হোমনা উপজেলা
হোমনা উপজেলা (কুমিল্ল জেলা) আয়তন: ১৪২.৭৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৩৭´ থেকে ২৩°৪৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৮´ থেকে ৯০°৫৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা, দক্ষিণে দাউদকান্দি উপজেলা, পূর্বে মুরাদনগর উপজেলা, পশ্চিমে আড়াইহাজার উপজেলা।
জনসংখ্যা ২০৬৩৮৬; পুরুষ ১০০২৪৫, মহিলা ১০৬১৪১। মুসলিম ১৯৪২৯৬, হিন্দু ১২০৮৫, বৌদ্ধ ৪ এবং অন্যান্য ১।
জলাশয় প্রধান নদী: মেঘনা, তিতাস, কাঠালিয়া। লুইতার বিল, দড়িরচর বিল, কাসিমপুর বিল, কালিদোয়ার বিল ও খোদাদাউদপুরের বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন হোমনা থানা গঠিত হয় ১৯১৮ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৯ | ৭৩ | ১৫৪ | ২৯১৭৩ | ১৭৭২১৩ | ১৪৪৫ | ৪৬.৪ | ৩৮.৬ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
১১.৭৩ | ৯ | ১৩ | ২৯১৭৩ | ২৪৮৭ | ৪৬.৪ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আসাদপুর ১৫ | ৩৯৬৯ | ৯৪৫৯ | ১১২৮৩ | ৩৮.১ | ||||
গারমোড়া ৫০ | ২২১০ | ৭৯৮৮ | ৭৮২৯ | ৩৫.২ | ||||
ঘাগুটিয়া ৪৭ | ৩৫০৭ | ৮৩৩৯ | ৯৫৮৯ | ৩০.৮ | ||||
চান্দের চর ২৮ | ৩২৮৯ | ১১৬৬৩ | ১৩১৯৯ | ৪২.৫ | ||||
জয়পুর ২৫ | ১৫৮৩ | ৬৩৪৪ | ৬২২৪ | ৪২.৯ | ||||
দুলালপুর ২২ | ৭১৮৮ | ১০৭০৯ | ১১৬৯৪ | ৩৪.৮ | ||||
নিলখী ৮৫ | ৪৭৭৩ | ১১১৯৩ | ৯৯৮২ | ৪৪.০ | ||||
ভাষানিয়া ২০ | ৩১৯১ | ১০৯৩৫ | ১০৯০১ | ৪০.৮ | ||||
মাথাভাঙ্গা ৭৬ | ৪০৫০ | ৯৩১৩ | ১০৫৬৯ | ৩৭.০ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ হোমনা কালীমন্দির, কারাকান্দি বলাগাজী মসজিদ।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে জুলাইয়ের শেষদিকে পাকবাহিনী তিতাস নদী দিয়ে লঞ্চযোগে জয়পুর গ্রামে প্রবেশের চেষ্টা করলে নদীর দুই তীর থেকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা সশস্ত্র আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে লঞ্চটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আক্রমণে টিকতে না পেরে পাকবাহিনী দ্রুত মাছিমপুরের দিকে চলে যায়। এই লড়াইয়ে পাকবাহিনীর অনেকেই হতাহত হয়। উপজেলার চম্পক নগর, ঘাগুটিয়া, নিলখী বাজার, দুলাল বাজার, হোমনা সদর ও পঞ্চবটি প্রভৃতি জায়গায় সংঘটিত পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একাধিক লড়াইয়ে ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ২৪ জন আহত হন। তাছাড়া পাকবাহিনী বর্তমান হোমনা ডিগ্রি কলেজের পাশে বহুসংখ্যক নারী, পুরুষ ও শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়। উপজেলায় ১টি গণকবর রয়েছে ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন হোমনা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৮।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৫০, মন্দির ২৬, তীর্থস্থান ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কারাকান্দি বলাগাজী মসজিদ, হোমনা কালীমন্দির।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়হার ৩৯.৭%; পুরুষ ৪১.৯%, মহিলা ৩৭.৬%। কলেজ ৪, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৮, কিন্ডার গার্টেন ২, মাদ্রাসা ২৭৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মাথাভাঙ্গা ভৈরব উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), রামকৃষ্ণপুর কেআরকে উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৮), হোমনা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), ঘনিয়ারচর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৮), বড়কালমিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৯)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: হোমনা; দৈনিক: হোমনা।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, শিল্পকলা একাডেমী ১, খেলার মাঠ ১০।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৬.৯১%, অকৃষি শ্রমিক ২.৪৫%, শিল্প ৫.৫৪%, ব্যবসা ১৭.১৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৭৩%, চাকরি ৬.১৮%, নির্মাণ ১.২৪%, ধর্মীয় সেবা ০.২৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৩.২৬% এবং অন্যান্য ১৫.২৫%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৬.০৮%, ভূমিহীন ৩৩.৯২%। শহরে ৬৬.৪৪% এবং গ্রামে ৬৬.০২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ভুট্টা, আলু, তিল, সরিষা, মসুরি, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, চীনা, মুগ।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, তরমুজ, ফুটি, পেঁপে।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১, হাঁস-মুরগি ৪০।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০৭ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৫৫ কিমি; নৌপথ ৩৮ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।
শিল্প ও কলকারখানা করাতকল, বরফকল, চালকল, আটাকল, তেলকল, ওয়েল্ডিং কারখানা, মোমবাতি ও চানাচুর প্রস্ত্তত কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, সূচিশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৭, মেলা ২। হোমনা হাট, রামকৃষ্ণপুর হাট, দুলালপুর হাট, মিরাশ হাট, কাশীপুর হাট, শ্রীপুর হাট, জয়পুর হাট, আসাদপুর হাট এবং পৌষ ও বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য গম, আলু, তিল, সরিষা, মসুরি, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৮৬.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.২%, ট্যাপ ১.৪% এবং অন্যান্য ৬.৪%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৬.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৮.৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, পশু হাসপাতাল ১, পল্লী চিকিৎসাকেন্দ্র ৭, ক্লিনিক ১০।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৬৯ সালের টর্নেডো এবং ১৯৯৮ সালের বন্যায় উপজেলার ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এনজিও আশা, ব্র্যাক। [মো. মাজহারুল ইসলাম]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; হোমনা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।