কাশিয়ানী উপজেলা
কাশিয়ানী উপজেলা (গোপালগঞ্জ জেলা) আয়তন: ২৯৯.৬৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০৫´ থেকে ২৩°১৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪১´ থেকে ৮৯°৫৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বোয়ালমারী উপজেলা, দক্ষিণে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা, পূর্বে মুকসুদপুর ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা, পশ্চিমে লোহাগড়া ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা।
জনসংখ্যা ২২৮৬৪৭; পুরুষ ১১৪৪১৫, মহিলা ১১৪২৩২। মুসলিম ১৭৫৬৪৭, হিন্দু ৫২৮২১, বৌদ্ধ ১৪৫ এবং অন্যান্য ৪০।
জলাশয় মধুমতি ও বারাসিয়া নদী এবং বাসারতের খাল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯৩৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ১৪ | ১৫১ | ১৬৩ | ৫৬৪৫ | ২২৩০০২ | ৭৬৩ | ৬৪.২ | ৫৪.৮ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
১.৬৭ | ১ | ৫৬৪৫ | ৩৩৮০ | ৬৭.৭ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন(একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার(%) | |
|| || পুরুষ || মহিলা || | ||||
ওড়াকান্দি ৫৪ | ৪৩৪৭ | ৭২৬৫ | ৭৩৪৪ | ৫৫.৫০ |
কাশিয়ানী ২৭ | ৫২৯১ | ১৩০৮৭ | ১৩২৯০ | ৫৯.৪১ |
নিজামকান্দি ৪৭ | ৫০৮৩ | ৬২৭৯ | ৫৬৯৬ | ৪৬.৮৫ |
পুইশুর ৬৭ | ৩৯১৩ | ৪৪০৭ | ৪৫১৫ | ৫৫.৫৩ |
পারুলিয়া ৬১ | ৪০৯৩ | ৪৮৮০ | ৫২৩২ | ৪৬.২৭ |
ফুকরা ১৩ | ৬৬৫৪ | ১২৩০০ | ১২৩৬৬ | ৪৮.২৩ |
বেথুরি ০৬ | ৪৯৯৩ | ৭০৯৮ | ৬৪৩২ | ৫৯.২০ |
মহেশপুর ৪০ | ৮৯৬৩ | ১৬৭৫৪ | ১৭২৬১ | ৫০.৫৮ |
মামুদপুর ৩৩ | ৩৯৯৮ | ৬১৮৩ | ৬৩০৭ | ৫৩.১০ |
রাজপাট ৭৪ | ৪১৩৯ | ৬৮৬৮ | ৬৬৬১ | ৪৮.১২ |
রাতৈল ৮১ | ৬১১৬ | ১১১৫৫ | ১১৩২০ | ৫৭.৬৩ |
সাজৈল ৮৮ | ৬২৮৯ | ৯৫৭২ | ১০০১৫ | ৫৯.৫০ |
সিংগা ৯৪ | ৭২৬৭ | ৩৮৬৫ | ৩৫৬৯ | ৫০.১৮ |
হাতিয়ারা ২০ | ২৮৯৩ | ৪৭০২ | ৪২২৪ | ৫২.৬৭ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ শ্রী শ্রী হরিমন্দির।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ১৮৪৬ সালে কাশিয়ানী উপজেলায় নীলকররা ৩ জন বিদ্রোহী কৃষককে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ২ সেপ্টেম্বর ভাটিয়াপাড়া অয়ারলেস স্টেশনে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৫ অক্টোবর ভাটিয়াপাড়া অয়ারলেস স্টেশনে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। অক্টোবর মাসে তারাইল-ফুকরা নদীর পাড়ে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং আরও ৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে পাকবাহিনী ধরে নিয়ে গোপালগঞ্জ বধ্য ভূমিতে হত্যা করে। অক্টোবরের শেষের দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর এক লড়াইয়ে ৩০ জন পাকসেনা নিহত হয়। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে অন্যত্র এক লড়াইয়ে ১৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। ১৬, ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর ৩ দিন ব্যাপী লড়াইয়ে ৬ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ১৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র-সেনাদের কাছে ৪৯ জন পাকসেনা আত্মসমর্পণ করে। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় ফুকরা, ভাটিয়াপাড়া ও রাহুথড়ায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে শতাধিক পাকসেনা নিহত, ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ৫০ জন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ১ (ভাটিয়াপাড়া)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৯২, মন্দির ২৩৩, গির্জা ১, মাযার ১।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৩.৫%; পুরুষ ৫৬.৭%, মহিলা ৫০.৫%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫৬, মাদ্রাসা ১১, কেজি স্কুল ৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সরকারি এস.কে কলেজ (১৯৪২), এ আর আলী খান কলেজ (১৯৪২), ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলোজি (বি.এড কলেজ), মদন মোহন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), কাশিয়ানী গিরীশ চন্দ্র পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), ওড়াকান্দি হাইস্কুল (১৯০৯), কুমারিয়া লক্ষ্মীপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৪), সাজৈল গোপী মোহন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), রামদিয়া এস কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভাটিয়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জয়নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তিলছড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডেমরাকান্দী এন আই মাদ্রাসা, মাজড়া এম ইউ সিনিয়র মাদ্রাসা, জয়নগর সিনিয়র মাদ্রাসা।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: গ্রামাঞ্চল, প্রত্যয় (অনিয়মিত), বারাশিয়া (অনিয়মিত), রামদিয়া বার্তা (অবলুপ্ত); মাসিক: মতুয়া দর্পণ।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৯, সিনেমা হল ১, নাট্যদল ১, মহিলা সংগঠন ৩৩, ক্লাব ৫০, খেলার মাঠ ৬০, থিয়েটার ১, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৮, ক্রীড়া সংগঠন ৪, যুব সংগঠন ২৮।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬০.০১%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০৭%, শিল্প ০.৪৪%, ব্যবসা ১০.৭৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৬৯%, চাকরি ১৫.৩২%, নির্মাণ ০.৯৮%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৭০% এবং অন্যান্য ৫.৮১%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৫.৮৪%, ভূমিহীন ৩৪.১৬%। শহরে ৪৮.৯১% এবং গ্রামে ৬৬.২৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, সরিষা, পান, ডাল।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, অড়হর ও মিষ্টি আলু।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, জাম, কাঁঠাল, নারিকেল, কলা, পেঁপে।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২৪০, গবাদিপশু ১৩৪, হাঁস-মুরগি ২৫৬, নার্সারি ১২।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৫৬.৩৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৫৪.৮১ কিমি; রেলপথ ১১ কিমি; নৌপথ ২৮ নটিক্যাল মাইল।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা বরফকল, করাতকল।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, বুননশিল্প, লৌহশিল্প, বেতের কাজ, বাuঁশর কাজ, নকশি কাঁথা, নকশি পাখা।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩০, মেলা ১১। কাশিয়ানী হাট, ভাটিয়াপাড়া হাট, জয়নগর হাট, রামদিয়া হাট, ফুকরা হাট, পরাণপুর গরুর হাট, বাথানডাঙ্গা হাট, কুমারিয়া হাট এবং ওড়াকান্দি বারুণীর মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য মাছ, পান, ডাল, পাট।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিলবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৯.২৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ এ উপজেলার সিংগা, হাতিয়ারা, রাজপাট ইউনিয়নে পীট কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.৮৮%, ট্যাপ ০.২৩%, পুকুর ১.২৭% এবং অন্যান্য ৩.৬২%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪০.৫৬% (গ্রামে ৩৯.৭৪% এবং শহরে ৭১.৫৮%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫২.১৬% (গ্রামে ৫২.৮৯% এবং শহরে ২৪.৪১%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৭.২৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র্ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৬, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৮, ক্লিনিক ৪।
এনজিও সম্প্রীতি, ন্যাডো, ব্র্যাক, আশা। [মোঃ শাহ আলম]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কাশিয়ানী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।