টিকটিকিজাতীয় প্রাণী
টিকটিকিজাতীয় প্রাণী (Lizard) সরীসৃপ দলের চতুষ্পদ প্রাণী। এরা Lacertilia বর্গের অন্তর্ভুক্ত। এদের দেহ শুষ্ক, অাঁশ অথবা গুটিকা দ্বারা আবৃত। এরা দিবাচর কিংবা নিশাচর। বাংলাদেশে টিকটিকির ১৮টি প্রজাতি রয়েছে। প্রজাতিগুলি চারটি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। গোত্রগুলি হচ্ছে Gekkonidae, Agamidae, Scincidae এবং Varanidae।
তক্ষক Gekko gecko, gekkonid-এর মধ্যে সবচেয়ে বড়। এদের ত্বক নরম ও অাঁচিলযুক্ত। তুন্ড (snout) থেকে লেজের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তক্ষকের দৈর্ঘ্য ২০ সেমি। দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই তক্ষক পাওয়া যায়। এরা গাছের কোটর, ফাটল ও অন্ধকারে বাস করে এবং ভারি ও উচ্চস্বরে ‘তক্ষক’ বলে ডাকে। বাড়িঘরে বসবাসকারী টিকটিকিদের (House lizard) বাংলাদেশে মোট ৪টি প্রজাতি আছে। এর মধ্যে Hemidactylus bowringii সাধারণত যমুনা নদীর পূর্ব অঞ্চলে দেখা যায়। H. brookii দৈর্ঘ্য ১৪ সেমি। বাংলাদেশের সব জায়গায় এদের দেখা যায়। H. flaviviridis গৃহবাসী টিকটিকিদের মধ্যে সর্ববৃহৎ। এদের তুন্ড (snout) থেকে লেজের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ২০ সেমি। সাধারণত রাজশাহী, খুলনা এবং বরিশাল বিভাগে এদের পাওয়া যায়। H. frenatus হলুদাভ রঙের, এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ সেমি। বাংলাদেশের সব জায়গায় এদের দেখা যায়। পুরুষ টিকটিকি জোরে ডাকে এবং স্ত্রী টিকটিকি কিছুটা আস্তে ‘ঠিক ঠিক’ শব্দ করে।
উড়ন্ত টিকটিকি Draco blanfordii-এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ সেমি। সিলেট ও চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে কদাচিৎ দেখা যায়। বাংলাদেশে রক্তচোষার ৩টি প্রজাতি আছে। Calotes versicolor সাধারণ রক্তচোষা (Common garden lizard), এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ সেমি। বাংলাদেশে প্রায় সর্বত্র এদের দেখা যায়। C. jerdoni সবুজ রক্তচোষা (Garden lizard) নামে পরিচিত। তুন্ড থেকে লেজের শুরু পর্যন্ত এদের দৈর্ঘ্য ১০ সেমি এবং লেজ ৩০ সেমি। বাংলাদেশে মিশ্র চিরহরিৎ বনে এদের দেখা যায়। C. rouxi জঙ্গল রক্তচোষা (Forest Calotes), এদের তুন্ড থেকে লেজের শুরু পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৮ সেমি এবং লেজ ২০ সেমি।
অঞ্জন (Common Skink), Mabuya carinata এর দৈর্ঘ্য লেজসহ ২০-২৪ সেমি। বাংলাদেশের সব জায়গায় এদের দেখা যায়। দাগটানা অঞ্জন (Stripped Skink), M. dissimilis দিনাজপুরে পাওয়া যায়। M. macularius বাংলাদেশে মিশ্র চিরহরিৎ বনে এদের দেখা যায়। Lygosoma punctatus বাংলাদেশে মিশ্র চিরহরিৎ বনে পাওয়া যায়। সর্প অঞ্জন (Snake Skink) L. vosmaeri বাংলাদেশে মিশ্র চিরহরিৎ বনে দেখা যায়।
গুইসাপ (Monitor lizard) Varanidae গোত্রের সদস্য। এ সরীসৃপের দেহ শুষ্ক এবং অপেক্ষাকৃত বড় আকৃতির। গুইসাপের বহিরাকৃতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গুটিকা দ্বারা আবৃত সমস্ত দেহ, উন্নত তীক্ষ্ণ নখরযুক্ত পাঁচ আঙুলবিশিষ্ট পদ, অন্যান্য সরীসৃপের তুলনায় নমনীয় দীর্ঘ গ্রীবা, অভঙ্গুর লেজ, চোয়ালের হাড়ে সংযুক্ত পিছন ফেরানো বক্রদাঁত এবং দ্বিখন্ডিত সরু, সঙ্কোচন প্রসারণশীল জিহবা। এরা অধিকাংশ স্থলবাসী এবং দিবাচর ও দক্ষ আরোহী। গুইসাপ কখনও কখনও পানিতে সাঁতার কাটে। মাটির গর্ত, উইঢিবি, গাছের কোটর এবং ফাটলে এরা বাস করে। এরা জীবিত এবং মৃত প্রাণী খায়। বাংলাদেশে এদের তিনটি প্রজাতি পাওয়া যায়।
Varanus bengalensis গুইসাপ দেশের সর্বত্র বন, বাস্ত্তবন, বৃক্ষময় ভূমি এবং কৃষি জমিতে পাওয়া যায়। এরা মৃতভোজী ও গলিত মাংসভোজী। ছোট ছোট অমেরুদন্ডী, মাছ, উভচর, ছোট সরীসৃপ, পাখি এবং ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীদের এরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। প্রাপ্তবয়স্ক গুইসাপ প্রায় ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
সোনাগুই Varanus flavescens হলুদাভ বাদামি রঙের। এদের অঙ্কীয়দেশ হলুদাভ। প্রাপ্তবয়স্ক সোনাগুই প্রায় ৯০ সেমি লম্বা। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র এদের পাওয়া যায়।
কালোগুই, Varanus salvator দেহের উপরিভাগ গাঢ় বাদামি অথবা কালচে রঙের, অঙ্কীয়দেশ হলুদ। কালোগুই সাধারণত দেশের পূর্ব, দক্ষিণ এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলসমূহে পাওয়া যায়। ফরিদপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলাতেও এদের দেখা গেছে। এরা দক্ষ সাঁতারু। নদী ও খালের ধারের বন ও ঝোপের মধ্যে এদের অধিকাংশকে দেখা যায়। এরা কীটপতঙ্গ, মাছ, পাখি এবং ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। প্রাপ্তবয়স্ক কালোগুই প্রায় ২ মিটার লম্বা হয়। [এম ফরিদ আহসান]