দত্ত, হিমাংশুকুমার
দত্ত', 'হিমাংশুকুমার (১৯০৮-১৯৪৪) সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পী। কুমিল্লা শহরে তাঁর জন্ম। তিনি কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা (১৯২৪) এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। তাঁর মা ছিলেন একজন সুগায়িকা। এ কারণে শৈশব থেকেই হিমাংশুকুমার সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং মায়ের নিকট সঙ্গীতে তালিম নিতে থাকেন। তাঁর পিতাও ছিলেন একজন সঙ্গীতপ্রিয় মানুষ। পিতার উৎসাহ এবং মায়ের তালিমে ঘরোয়াভাবে হিমাংশুকুমারের সঙ্গীতজীবন গড়ে ওঠে। কুমিল্লার ভজনগানে দক্ষ ছিলেন। শৈশবেই তিনি ভজন গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন; পরে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়নকালে তাঁর সঙ্গীতখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ শতকের ত্রিশের দশকে আধুনিক বাংলা গানে রবীন্দ্রেতর যে ধারা গড়ে ওঠে, হিমাংশুকুমার তার সুরনির্মাণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তিনি রাগসঙ্গীতেও দক্ষ ছিলেন, তাই তাঁর রচিত সুরে রাগসঙ্গীতের প্রাধান্য ছিল। করুণরসের ব্যবহার ছিল তাঁর সুর রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য, তাই তাঁর রচিত সুর সকলকে গভীরভাবে স্পর্শ করত। মীড় ও বিস্তারের চমৎকার প্রয়োগহেতু তাঁর সুরে হূদয়ের অবেগ, মাধুর্য ও কোমল অনুভূতি প্রকাশ পেত।
হিমাংশুকুমারের সঙ্গীতজীবনে প্রথম থেকেই যুক্ত ছিলেন সিলেটের গীতিকার সহপাঠী সুবোধ পুরকায়স্থ। হিমাংশুকুমার সুবোধ পুরকায়স্থের অধিকাংশ গানে সুরসংযোজনা করেন। সুবোধ পুরকায়স্থের বাণী এবং হিমাংশুকুমারের সুর তখন বাংলা কাব্যগীতির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। হিমাংশুকুমার অজয় ভট্টাচার্য এবং বিনয় মুখোপাধ্যায়ের অনেক গানেও সুরসংযোজনা করেন, যা তাঁর সুরমাধুর্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে। হিমাংশুকুমারের জীবন খুব দীর্ঘ ছিল না। স্বল্পপরিসর জীবনে তিনি বাংলা সঙ্গীতে যে অসামান্য অবদান রেখেছেন, তার জন্য পূর্ববঙ্গ সারস্বত সমাজ তাঁকে ‘সুরসাগর’ উপাধিতে ভূষিত করে। [মোবারক হোসেন খান]