শিবপুর উপজেলা
শিবপুর উপজেলা (নরসিংদী জেলা) আয়তন: ২১৭.৭১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৫৬´ থেকে ২৪°০৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৮´ থেকে ৯০°৫০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মনোহরদী উপজেলা, দক্ষিণে রায়পুরা, নরসিংদী সদর ও পলাশ উপজেলা, পূর্বে বেলাবো ও রায়পুরা উপজেলা, পশ্চিমে পলাশ ও কাপাসিয়া উপজেলা।
জনসংখ্যা ৩০৩৮১৩; পুরুষ ১৪৮৪২৯, মহিলা ১৫৫৩৮৪। মুসলিম ২৯১৬৩৮, হিন্দু ১২১৩৮, বৌদ্ধ ৭, খ্রিস্টান ৭ এবং অন্যান্য ২৩।
জলাশয় পাহাড়িয়া নদী, শীতলক্ষ্যা নদী, ব্রহ্মপুত্র নদ ও আড়িয়াল খাঁ নদী এবং চায়নাদি বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন শিবপুর থানা গঠিত হয় ১২ জানুয়ারি ১৯১৮ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৯ | ১১৭ | ১৯৪ | ২৬৫০৪ | ২৭৭৩০৯ | ১৩৯৫ | ৬২.৩ (২০০১) | ৫৫.৩ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
- | ৯ | ১৭ | ২০২৭২ | - | ৫৮.৮ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৩.৫২ (২০০১) | ২ | ৬২৩২ | ২৯৬২ (২০০১) | ৬৪.২ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আইউবপুর ১০ | ৭৪২২ | ১৪৭২৬ | ১৫৫১৭ | ৪৯.৫ | ||||
চকরাধা ৩১ | ৪৩০৮ | ১১৮২৫ | ১২৮৩৮ | ৫৫.৩ | ||||
জয়নগর ৬৩ | ৯১৭৮ | ১৪৯৮৩ | ১৫৫৫৭ | ৫৫.৭ | ||||
জোসার ৫২ | ৪৫৯৪ | ১৫০৩৮ | ১৫৩৮৯ | ৫৮.০ | ||||
দুলালপুর ৪২ | ৬৩২০ | ১৫৯৫০ | ১৭২৭০ | ৫৬.২ | ||||
পুটিয়া ৮৪ | ৫৪৮০ | ২৭০০৭ | ২৭৪৯৬ | ৫৬.৩ | ||||
বাঘাবা ২১ | ৫৬২১ | ১৪১৫৭ | ১৪৮৬৬ | ৫৬.১ | ||||
মাসিমপুর ৭৩ | ৪৩৮৩ | ১৩৫১৭ | ১৪৬২৬ | ৫৭.৮ | ||||
সাধারচর ৯৪ | ৪৩২৩ | ১১১৪৬ | ১১৬৩৩ | ৫৩.৬ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ (আশরাফপুর, ১৫২৪), এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ (কুমরাদী), শাহ মনসুরের মাযার, আশরাফপুরে প্রাপ্ত দুটি তাম্রলিপি (সপ্তম শতাব্দী), বাঘাবা গ্রামে প্রাপ্ত একটি স্বর্ণমুদ্রা (গুপ্ত যুগ)।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জয়নগর ও জোসার ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ছিল। এ অঞ্চল তখন দ্বিতীয় আগরতলা নামে পরিচিত ছিল। ২৯ এপ্রিল পাকবাহিনী ঘাসিদিয়া নামক স্থানে এক ব্যক্তিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। অক্টোবর মাসের শেষের দিকে চলনদিয়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়াও পুটিয়া নামক স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে একজন ক্যাপ্টেনসহ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয় এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নভেম্বর মাসের শেষের দিকে লেটারবগ গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর এক লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
বিস্তারিত দেখুন শিবপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৮২, মাযার ৩, মন্দির ২।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৫.৭%; পুরুষ ৫৫.৯%, মহিলা ৫৫.৫%। কলেজ ৪, কারিগরি কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩৫, মাদ্রাসা ১১৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: লাখপুর শিমুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), শিবপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), মোহরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), আফছার উদ্দিন হাইস্কুল (১৯৬৮), কুমরাদী সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯২৭)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৬০, সিনেমা হল ২, মহিলা সংগঠন ১, খেলার মাঠ ৩৫।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৪.৫৫%, অকৃষি শ্রমিক ২.০৮%, শিল্প ৩.১৬%, ব্যবসা ১৫.০৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৭৭%, চাকরি ৮.২১%, নির্মাণ ১.৫৫%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.৪১% এবং অন্যান্য ৭.৭৯%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৭.৪২%, ভূমিহীন ৩২.৫৮%। শহরে ৬৪.৫৩% এবং গ্রামে ৬৭.৫৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, আদা, হলুদ, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, সরিষা, মিষ্টি আলু, কাউন, তিসি, চীনা, অড়হর, নীল।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, কুল, পেয়ারা, বাতাবি লেবু, কামরাঙ্গা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৫, গবাদিপশু ১৫৩, হাঁস-মুরগি ১৭০, গবাদিপশুর প্রজনন কেন্দ্র ২, হ্যাচারি ২, নার্সারী ৫।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০২৪.৫০ কিমি; আধা-পাকারাস্তা ১৩৫০ কিমি; কাঁচারাস্তা ৪৯৬.৮২ কিমি; নৌপথ ১৩.৯৮ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা জুটমিল, টেক্সটাইল মিল।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, স্বর্ণশিল্প, কাঠের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০, মেলা ৫। শিবপুর হাট, জোসার হাট, জাল্লারা হাট, পুটিয়া হাট, লাখপুর হাট এবং জয়নগর মেলা, নৌকাঘাটা মেলা ও আড়ালী মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য আম, কাঁঠাল, কলা, আদা, হলুদ, শাকসবজি, পাটজাত পণ্য, সুতা, হোসিয়ারী দ্রব্য।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭৭.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৫%, ট্যাপ ১.৬% এবং অন্যান্য ১.৯%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬২.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩২.৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৪।
এনজিও ব্র্যাক, আশা। [মো. ইফতেখার উদ্দিন ভূঞা]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; শিবপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।