চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা (চুয়াডাঙ্গা জেলা) আয়তন: ২৮৯.৫৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°২৯´ থেকে ২৩°৪২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৭´ থেকে ৮৯°০০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে আলমডাঙ্গা উপজেলা, দক্ষিণে জীবননগর উপজেলা, পূর্বে ঝিনাইদহ সদর, কোটচাঁদপুর ও হরিণাকুন্ড উপজেলা, পশ্চিমে দামুড়দা উপজেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।
জনসংখ্যা ২৭৮৭২৬; পুরুষ ১৪৩২৪৯, মহিলা ১৩৫৪৭৭। মুসলিম ২৭০৭৪৮, হিন্দু ৭৭২২, বৌদ্ধ ১৬১, খ্রিস্টান ১২ এবং অন্যান্য ৮৩।
জলাশয় প্রধান নদী: মাথাভাঙ্গা, নবগঙ্গা, চিত্রা, ভৈরব।
প্রশাসন চুয়াডাঙ্গা উপজেলা গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৬০ সালে এবং কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৬৫ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৭ | ৯০ | ১২৯ | ১১৩৯২৮ | ১৬৪৭৯৮ | ৯৬২ | ৫১.৫৯ | ৩২.০৮ |
পৌরসভা | |||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার(%) |
৩৭.৩৭ | ৯ | ৪১ | ৭৭৪২৯ | ২০৭২ | ৫৫.৩৪ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
৩১.৬৪ | ৮ | ৩৬৫০২ | ১১৫৪ | ৪২.৯৯ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
পুরুষ | মহিলা | |||
আলোকদিয়া ১১ | ৪৭৯৮ | ১২৩৬৪ | ১১৪৯৩ | ৪২.৭৭ |
কুতুবপুর ৪৭ | ১০৩৯৫ | ১৫৯৪৯ | ১৪৭৫৪ | ৩৭.৭৪ |
তিতুদহ ৮৩ | ১১৫৪৪ | ১৮৮৬৭ | ১৭৭১০ | ২৮.৩০ |
পদ্মাবিলা ৬২ | ৫৯৯৯ | ৯১৫৭ | ৮৭৯৫ | ৩৪.৩২ |
বেগমপুর ২৩ | ১৪৩৬৬ | ১৯৬৩১ | ১৮৮৩০ | ২৮.৯০ |
মোমিনপুর ৫৯ | ৯৭৯৩ | ৬৬৩১ | ৬৫৩৩ | ৩৪.৮৯ |
শংকরচন্দ্র ৭১ | ১১৭৩৬ | ২০৮৭৮ | ১৯৭০৮ | ৩৫.৭২ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ তিনগম্বুজ বিশিষ্ট চুয়াডাঙ্গা বড় মসজিদ, ঠাকুরপুর মসজিদ (১৬৯৮), বড় শলুয়া মসজিদ।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ছিল পাকবাহিনীর হেড কোয়ার্টার। সদর হাসপাতালের পিছনে বর্তমান শান্তিপাড়ায় পাকবাহিনী প্রায় ৩০০ নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১ (শান্তিপাড়া)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২১৮, মন্দির ৩, গির্জা ১, মাজার ১০। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বড় মসজিদ, ঠাকুরপুর মসজিদ।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪০.০৮%; পুরুষ ৪৩.৩৮%, মহিলা ৩৬.৬১%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৭, কারিগরি বিদ্যালয় ১, মাদ্রাসা ৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ভি.জে (ভিক্টোরিয়া জুবিলি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮০), বদরগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসা (১৯৬২)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: মাথাভাঙ্গা, প্রথম রাজধানী; সাপ্তাহিক: চুয়াডাঙ্গা দর্পণ, চুয়াডাঙ্গা সমাচার, দিন বদলের কাগজ।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ৩৫, নাট্যদল ১১, সিনেমা হল ৩, নাট্যমঞ্চ ২, মহিলা সংগঠন ২, প্রেসক্লাব ১।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৬.৮০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.২৯%, শিল্প ১.৪০%, ব্যবসা ১৬.২০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৫.২৪%, চাকরি ৭.৯২%, নির্মাণ ১.৯৬%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৪৬% এবং অন্যান্য ৬.৫৬%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫১.৯৪%, ভূমিহীন ৪৮.০৬%। শহরে ৪৪.৯১% এবং গ্রামে ৫৬.০৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, আখ, গম, পান, তুলা, ভুট্টা, তৈলবীজ, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, তামাক, আউশ ধান।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, নারিকেল, কাঁঠাল, পেয়ারা, কলা, পেঁপে।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ১১, হাঁস-মুরগি ৩৫।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২৭.০৪ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪০.১৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৫৪.২১ কিমি; রেলপথ ১২.৭০ কিমি। ব্রিজ ৬১, কালভার্ট ৪৪৭।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ধানকল ১৭, চিড়াকল ৭, ডালকল ৫, আটাকল ৩, মেটাল ওয়ার্কসপ ২২, বিস্কুট কারখানা ১৫, জুতা কারখানা ২।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৭। সরোজগঞ্জ বাজার, ডিঙ্গেদহ বাজার, হিজলগাড়ি বাজার, কেদারগঞ্জ বাজার, আলোকদিয়া বাজার, গোকুলখালি বাজার, ভালাইপুর বাজার, বড় বাজার এবং ডিঙ্গেদাহর মেরেটি মেলা ও গড়াইটুপির মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য চাল, কলা, পান, আম, কাঁঠাল, খেজুর গুড়, বিস্কুট, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবকটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৫.৫৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৯.১৬%, পুকুর ০.০৬%, ট্যাপ ৭.৬১% এবং অন্যান্য ৩.১৭%। এ উপজেলায় অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৪.৬৯% (শহরে ১৬.২৫% এবং গ্রামে ৩৭.৭৫%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪১.০৪% (শহরে ৩৮.৩৭% এবং গ্রামে ৪৫.১৫%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩৪.২৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র জেলা হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৭, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ১, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ১, সংক্রামক ব্যাধি হাসাপাতাল ১, চক্ষু হাসপাতাল ১, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১ কমিউনিটি ক্লিনিক ২১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭০, ১৯৭১, ১৯৮৪, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০১ সালের বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ উপজেলায় ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ফসল ও জনজীবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এনজিও ব্র্যাক, কেয়ার, আশা, ওয়েভ, চেতনা, প্রচেষ্টা। [মোঃ ফয়সল কিবরিয়া]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।