপহার দেয়। উপরন্ত তারা রাম দুলাল দে’র একটি পোট্রেট আাঁকিয়ে তা ইস্ট ইন্ডিয়া মেরিন সোসাইটি মিউজিয়ামে রাখার ব্যবস্থা করে। এ ছাড়াও রামদুলালের সঙ্গে বাণিজ্যসূত্রে কর্মরত একটি সালেম হাউস (বোস্টনের নিকটবর্তী একটি বন্দর) তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের একটি জাহাজের নাম করে ‘রামদুলাল দে’। এই জাহাজ সালেম থেকে কলকাতায় বেশ কয়েকটি বাণিজ্য সফর করে। ১৮০৭ থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্ত বাংলার রপ্তানি বাণিজ্যে আমেরিকানদের অংশগ্রহণ ছিল খুবই কম। এর কারণ ছিল তাদের স্ব-আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং নেপোলিয়ানের সঙ্গে যুদ্ধে আমেরিকানদের প্রতি ব্রিটিশদের বৈরিতা। ফলে এ সময়ে আমেরিকানরা রামদুলালের মাধ্যমে বাংলায় তাদের বাণিজ্যিক লেনদেন সম্পন্ন করত। রামদুলাল নিজের জাহাজে করে পণ্যসামগ্রী ল্যাটিন আমেরিকায় পাঠাতেন।
রামদুলাল ছিলেন প্রথম বাঙালি ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা, যিনি আমেরিকান ও ইউরোপীয়ানদের সঙ্গে সমান তালে এবং সমমর্যাদায় ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত ছিলেন। অধিকন্তু, বাঙালিদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম নিজের জাহাজ নিয়ে পশ্চিম গোলার্ধ বা আমেরিকায় নৌবাণিজ্য পরিচালনা করেছেন এবং তিনিই ছিলেন প্রথম ভারতীয়, যিনি কলকাতায় পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে ব্যবসায়িক হিসাব এবং ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করেন। Historical Society of Massachusetts এবং সালেম-এর পিবডি মিউজিয়ামসহ (Peabody) নিউ ইংল্যান্ডের অন্যান্য সামুদ্রিক বাণিজ্য সংক্রান্ত সংরক্ষণাগারে রামদুলাল দের সঙ্গে সম্পাদিত বাণিজ্যিক লেনদেনের অসংখ্য নিদর্শন সংরক্ষিত আছে।
কেবলমাত্র ব্যবসা ক্ষেত্রেই নয়, ধর্মীয় ও ইহজাগতিক অন্যান্য কাজের জন্য রামদুলাল দে সমকালীন বাঙালিদের কাছে একজন অত্যন্ত সম্মানীত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি কলকাতায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠায় সর্বাধিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। উনিশ শতকের প্রথম পর্বে কলকাতার সকল ধরণের শিক্ষা মূলক, জনসেবামূলক এবং অন্যান্য সামাজিক কর্মকান্ড রাম দুলাল দে’র সহযোগিতা লাভ করেছে। মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর পেনশনের সমুদয় অর্থ তাঁকে ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করেছেন এমন বয়স্ক কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ করে যান।
১৮২৫ সালে রামদুলাল দের মৃত্যুর পর সালেম-এর ইস্ট ইন্ডিয়া মেরিন সোসাইটির সদস্যগণ শোকপ্রকাশ করেন। ১৮৪০ সাল পর্যন্ত তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভালভাবেই চলতে থাকে। কিন্তু তারপর থেকে এ প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে পারিবারিক কলহের সূত্রপাত হয়। ফলে ব্যবসায় অধোগতি দেখা দেয় এবং ১৮৬০ সালের দিকে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। [সিরাজুল ইসলাম]