হক, মুহম্মদ শামসউল
হক, মুহম্মদ শামসউল (১৯১০-২০০৬) শিক্ষাবিদ। ১৯১০ সালের ২ ডিসেম্বর তিনি কুমিলা জেলার লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম করিমুল হক এবং মাতার নাম মাহমুদা খাতুন।
১৯২৭ সালে তিনি পশ্চিমগাঁও বি.এন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ফেনী কলেজ থেকে ১৯২৯ সালে প্রথম বিভাগে আই.এ পাশ করেন। এরপর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৩১ সালে পলিটিক্যাল ইকোনমি ও পলিটিক্যাল ফিলোসফি বিভাগ থেকে বি.এ সম্মান ও ১৯৩৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৫-৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পোস্ট ওয়ার এডুকেশন রিফর্মস প্রোগ্রাম’-এর আওতায় প্রশিক্ষণ লাভ করেন।
১৯৩৪ সালে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনিক উচ্চ পদ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠানে গবেষণার সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন। অধ্যাপক হক ১৯৬৫-৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ১৯৭৫-৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।
তিনি ইন্সটিটিউট অব অ্যাডভান্সড প্রজেক্ট, ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টার, হলুলুলুতে ‘স্কলার-ইন রেসিডেন্ট’ ছিলেন (১৯৬৪-৬৫)। তিনি উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলারস স্মিথসনিয়ান ইনস্টিটিউশন, ওয়াশিংটন ডি.সি (১৯৭১-৭৩)-এর ফেলো; ন্যাশনাল কারিকুলাম কমিটির (১৯৭৫-৭৭) চেয়ারম্যান; পানিং কমিটি অব দি সোস্যাল সাইন্স রিসার্চ কাউন্সিল-এর চেয়ারম্যান (১৯৭৭-৮২); ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর রিসার্চ অন হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট-এর চেয়ারম্যান (১৯৭৭-৮৩); ন্যাশনাল কমিটি অন এক্সামিনেশন রিফরর্মস-এর চেয়ারম্যান (১৯৮৫-৮৬); ইউনেস্কো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপার্ট কমিটি অন ফাউন্ডেশন অব পলিসি অব ট্রেনিং অ্যাব্রড-এর সদস্য (প্যারিস, ১৯৭০); কমিটি অব ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন অব কমনওয়েলথ এডুকেশন কনফারেন্স-এর চেয়ারম্যান (নয়া দিললী, ১৯৬২); লিডার অব ডেলিগেশন অব দি কমনওয়েলথ এডুকেশন কনফারেন্স (লাগোস, ১৯৬৮); লিডার অব দি ডেলিগেশন টু টুয়েনটিফিফথ অ্যানিভারসারি এডুকেশন কনফারেন্স (লাগোস, ১৯৬৮); লিডার অব দি ডিলিগেশন টু টুয়েনটিফিফথ অ্যানিভারসারি অব ইকোসক (জেনেভা, ১৯৭০) অ্যান্ড ইউনেস্কো জেনারেল কনফারেন্স (প্যারিস, ১৯৭০) ছিলেন। তিনি একজিকিউটিভ কাউন্সিল অব দি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব সোসাল সায়েন্সেস, বাংলাদেশ-এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন (১৯৮৫-৮৬)। এ ছাড়াও, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্ট্যাডিজ-এর চেয়ারম্যান (১৯৭৮-৮৯) ও বোর্ড অব গভর্নরস অব দি বোর্ড অব ট্রাস্টিস অব দি বাংলাদেশ ন্যাশনাল মিউজিয়াম-এর চেয়ারম্যান (১৯৮৩-৮৬) হিসেবেও কাজ করেছেন।
অধ্যাপক মুহম্মদ শামসউল হক তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে শিক্ষার উন্নয়ন ভাবনায় সচেষ্ট ছিলেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ‘শিক্ষা প্রকল্পয়ন ও উন্নয়ন গবেষণা ফাউন্ডেশন’ গঠন করেন যাহা দেশে এ ধরনের প্রথম প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ক্যাম্পাসের পলাশী এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠান ভবনটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে।
শেষ জীবনে তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (১৯৬৯-৭১), বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী (১৯৭৮-৮২) এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য (১৯৭৭-৭৮) ছিলেন।
অধ্যাপক হকের লিখিত প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে Changing Education in England (1948); Compulsory Education in Pakistan (1954); Education and Development Strategy in South and South East Asia (1965); Pakistan New Education Policy (1970); Education Manpower and Development in South and South East Asia (1975); Education Manpower and Development in South and South East Asia (1976); The Patterns of Education in South and South-East Asia in Encyclopedia (New Edition); Education in German Encyclopedia LEXIKON DER PEDAGTOGIK (Verlag Herder); Higher Education and Employment in Bangladesh (co-author, 1983); South Asia Regional Co-operation: Its Underlying Concept, Problems and Promises in Future of South Asia (1985); Role of Education in Development based on lectures delivered at the Bangla Academy (1987); Bangladesh in International Politics: the Dilemmas of the Weak States (1993); Aid, Development and Diplomacy (Co-author, 2001); বিশ্ব-রাজনীতি ও বাংলাদেশ (২০০১) এবং বিকাশমান সমাজ ও শিক্ষা (১৯৮৭)।
২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক হকের মৃত্যু হয়। [কাজী সালেহ আহমেদ]