দীক্ষিত, কে.এন
দীক্ষিত', 'কে.এন (১৮৮৯-১৯৪৪) ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের মহাপরিচালক (মার্চ ২১, ১৯৩৭-১৯৪৪ পর্যন্ত)। রায় বাহাদুর কাশীনাথ নারায়ণ দীক্ষিত-এর জন্ম ১৮৮৯ সালে। ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগে মহাপরিচালক পদে যোগদানের পূর্বে তিনি ভারতীয় জাদুঘরের প্রত্নতত্ত্ব শাখার সুপারিনটেনডেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন প্রদেশের সরকারি এপিগ্রাফিস্ট ও ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের উপপরিচালক পদে কাজ করেন। তাঁর সময়েই ভারতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ সম্পন্ন হয় এবং এ কাজে অংশ গ্রহণের জন্য তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করেন।
দীক্ষিত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, ভারতের অজ্ঞাত অতীতকে প্রকাশ্যে আনার জন্য এ বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কর্মকান্ডের সীমাবদ্ধ চৌহদ্দি থেকে বের করে আনা প্রয়োজন। বিশেষ করে বিজ্ঞ সমাজ থেকে তুলে এনে মুক্তভাবে ও ব্যাপকহারে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ের ব্যাপক গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর নামে দক্ষিণ দিনাজপুর-এর (মালদা, পশ্চিমবঙ্গ) ভাংড়ার প্রাচীন প্রত্নস্থল খননকার্যের অনুমতি সংক্রান্ত লাইসেন্স ইস্যু করেন এবং এ প্রক্রিয়ায় এটি ছিল প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য সম্পাদনের জন্য নিয়োজিত ভারতের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়।
দীক্ষিত কেবলমাত্র প্রাদেশিক জাদুঘরসমূহের সঙ্গে তাঁর বিভাগের যোগাযোগ রক্ষার প্রচেষ্টা চালাননি বরং তিনি ভারতের অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সমূহের সঙ্গেও যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন প্রত্নবস্ত্ত দান ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আজমীরের রাজপুতনা জাদুঘররের উন্নয়নে তাঁর ক্ষুদ্র অবদান রাখার চেষ্টা করেন। দীক্ষিত ধরওয়ারে (অথবা, ধরওয়াড়, কানাড়া রাষ্ট্র, ভারত) কানাড়া রিসার্চ সোসাইটি’ ও গুজরাটে ‘প্রাগৈতিহাসিক গবেষণা অভিযান’ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা দেন।
১৯৩৮ সালের প্রারম্ভেই দীক্ষতের পরামর্শ অনুযায়ী ভারতের প্রত্নতত্ত্ববিদদের সুবিধার প্রদানের জন্য বিদেশ থেকে দক্ষ বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানানো প্রয়োজন বলে আলোচনার শুরু হয়। প্রস্তাবটিতে কে.এন দীক্ষিত কার্যত সাড়া দেন। তিনি মনে করতেন যে, বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের সদস্যদের খননকার্যের জন্য অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে প্রশিক্ষিত করে তোলা প্রয়োজন। দীক্ষিতের তত্ত্বাবধানে ১৯৪০-৪৪ সালে উত্তর প্রদেশের বেয়ারলি জেলার অহিচ্ছত্র প্রত্নস্থলে একটা বড় ধরনের খননকাজ সম্পন্ন করা হয়। এতে প্রাপ্ত সিরামিকের তৈজষপত্রের টাইপোলজিক্যাল শ্রেণিকরণের উপর বেশি জোর দেওয়া হয় যা দেড় হাজার বছরেরও পুরনো। সুপরিচিত মহেঞ্জোদারো প্রত্নস্থল খনন কাজে স্যার জন মার্শালের সঙ্গে তিনিও একজন সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। দীক্ষিত বৃহত্তর পাহাড়পুরের (রাজশাহীর, বাংলাদেশ) সূতপ খনন করেন, যার মাধ্যমে গুপ্ত ও পাল যুগের পোড়ামাটির ফলক সংস্থাপিত বাংলার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহত্তম প্রাচীন মন্দির জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়। অহিচ্ছত্রে প্রাপ্ত বৃহদাকার পোড়ামাটির ফলক-এর অনুরূপ পাহাড়পুরে প্রাপ্ত ফলক থেকে উক্ত সময়ে পোড়া মাটির ফলক তৈরির যে নতুন ধারার শিল্প গড়ে উঠেছিলো তা অনুমান করা যায়। ১৯৪৪ সালে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার অল্প পরেই কে.এন দীক্ষিত-এর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুতে একটি যুগের অবসান হয় ও স্যার জন মার্শালের উত্থানে সঙ্গে নতুন যুগের সূচনা ঘটে।
কে.এন দীক্ষিতের উল্লেখযোগ্য প্রকাশনাসমূহের মধ্যে রয়েছে, Six Sculptures from Mahoba, 1921; Excavations at Paharpur, Bengal, 1938; The Progress of Archaeology in India During the Past Twenty-five Years, 1939; Prehistoric Civilization of the Indus Valley, 1939| [সাইফুদ্দিন চৌধুরী]