মৌলভীবাজার সদর উপজেলা

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা (মৌলভীবাজার জেলা)  আয়তন: ৩৪৪.৩৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২৪´ থেকে ২৪°৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৩৬´ থেকে ৯১°৫১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বালাগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলা, দক্ষিণে শ্রীমঙ্গল উপজেলা, পূর্বে রাজনগর ও কমলগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে নবীগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৮১৫৯৩; পুরুষ ১৪৫১৫১, মহিলা ১৩৬৪৪২। মুসলিম ২৩৫৬০৪, হিন্দু ৪৫৫০০, বৌদ্ধ ১৫৩, খ্রিস্টান ১৭ এবং অন্যান্য ৩১৯।

জলাশয় প্রধান নদী: মনু ও বরাক। হাকালুকি হাওর ও কাউয়াদিঘি হাওর এবং মাথাখালী খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৮৮২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে। পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৩০ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১২ ১৯২ ৪৩৪ ৪০১০৭ ২৪১৪৮৬ ৮১৮ ৬৫.২ ৪৫.৭
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১০.৩৬ ৪৭ ৪০১০৭ ৩৮৭১ ৬৫.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আখাইলকুরা ১৩ ৭১৯৫ ৯৯২৫ ৯৭১৮ ৪১.৫৫
আপার কাগাবালা ৯৪ ৯১৭৮ ৭৯৭৮ ৮০৫২ ৩২.৯৩
আমতৈল ১৪ ৭৫৭৪ ৯৭৭৫ ৯৩৫৬ ৫০.০৮
একাটুনা ২৯ ৫২২৮ ৮৫৯৯ ৮০০৯ ৫০.৫৯
কনকপুর  ৫১ ৬২৩৬ ৯১৯৬ ৯২৬২ ৫৬.৮১
কামালপুর ৪৩ ৩৯৭৪ ৭৬২৮ ৭৬১১ ৫৩.৭১
খলিলপুর ৫৮ ৭১১২ ১২৫৭০ ১২৩৫৪ ৪৪.০৮
গিয়াসনগর ৩৬ ১১১৪৬ ১৩০৮৯ ১২৩৪৬ ৪১.৯০
চাঁদনীঘাট ২১ ৬২৮১ ১৫২৪৩ ১৪১০৩ ৪৭.২৩
নাজিরাবাদ ৮৭ ১০৯৮১ ১০৭৭৩ ১০৩৯৮ ৩৯.০১
মনুমুখ ৬৫ ৪২৮৬ ৮৩৫৮ ৮৩২৪ ৪৩.০৯
মোস্তফাপুর ৮০ ৩৩২৫ ৯৮৩০ ৮৯৮৯ ৪৮.৯৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ গয়ঘরের খোজা মসজিদ, হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফার (র.) মাযার, রাধা গোবিন্দ জিউর আখড়া (কামালপুর), অজ্ঞান ঠাকুরের মন্দির, মৌলভীবাজার জেলা জজকোর্ট।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি  ১৯১২ সালে মৌলভীবাজার উপজেলায় জগৎসি গ্রামের দোলগোবিন্দ আশ্রমকে কেন্দ্র করে স্বামী দয়ানন্দের নেতৃত্বে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন সূচিত হয়। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯২১ সালে এ উপজেলায় খেলাফত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মাওলানা হোসেন আহমদ মদনী, সরোজিনী নাইডু প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭১ সালে ২৭ মার্চ শ্রীরাইনগর গ্রামে সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয়। সেখানে জনগণের এক মিছিলে পাকবাহিনী হঠাৎ আক্রমণ করলে দু’জন নিহত হন। মুক্তিযুদ্ধে মনুমুখ, কামালপুর ও শেরপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষ হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধ শেষে ২০ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে মাইন বিস্ফোরণে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ২ (নালীউড়া ও মৌলভীবাজার উচ্চবিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন); স্মৃতিস্তম্ভ ১ (মৌলভীবাজার উচ্চবিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন); বধ্যভূমি ৫ (নরিয়া, হুয়াহুরি, কামালপুর)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  পশ্চিম বাজার জামে মসজিদ, কোর্ট জামে মসজিদ, হযরত শাহ মোস্তফার (রঃ) মাযার, শাহ্  হিলাল (রঃ)-এর মাযার, শ্রী শ্রী পুরাতন কালীবাড়ি, শ্রী শ্রী দুর্গাবাড়ি (পশ্চিম বাজার), শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম (সৈয়ারপুর)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.৬%; পুরুষ ৫১.০%, মহিলা ৪৬.১%। কলেজ ৫, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এন্ড কলেজ ১, টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ১, নার্সিং ইনস্টিটিউট ১, সমবায় ইনস্টিটিউট ১, যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, অন্ধকল্যাণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১, উদ্যানতত্ত্ব ও গবেষণা কেন্দ্র ১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭, কমিউনিটি ও স্যাটেলাইট স্কুল ৭, কিন্ডার গার্টেন ১৬, মাদ্রাসা ৪২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ (১৯৫৬), মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৮৫), জগৎসী গোপালকৃষ্ণ এম সাইফুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজ (১৯১৫), মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯১), কাশীনাথ আলাউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), আলী আমজাদ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৩২), দারুল উলুম মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: মৌলভীবাজার, বাংলার দিন; সাপ্তাহিক: পাতাকুঁড়ির দেশ, মনুবার্তা, জনপ্রত্যাশা, মুক্তকথা, মৌলভীবাজার বার্তা; পাক্ষিক: দ্য সিলেট টু ডে; মাসিক: দূর দিগন্ত, শ্রী গৌরবাণী; অবলুপ্ত: মাসিক তবলিগ-উল-ইসলাম ও তানজিমুল মুসলিমিন (১৯২৪); সাপ্তাহিক অভিযান (১৯৩৫), অগ্রদূত (১৯৬০); মাসিক বন্যা (১৯৭০)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ২, নাট্যদল ৬, মহিলা সংগঠন ১১।

দর্শনীয় স্থান মনু ব্যারেজ (মাতারকাপন), বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, খাসিয়া সম্প্রদায়ের ২ টি পানপুঞ্জি উল্লেখযোগ্য।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪০.২২%, অকৃষি শ্রমিক ৬.৬১%, শিল্প ১.৯১%, ব্যবসা ১৪.৫৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৯৯%, চাকরি ৭.৫৬%, নির্মাণ ২.৬৬%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৬.৫১% এবং অন্যান্য ১৫.৫১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৪.৮৫%, ভূমিহীন ৫৫.১৫%। শহরে ৪০.০৩% এবং গ্রামে ৪৫.৬৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, চা, পান, নাগা মরিচ, সাতকরা, শাকসবজি।

বিলুপ্তপ্রায় ফসল  পাট।

প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, আনারস, আম, লিচু, কলা, নারিকেল, সুপারি, কালোজাম, কামরাঙ্গা, বাতাবী লেবু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৭৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৭৬ কিমি; নৌবন্দর ১ (শেরপুর)।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

কুটিরশিল্প বাঁশশিল্প, বেতশিল্প, মাদুরশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪০, মেলা ৫। মৌলভীবাজার, দিঘিরপার বাজার, সরকার বাজার, শেরপুর বাজার, কামালপুর বাজার, শমসেরগঞ্জ বাজার ও শিমুলতলা বাজার এবং শাহ মোস্তফা মেলা, শেরপুর মাছের মেলা, মঙ্গলচন্ডীর অষ্টমীর মেলা, বস্ত্রমেলা, বাণিজ্য মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  শুঁটকি মাছ, নাগা মরিচ, চা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৩.১৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬৮.৬%, ট্যাপ ৬.৮৯%, পুকুর ১৮.৩৬% এবং অন্যান্য ৬.১৫%। এ উপজেলার ২৮১৬ অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৮.৯০% (শহরে ৮৫.১১% এবং গ্রামে ৪২.৭৫%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪১.১১% (শহরে ১২.৬৪% এবং গ্রামে ৪৫.৯৫%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৯.৯৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, ইউনিয়ন ও পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১, মাতৃমঙ্গল ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১, যক্ষ্মা হাসপাতাল ১, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ১, পুলিশ হাসপাতাল ১, কারাগার হাসপাতাল ১, চক্ষু হাসপাতাল ১, মিশনারি ক্লিনিক ১, ক্লিনিক ১৪।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, হিড বাংলাদেশ।  [শাহ আবদুল ওদুদ]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মৌলভীবাজার সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।