হাজরা, মাতঙ্গিনী
হাজরা, মাতঙ্গিনী (১৮৬৯-১৯৪২) একজন মানবতাবাদী ও গান্ধীবাদী নেত্রী। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানার অন্তর্গত হোগলা নামক গ্রামে ১৮৬৯ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় মাতঙ্গিনী হাজরার হাতখড়ি হয়নি। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার পর আঠারো বছর বয়সে মাতঙ্গিনী নিঃসন্তান অবস্থায় বিধবা হন। তিনি উপনিবেশিক শাসনের কবলমুক্তির সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং মহাত্মা গান্ধীর অহিংস ধর্মমত অনুসরণ করেন।
১৯৩২ সালে গান্ধীর আইন অমান্য আন্দোলন-এ (লবণ সত্যাগ্রহ) মাতঙ্গিনী অংশগ্রহণ করে আলিনান লবণ কেন্দ্রে লবণ উৎপাদন করেন এবং লবণ আইন অমান্য করার জন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পর শাস্তি হিসেবে তাঁকে দীর্ঘ পথ হেঁটে যেতে বাধ্য করা হয়। তিনি চৌকিদারি ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়ার আন্দোলনেও অংশ নেন। ওই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের শাস্তিদানের উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক গঠিত বেআইনি আদালতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দিয়ে আদালত ভবনের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময়ে তাঁকে আবার গ্রেফতার করা হয়। এ সময়ে তাঁকে ছয় মাসের কারাদন্ড দিয়ে বহরমপুর জেলে পাঠানো হয়।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মাতঙ্গিনী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কার্যাবলির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত হয়ে পড়েন। গান্ধীর সত্যিকার অনুসারীর মতো তিনি চরকায় সুতা কাটা ও খদ্দরের কাপড় বোনায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৩৩ সালে তিনি শ্রীরামপুর মহকুমা কংগ্রেস সম্মেলনে যোগদান করেন। সেখানে প্রতিবাদকারীদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে। তিনি সর্বদা মানবতাবাদী উদ্দেশ্য সাধনে নিয়োজিত থেকেছেন। তাঁর অঞ্চলে যখন মহামারী আকারে বসন্ত-রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে, তখন তিনি আক্রান্ত পুরুষ, নারী ও শিশুদের সেবা করেছেন। জনগণ সোহাগভরে তাঁকে ‘গান্ধী বুড়ি’ বলে ডাকত।
ভারত ছাড় আন্দোলন (১৯৪২) চলাকালে মেদিনীপুরের জনগণ থানা, আদালত ও অন্যান্য সরকারি অফিস জোরপূর্বক দখল করার উদ্দেশ্যে আক্রমণের পরিকল্পনা করছিল। ওই সময় ৭২ বছর বয়সী মাতঙ্গিনী শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন। ২৯ সেপ্টেম্বর পুলিশের গুলি তাঁর বাহুতে আঘাত হানে। নির্ভীক মাতঙ্গিনী তাদের নিজেদের ভ্রাতৃবর্গের উপর গুলি না চালানোর জন্য পুলিশের নিকট সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাতে থাকেন। আরেকটি বন্দুকের গুলি তাঁর কপাল ভেদ করে যায়। তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। [সোনিয়া আমিন]