ঝিনুক
ঝিনুক (Clam and mussel) দুই খোলকবিশিষ্ট অমেরুদন্ডী জলজ (Mollusca পর্বের) প্রাণী। প্রধানত সামুদ্রিক হলেও কিছু প্রজাতি স্বাদুপানির বাসিন্দা। Mytilus edulis জাতীয় কিছু ঝিনুক যে কোনো আশ্রয় অাঁকড়ে থাকে। Lamellidens marginalis নামের ঝিনুক নদী, খাল, বিল, হাওর, বাঁওড় সর্বত্র প্রচুর সংখ্যায় দেখা যায়। এগুলি পরিস্রুতভুক (filter feeder) আর তাতে খাদ্য ও অক্সিজেন গ্রহণ একই সঙ্গে চলে। Meretrix গণের ঝিনুক সমুদ্রের মেঝেতে বাস করে। এদের খোলক ত্রিকোণ-ডিম্বাকার। ঝিনুকের নরম দেহটি একজোড়া শক্ত খোলকে আবৃত থাকে। খোলকদ্বয় একপাশে কবজার মতো যুক্ত থাকে। এদের মাথা ও চোখ নেই। প্রজাতিভেদে আকার, আকৃতি ও বর্ণে এদের পার্থক্য হয়। এটি লম্বায় ০.১-১৩৭ সেমি হয়। বৃহত্তর ঝিনকের ওজন কয়েক কেজি পর্যন্ত হয়। এরা ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ খায়। সিলিয়ার মাধ্যমে পানি শোষণ করে তা থেকে জৈব পদার্থ গ্রহণ করে। স্ত্রী ঝিনুক বছরে প্রায় ৫০ কোটি ডিম পাড়ে। প্রায় দশ ঘণ্টায় বাচ্চা ফোটে। ঝিনুক ৬-২০ বছর বাঁচে।
বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন মোহনায় ঝিনুকের অনেক প্রজাতি রয়েছে। কোনো কোনো প্রজাতি মুক্তা উৎপাদনে সক্ষম। এদের খোলস থেকে চুন তৈরি হয়। আবার এদের কোনো কোনো প্রজাতি মানুষের প্রিয় খাদ্য। মুক্তা ও চুনের জন্য ঝিনুকের যথেষ্ট সমাদর রয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্রকূলে এদের সহজলভ্যতা সত্ত্বেও এগুলি আহরণের প্রতি ততটা দৃষ্টি দেওয়া হয় নি। মাছে আসক্ত বাংলাদেশীরা এ খাদ্যবস্ত্তর প্রতি এখনও আকৃষ্ট নয়। স্থানীয় কেউ কেউ এগুলি খায় এবং মাছের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে। সম্প্রতি শামুক-ঝিনুকের মাংস চিংড়ি ও মাছের খাবারের উপকরণ হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। খোলক নানা ধরনের সাজসজ্জার উপকরণ তৈরিতে ব্যবহূত হয়। তাই এগুলি মূল্যবান সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত।
ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা ও দূরপ্রাচ্যসহ অনেক দেশেই শামুক-ঝিনুক সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে সমাদৃত। এগুলি উন্নয়নশীল দেশগুলিতেও মূল্যবান প্রোটিনের উৎসরূপে ব্যবহূত হতে পারে। [এ.কে.এম আব্দুল মতিন]