জলঢাকা উপজেলা
জলঢাকা উপজেলা (নীলফামারী জেলা) আয়তন: ৩০৩.৫২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৫৭´ থেকে ২৬°০৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫০´ থেকে ৮৯°০৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ডিমলা উপজেলা, দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) উপজেলা, পূর্বে হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) উপজেলা, পশ্চিমে নীলফামারী সদর ও ডোমার উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৭৪৭৩৬; পুরুষ ১৪১৭১৫, মহিলা ১৩৩০২১। মুসলিম ২১৭৯৪৪, হিন্দু ৫৬৪৮০, বৌদ্ধ ৩৮, খ্রিস্টান ১১৩ এবং অন্যান্য ৩৬১।
জলাশয় প্রধান নদী: তিস্তা, যমুনেশ্বরী, বুল্লাই ও ঘাঘট। মইয়া বিল ও গ্যাবরেল বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন জলঢাকা থানা গঠিত হয় ১৯১১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ১২ | ৬৯ | ৬৯ | ১৪৮৮৭ | ২৫৯৮৪৯ | ৯০৫ | ৪৯.০ | ৩২.১ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
১১.৬৬ | ৩ | ১৪৮৮৭ | ১২৭৭ | ৪৯.০ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
পুরুষ | মহিলা | |||
কাঁঠালী ৫৮ | ৫৩৬৬ | ১০০০৮ | ৯২১৫ | ৩২.৮০ |
কৈমারী ৫১ | ৮৫৪৮ | ১৭৮৮১ | ১৬৯৪৩ | ২৯.৭০ |
খুটামারা ৬৫ | ৬৫৫৫ | ১৪৯৭৯ | ১৩৭৯৭ | ৩০.৪০ |
গোলনা ৩৬ | ৭৫৩৯ | ১১৩৭৯ | ১০৬৫০ | ৩৪.২৯ |
গোলমুন্ডা ২৯ | ৩৮৬৫ | ১১০০৩ | ১০৬২৮ | ৩১.৭০ |
জলঢাকা ৪৩ | ৬৯৬৮ | ১৬৫৫১ | ১৫১১৮ | ৪৩.০০ |
দয়াবাড়ী ১৪ | ৫৪৯৯ | ৫১৬৯ | ৪৮৫৬ | ২৮.৮১ |
ধর্মপাল ২১ | ৬৩৯২ | ১০১৮২ | ৯৫৪৭ | ৩৭.৩২ |
বালাগ্রাম ১৩ | ৬৬৬২ | ১১৯০৮ | ১১৩২১ | ৩১.৪৮ |
মীরগঞ্জ ৮০ | ৫৩৪২ | ১১৭৮০ | ১০৮৩৪ | ৩১.৫৫ |
শিমুলবাড়ী ৮৭ | ৬২০০ | ১০৫৬৪ | ১০১৭৮ | ৩৩.৭৬ |
শৌলমারী ৯৪ | ৬০৬৩ | ১০৩১১ | ৯৯৩৪ | ২৭.৫২ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ রাজা ধর্মপালের গড় (ধর্মপাল ইউনিয়ন), রাজা হরিশচন্দ্রের পাট (খুটামারা ইউনিয়ন), ভীমের ধাপ (গোলনা ইউনিয়ন)।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে পাকসেনারা জলঢাকা হাইস্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করে এবং স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় নিরীহ লোকদের ধরে এনে নির্মমভাবে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ২ (কালীগঞ্জ এবং জলঢাকা হাই স্কুলের পিছনে)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩১৭, মন্দির ২৫, মাযার ২, তীর্থস্থান ১।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৩.০%; পুরুষ ৩৮.৯%, মহিলা ২৬.৮%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: জলঢাকা ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৭২), রাবেয়া চৌধুরী ডিগ্রি মহিলা মহাবিদ্যালয় (১৯৯৪), জলঢাকা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট (১৯৯৫), জলঢাকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), জলঢাকা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৪০), শিমুলবাড়ী এস সি উচ্চ বিদ্যালয়, গোলমুন্ডা ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১৯)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী অবলুপ্ত: সাপ্তাহিক জলতরঙ্গ ও সাপ্তাহিক জলকথা।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ১৯, নাট্যদল ২, নাট্যমঞ্চ ১, সিনেমা হল ৪, মহিলা সংগঠন ৬৪, খেলার মাঠ ৪৫, সংগীত একাডেমি ২।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৮০.১৫%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫৪%, ব্যবসা ৮.৩৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.০৬%, চাকরি ৩.০৫%, নির্মাণ ০.৫২%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১০% এবং অন্যান্য ৩.০৫%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬০.০৯%, ভূমিহীন ৩৯.৯১%। শহরে ৬৭.০৪% এবং গ্রামে ৫৯.৬৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, তামাক, গম, আলু, পাট, ভুট্টা, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, চিনা, যব, কাউন, মিষ্টি আলু, অড়হর, কাপাস তুলা।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, জাম, কলা, পেঁপে, লিচু।
মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২৪৪০, গবাদিপশু ২৮, হাঁস-মুরগি ১২, নার্সারি ৩৫।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫৫৪ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪০০ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল, আইস ফ্যাক্টরি, রাইসমিল, স‘মিল, কোল্ডস্টোরেজ, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৮৫, মেলা ৩। জলঢাকা হাট, মীরগঞ্জ হাট, কৈমারী হাট এবং টটুয়া মেলা ও বালাগ্রাম চন্ডীহাটি মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য তামাক, আদা, ভুট্টা, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৮.০২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৫.৫৫%, পুকুর ০.৪৯%, ট্যাপ ০.৩৬% এবং অন্যান্য ১৩.৬০%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১২.২১% (গ্রামে ১০.৭১% ও শহরে ৩৭.১৬%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২২.৮৮% (গ্রামে ২৩.০১% ও শহরে ২০.৬৫%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৬৪.৯১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্র ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলায় অনেক লোক প্রাণ হারায়। এছাড়া ১৯৯৮ সালের বন্যায় ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, ফসল ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, জলঢাকা সমাজ কল্যাণ সংস্থা। [বিবেকানন্দ মহন্ত]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; জলঢাকা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।