খাঁ, ওস্তাদ জমিরুদ্দিন
খাঁ, ওস্তাদ জমিরুদ্দিন (?-১৯৩২) ঠুমরি শিল্পী। পিতা মসিদ খাঁ আম্বালাওয়ালে ছিলেন একজন বিখ্যাত ধ্রুপদ শিল্পী। উনিশ শতকের শেষভাগে মসিদ খাঁ কলকাতায় বসবাস শুরু করেন এবং সেখানেই জমিরউদ্দিনের জন্ম হয়। জমিরুদ্দিন প্রাথমিক পর্যায়ে বড় ভাই গোলাম জানের কাছে সঙ্গীতে তালিম নেন। পরে তিনি পিতা মসিদ খাঁর নিকট ধ্রুপদ সঙ্গীতে তালিম নেন। পিতার নিকট ধ্রুপদ শিখে তিনি অল্পকালের মধ্যেই খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি চমৎকার ধ্রুপদ গাইতেন। ধ্রুপদের দুরূহ লয় ও ছন্দের কাজে তাঁর অসাধারণ পারদর্শিতা ছিল।
পিতার মৃত্যুর পর খলিফা বাদল খাঁর নিকট তিনি খেয়ালে তালিম নেন। যে ঠুমরি গানের জন্য জমিরুদ্দিন বাংলা সঙ্গীত জগতে বিখ্যাত হয়ে আছেন, তার প্রথম তালিম গ্রহণ করেন সেকালের বিখ্যাত বাইজি ও সঙ্গীত পটিয়সী গহরজানের নিকট থেকে। পরে এ বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করেন কিংবদন্তিতুল্য ঠুমরি গায়ক মৈজুদ্দিনের নিকট। জমিরুদ্দিন মৈজুদ্দিনের বিশাল ঠুমরি ও দাদরার ধারায় নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। জমিরুদ্দিন ছিলেন অসামান্য প্রতিভাবান সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি কলকাতা শহরে ‘ঠুমরির রাজা’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
জমিরুদ্দিন এইচএমভি গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে মুখ্য প্রশিক্ষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। সঙ্গীতে তাঁর অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ‘প্রফেসর’ হিসেবে পরিচিত হন। তিনিই প্রথম সঙ্গীতে বৈচিত্র্য আনার লক্ষে গানের কথার মাঝে যন্ত্রসঙ্গীতের ব্যবহার শুরু করেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙ্গে interlude music বাজানোর প্রথা প্রবর্তন করেন। আধুনিক বাংলা গানের উন্মেষপর্বে তার সুরনির্মাণে জমিরউদ্দিনের বিশেষ প্রভাব ছিল। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে ভ্রাতুষ্পুত্র কাদের জামেরীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া আঙুরবালা, ইন্দুবালা, হরমতি কমল দাশগুপ্ত, সুবল দাশগুপ্ত, কৃষ্ণচন্দ্র দে (অন্ধ গায়ক), প্রমুখ প্রতিষ্ঠিত শিল্পী-সুরকারবৃন্দ তাঁর কাছে সঙ্গীতে তালিম নেন। সুরকার, সঙ্গীত পরিবেশক শিল্পী তৈরি করে সঙ্গীত ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে ওস্তাদ জমিরুদ্দিন খাঁর অবদান অপরিসীম। [মোবারক হোসেন খান]