টাঙ্গাইল সদর উপজেলা
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা (টাঙ্গাইল জেলা) আয়তন: ৩০১.৮৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১০´ থেকে ২৪°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৬´ থেকে ৮৯°৫৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কালিহাতি উপজেলা, দক্ষিণে নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলা, পূর্বে বাসাইল উপজেলা, পশ্চিমে বেলকুচি ও চৌহালি উপজেলা।
জনসংখ্যা ৪৩৮৭৬৫; পুরুষ ২২৪৯৮২, মহিলা ২১৩৭৮৩। মুসলিম ৪০৪৭৬২, হিন্দু ৩৩৮৭১, বৌদ্ধ ৮১, খ্রিস্টান ২১ এবং অন্যান্য ৩০।
জলাশয় যমুনা, ধলেশ্বরী ও লৌহজং নদী উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন টাঙ্গাইল সদর থানা গঠিত হয় ১৯৬২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে। টাঙ্গাইল পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৮৭ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১১ | ২৯১ | ২৭৩ | ১২৮৭৮৫ | ৩০৯৯৮০ | ১৪৫৪ | ৬৩.১ | ৩৪.৯২ |
পৌরসভা | |||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
২৯.৪৩ | ১৮ | ৬৩ | ১২৮৭৮৫ | ৪৩৭৬ | ৬৩.১ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
পুরুষ | মহিলা | |||
করটিয়া ৫৯ | ৪৮৪৬ | ২১৫৮৮ | ১৯০৪৬ | ৫১.৮২ |
কাকুয়া ৭১ | ৯২০০ | ১২২১৩ | ১২৩২৬ | ২২.২২ |
কাতুলী ৬৫ | ৮০৬৮ | ১৬৮৭৯ | ১৬৪৭৫ | ৩০.৭০ |
গালা ৪১ | ৪১১৫ | ১২৩৭৮ | ১১৫৬৪ | ৩৮.৯২ |
ঘারিন্দা ৪৭ | ৪৮৩৯ | ১৪৩৭২ | ১৩৯৪৪ | ৩৯.৯৭ |
দাইন্যা ৩৯ | ৪৬৯৬ | ১৩৮৯৪ | ১৩৪২৪ | ৪২.৩৫ |
পোড়াবাড়ী ৯০ | ৩৪০৬ | ৯৪৬৬ | ৯১৪২ | ৩২.০১ |
বাঘিল ৩৭ | ৫২১৫ | ১৩২৬৪ | ১২৬২৯ | ৩৫.৪৩ |
মগড়া ৭৭ | ৫৪০১ | ১৪৬৯৫ | ১৪০৮৩ | ৩৪.২৪ |
মাহমুদনগর ২০ | ৩৯০০ | ৪৯০৮ | ৪৮৬১ | ২৪.৪২ |
ছিলিমপুর ৮৩ | ৪১৪০ | ৯৬৫১ | ৯৬৭৪ | ৩৭.৭৪ |
হুগড়া ৫৩ | ৮৫২৯ | ১৪৮১৮ | ১৪৬৮৬ | ২৯.২৫ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ সন্তোষ জমিদার বাড়ী, করটিয়া জমিদার বাড়ী, মাযার ও মসজিদ।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ১৯৫৭ সালের ৬-১০ ফেব্রুয়ারি এ উপজেলার কাগমারিতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন ও সাংস্কৃতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইতিহাসে এ সম্মেলন কাগমারি সম্মেলন নামে খ্যাত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে প্রায় ১৭,০০০ মুক্তিযোদ্ধা এ উপজেলায় যুদ্ধ করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিসৌধ ১; বধ্যভূমি ১ (জেলা প্রশাসনের উত্তরদিকে পানির ট্যাংক সংলগ্ন স্থানে)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান টাঙ্গাইল সদর জামে মসজিদ, করটিয়া জামে মসজিদ ও চন্দ্র নারায়ণ দাস মঠ উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৪.৪%; পুরুষ ৪৯.৮%, মহিলা ৩৮.৭%। বিশ্ববিদ্যালয় ১, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ১, কলেজ ৭, পিটিআই ১, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪৭, মাদ্রাসা ১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯৭), ইনস্টিটিউশন স্কুল এন্ড কলেজ (১৯০০), সরকারি সাদত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (১৯২৬), কুমুদিনী সরকারি কলেজ (১৯৪৩), সরকারি মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ (১৯৬৮), মেজর জেনারেল মাহমুদ হাসান মহাবিদ্যালয় (১৯৮৯), লায়ন নজরুল ইসলাম মহাবিদ্যালয় (১৯৯৩), টাঙ্গাইল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (১৯৮৭), পাথরাইল বাংলা স্কুল (১৮৬২), ইংরেজি মাধ্যমিক স্কুল (১৮৭০), সরকারি বিন্দুবাসিনী উচ্চ বালক বিদ্যালয় (১৮৮০), সরকারি বিন্দুবাসিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৮৮২), পোড়াবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৬), এইচ এম টাঙ্গাইল শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), বিএস বিশ্বেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), রোকেয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২৫)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক:দেশকথা, মফস্বল, মজলুমের কণ্ঠ, লোককথা, আজকের টেলিগ্রাম, নাগরিক কথা। অবলুপ্ত সাপ্তাহিক: টাঙ্গাইল হিতৈষী (১৮৯০), নবমিহির (১৮৯১), প্রবাহ (১৯১৪), দূরবিন (১৯৪৭), জনতা (১৯৫৪), জয়বাংলা (১৯৭১), পূর্বাকাশ, লৌহজং, খামোশ, মৌ বাজার, বিদ্রোহী কণ্ঠ, সাপ্তাহিক প্রযুক্তি, মূল স্রোত, টাঙ্গাইল বার্তা; অবলুপ্ত পাক্ষিক: আহমদী, হিতকরী (১৮৯২), রায়ত (১৯৩৬); অবলুপ্ত মাসিক: নবযুগ (১৮৯০), নববিধান (১৮৯০), প্রজাশক্তি (১৯৩১), বালার্ক (১৯৭০)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৪, শিল্পকলা একাডেমী ১, ক্রীড়া সংস্থা ১, সিনেমা হল ৬, নাট্যমঞ্চ ১ (ভাসানী হল), নাট্যদল ২, মহিলা সংগঠন ১, খেলার মাঠ ২০, সাহিত্য সংগঠন ৩, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৩।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৬.৮১%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৬৬%, শিল্প ১.৯১%, ব্যবসা ১৯.০৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৭.১৪%, চাকরি ১২.১৮%, নির্মাণ ২.১৪%, ধর্মীয় সেবা ০.২০%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৫১% এবং অন্যান্য ১৫.৩৬%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৫.৯৫%, ভূমিহীন ৪৪.০৫%। শহরে ৪৭.২৭% এবং গ্রামে ৫৯.৫২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, সরিষা, গম, আলু, আখ, চীনাবাদাম, ভুট্টা, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি বিভিন্ন জাতের ডাল, চিনা, তিসি, মিষ্টি আলু, হলুদ, আদা, ধনিয়া।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কুল, পেঁপে, বেল।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৬, হাঁস-মুরগি ২০০।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৯১.৬৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৫৪.৯৪ কিমি। কালভার্ট-ব্রিজ ২৮৭।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, টমটম, গরু ও মহিষের গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ময়দাকল, বরফকল, ধানকল, তেলকল, ডালকল, চিড়াকল, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ, বুকবাইন্ডিং কারখানা, বিস্কুট কারখানা, পাইপ কারখানা, সাবান কারখানা, এ্যালুমিনিয়াম কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, বিড়িশিল্প, বুননশিল্প, তামা ও কাঁসাশিল্প, বাঁশের কাজ ও কাঠের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২২। করটিয়া হাট, পালা হাট, পাছবেথইর হাট, সুরুজ হাট, পোড়াবাড়ী হাট, জুগন হাট, পাঁচআনী বাজার, ছয়আনী বাজার, বাঘিল বাজার, এবং ভূতের মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য দুগ্ধজাত দ্রব্য, তাঁতের শাড়ি, পাট, চামড়া, আখের গুড়, সরিষা।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৯.৭৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৯.৪৭%, পুকুর ০.১৯%, ট্যাপ ৪.৫৪% এবং অন্যান্য ৫.৮০%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা ৪০.২৬% (গ্রামে ২৫.২৭% ও শহরে ৭৬.৭১%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৩.৭৮% (গ্রামে ৬৭.২৯% ও শহরে ২০.৯৫%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫.৯৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ৪, ক্লিনিক ২, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৭, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার অনেক লোক প্রাণ হারায়।
এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা, ফুড ফর অল, কেয়ার বাংলাদেশ, নারী উন্নয়ন সংস্থা, এসডিএস, এডাব বাংলাদেশ, নিজেরা করি, [নজরুল ইসলাম]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; টাঙ্গাইল সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।