সাল্লা উপজেলা
সাল্লা উপজেলা (সুনামগঞ্জ জেলা) আয়তন: ২৫৬.০৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৪´ থেকে ২৪°৪৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০৮´ থেকে ৯১°২৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে দিরাই উপজেলা, দক্ষিণে ইটনা ও আজমিরিগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে বানিয়াচং ও আজমিরিগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে খালিয়াজুরী ও ইটনা উপজেলা।
জনসংখ্যা ১১৩৭৪৩; পুরুষ ৫৭৩১৬, মহিলা ৫৬৪২৭। মুসলিম ৬০২৭৭, হিন্দু ৫৩৪৫৫, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ৩ এবং অন্যান্য ৭।
জলাশয় প্রধান নদী: কালনী, সুরমা ও পিয়াইন। আড়িয়া বিল, কাটিয়ার বিল, ধুতি বিল, বান্দা বিল, গাছিডোবা বিল, চাকুই বিল ও রলিয়া বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯১৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৪ | ৬৫ | ১১৬ | ৩৯১৪ | ১০৯৮২৯ | ৪৪৪ | ৬৩.৫ | ৩৩.২ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৩.৭৯ | ২ | ৩৯১৪ | ১০৩৩ | ৬৩.৫ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আটগাঁও ২৩ | ১৬২৮৮ | ১৫৯৬২ | ১৫৫০৪ | ২৫.৪ | ||||
বাহারা ৪৭ | ১৪৪২৬ | ১৩৭৩৯ | ১৩৭৭৬ | ৪৪.৮ | ||||
সাল্লা ৯৫ | ১৩৯৫৭ | ১২৮২০ | ১২৪০৮ | ৩০.৮ | ||||
হাবিবপুর ৭১ | ১৮৫৯৭ | ১৪৭৯৫ | ১৪৭৩৯ | ৩৬.২ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ শ্রীহাইল সাহেববাড়ি জামে মসজিদ, ডুমরা ও বাহারার মূর্তিশিলা, শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গোসাইর আখড়া, বাহারা সোমেশ্বরী মন্দির।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে এ উপজেলা ৫ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী এ উপজেলায় ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্যাতন চালায়। সাল্লা থানা হাওর অধ্যুষিত হওয়ায় পাকসেনারা এই এলাকায় অবস্থান গড়ে তুলতে সাহস পায়নি। ফলে এখানে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সামনা-সামনি যুদ্ধ হয়নি। তবে শত্রুরা একসময় সাল্লা থানায় অবস্থান গড়ার চেষ্টা করলে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পড়ে ও থানার পুলিশরা অস্ত্র সমর্পণ করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। উপজেলায় ২টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন শাল্লা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১০।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১২০, মন্দির ২৬, তীর্থস্থান ২, মাযার ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ঘুঙ্গিয়ারগাঁও সাল্লা জামে মসিজদ, শ্রীহাইল সাহেববাড়ি জামে মসজিদ, বাহারা জামে মসজিদ, শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গোসাইর আখড়া, বাহারা সোমেশ্বরী মন্দির।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৪.৩%; পুরুষ ৩৬.৪%, মহিলা ৩২.১%। কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৮, কমিউনিটি বিদ্যালয় ২, মাদ্রাসা ৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সাল্লা মহাবিদ্যালয় (১৯৮৬), শহীদ আলী দ্বি-মূখী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৮), গোবিন্দ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮১), গিরিধর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, মামুদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়, পল্লবী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, বাহারা প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৩১), আনন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৫), সাল্লা হাসিমিয়া ইসলামী মাদ্রাসা (১৯৮৭)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী অরুণোদয় (২০০১), দারাইন (২০০০), ভাটি কথা (২০০১), বিজয় (২০০২), গাং (২০০৩), নক্ষত্র (২০০৪), কালনী (২০০১), হাওড়ের ঢেউ (অবলুপ্ত)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১০, লাইব্রেরি ৬, সাহিত্য সংগঠন ২, সংগীত বিদ্যালয় ৩, খেলার মাঠ ১৮, মহিলা সমিতি ৪।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৮৩.৯৯%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৫০%, শিল্প ০.০৮%, ব্যবসা ৪.১৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.০৪%, চাকরি ২.১৯%, নির্মাণ ০.২৩%, ধর্মীয় সেবা ০.১৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৮% এবং অন্যান্য ৫.৬১%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৩.৯৭%, ভূমিহীন ৩৬.০৩%। শহরে ৫১.২৭% এবং গ্রামে ৬৪.৫৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, বাদাম, আলু, পিঁয়াজ, শাকসবজি, তৈলবীজ।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, সরিষা।
প্রধান ফল-ফলাদি নারিকেল, আম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, আনারস।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৬, গবাদিপশু ৩, হাঁস-মুরগি ৪০।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১০ কিমি, কাঁচারাস্তা ২০০ কিমি; নৌপথ ৮০ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা চালকল, বরফকল, বেকারি, ওয়েল্ডিং কারখানা, প্লাস্টিক কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ, কাঠের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৫, মেলা ৫। ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজার, প্রতাপপুর বাজার, শাসখাই বাজার, আনন্দপুর বাজার, সালা বাজার, মামুদ নগর বাজার, সাতপাড়া বাজার, পুটকা বাজার, দাউদপুর বাজার এবং সোমেশ্বরীর বারুণী মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য মাছ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৭.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ পীট কয়লা।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৮.৭%, ট্যাপ ০.০% এবং অন্যান্য ১.৩%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলোর ১৬.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬৬.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৬.৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ২, কমিউনিটি ক্লিনিক ৬, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, ব্র্যাক পরিচালিত যক্ষ্মা চিকিৎসা কেন্দ্র ১, হীড পরিচালিত কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্র ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে অনেক লোক প্রাণ হারায় এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যায়। এছাড়া ১৯৫৫, ১৯৭৪, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যা এবং ২০০৪ সালের সুনামিতে ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
এনজিও ব্র্যাক, হীড, পল্লবী প্রগতি সংস্থা। [জীবন কুমার চন্দ]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সাল্লা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।