শ্রীপুর উপজেলা (গাজীপুর)
শ্রীপুর উপজেলা (গাজীপুর জেলা) আয়তন: ৪৬২.৯৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০১´ থেকে ২৪°২১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১৮´ থেকে ৯০°৩৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভালুকা ও গফরগাঁও উপজেলা, দক্ষিণে গাজীপুর সদর উপজেলা, পূর্বে কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে কালিয়াকৈর ও সখীপুর উপজেলা।
জনসংখ্যা ৪৯২৭৯২; পুরুষ ২৫১২৯৮, মহিলা ২৪১৪৯৪। মুসলিম ৪৭৫৯৯৮, হিন্দু ১৫৩৩৯, বৌদ্ধ ৫২, খ্রিস্টান ৪৮৮ এবং অন্যান্য ৯১৫। এ উপজেলায় সাঁওতাল, কোচ, রাজবংশী, মান্দি, নুনিয়া ও ভাংগর প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় প্রধান নদী: বানার, কাওরাইদ, লবণদহ।
প্রশাসন শ্রীপুর থানা গঠিত হয় ১৯৩৩ সালে এবং শ্রীপুর থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৮ | ৭৫ | ১৭২ | ১২৬২৪৯ | ৩৬৬৫৪৩ | ১০৬৪ | ৬৩.৩ | ৫১.৮ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
- | ৯ | ২০ | ১২৬২৪৯ | - | ৬৩.৩ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কাওরাইদ ৩৮ | ১৩৪৩৫ | ২৫১১৯ | ২৫০৮৫ | ৪৭.০ | ||||
গাজীপুর ১৯ | ১১৪২০ | ২৬৮১৬ | ২৫৪৫১ | ৪৬.৬ | ||||
গোসিংগা ২৮ | ১৪০১৮ | ১৬৬৮৪ | ১৬৮৪৯ | ৫৪.৫ | ||||
তেলিহাটি ৮৫ | ৯৮৬০ | ২২৯৮০ | ২২২৯১ | ৫৬.৬ | ||||
প্রহ্লাদপুর ৫৭ | ৯৬১৩ | ১২২৯২ | ১৩৩১৯ | ৫৬.৩ | ||||
বর্মী ২১ | ১২৮৫২ | ৩২৫৪৮ | ৩২৪৪৭ | ৫৩.১ | ||||
মাওনা ৪৭ | ১৮৮৩৮ | ২৫৯২৪ | ২৫১৮৬ | ৪৫.৬ | ||||
রাজাবাড়ী ৬৬ | ১২৭৫৩ | ২১৭৭৫ | ২১৭৭৭ | ৫৯.২ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ চিনাশুখানিয়ায় চন্ডাল রাজাদের রাজবাড়ি, শৈলাটে রাজা শিশু পালের ও শাইট হালিয়ায় দাস রাজাদের রাজধানী, সিংগার দিঘি, বর্মী দূর্গ ও কুঠিবাড়ি, কাওরাইদ কালিমন্দির (১৩৪০ বাংলা), কাওরাইদে গুপ্ত পরিবারের সমাধিক্ষেত্র, শ্রীপুর মোলা মসজিদ (১৮০১ সাল)।
ঐতিহাসিক ঘটনা রাজা শ্রীপালের নামানুসারে শ্রীপুর নামকরণ করা হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। কর্ণপূর নামক স্থানে স্থানীয় ভূঁইয়াগণ মুগলদের অগ্রগতি রোধ করার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন যার সাক্ষ্য বহন করছে কর্ণুর দুর্গ ও দিঘি।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা রাজেন্দ্রপুর, জয়দেবপুর পিলখানা ও সমরাস্ত্র কারখানায় হামলা চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র হস্তগত করে। ১৯৭১ সালের ১৭ জুন পাকবাহিনী শ্রীপুর কলেজ ক্যাম্পাসে ও সাতখামাইরে গণহত্যা চালায়। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর এ উপজেলায় ৭টি বোমা বিস্ফোরণ হয় এবং অনেক লোকের প্রাণহানি ঘটে। উপজেলার শ্রীপুর কলেজ ও সাতখামার এলাকায় ২টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
বিস্তারিত দেখুন শ্রীপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১০।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬৬০, মাযার ৪, মন্দির ১২, গির্জা ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: শ্রীপুর শাহ সাহেবের মাযার, সাতখামার দরগা, কেওয়া আকন্দবাড়ি মসজিদ উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৪.৮%; পুরুষ ৫৭.৬%, মহিলা ৫১.৮%। কলেজ ৭, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০, ভোকেশনাল স্কুল ১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬৪, এনজিও পরিচালিত স্কুল ৪৪, মাদ্রাসা ৫৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শ্রীপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (১৯৬৮), কাওরাইদ কালী নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), বর্মী বাজার উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৫)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: আপনার কণ্ঠ (২০০৪); মাসিক: মুক্তি (১৯৮৯); অবলুপ্ত: দৈনিক শ্রীপুর বার্তা (১৯৮৩), মাসিক দুর্জয় (১৯৮৮)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩৭, সিনেমা হল ৩, নাট্যদল ৬, মহিলা সমিতি ৯, ক্লাব ১০।
দর্শনীয় স্থান সীগার্ল (মাওনা), বন্যা দীঘি (কর্ণপুর), ওয়াদ্দা দীঘি (টেংরা), জীবন্ত স্বর্গ (কেওয়া), বৈরাগীর চালা (আদর্শ গ্রাম), বর্মী বাজার বানর বিচরণ কেন্দ্র ও প্রাচীন বাজার, রাথুবার জঙ্গল, কাওরাইদে রবীন্দ্র বাংলো ও মন্দির, গঙ্গা (সরোবর) তীর্থক্ষেত্র।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৪.৬২%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৬৭%, শিল্প ০.৭৯%, ব্যবসা ১৫.৬৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৯৮%, চাকরি ৮.৫২%, নির্মাণ ১.৫২%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.০২% এবং অন্যান্য ৭.৭১%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৫.৮০%, ভূমিহীন ৩৪.২০%। শহরে ৫৫.৪০% এবং গ্রামে ৬৬.৩৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, পাট, সরিষা, আদা, হলুদ, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পান, নীল।
প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, পেঁপে, আনারস, কলা, আম, লিচু, পেয়ারা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৩৯, গবাদিপশু ১০৯, হাঁস-মুরগি ৭৭২, হ্যাচারি ৬।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৬৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৯৫২ কিমি; নৌপথ ১৬ কিমি; রেলপথ ২৯ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা পোশাক শিল্প, কাঁচ শিল্প, সিরামিকস্ শিল্প, চালকল, বিস্কুট ফ্যাক্টরি, বরফকল, স’মিল।
কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, কাঠের কাজ, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩২, মেলা ১০। শ্রীপুর, মাওনা, বর্মী, রাজাবাড়ী ও কাওরাইদ হাট এবং রাজবাড়ী, মাওনা, শ্রীপুর ঈদমেলা ও বর্মী বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, সরিষা, পাট।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লি¬বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬৯.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ ভাওয়াল গড়ের কংকর ও বালি।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৮.৪%, ট্যাপ ৮.৬% এবং অন্যান্য ২.৯%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৬.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২০.৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ২.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৪, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৬, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৬, ক্লিনিক ৫৩, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, ইসলামী মিশন হাসপাতাল ১।
এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, অন্বেষা ফাউন্ডেশন। [তপন বাগচী]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; শ্রীপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।