জটার দেউল
জটার দেউল পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগণার গহীন সুন্দরবনের অভ্যন্তরে কঙ্কনদিঘির পূর্বে, প্লট নম্বর ১১৬, মনি নদীর মোহনার সন্নিকটে দন্ডায়মান একটি অসাধারণ সুউচ্চ স্তম্ভ। অনেকে এটিকে যশোরের প্রতাপাদিত্যের বিজয়স্তম্ভ বলে ধারণা করেন। কখনও একটি বৌদ্ধ প্যাগোডা, কখনও বা হিন্দুমন্দির, এমনকি তীর্থমন্দির, নানাভাবে এটিকে শনাক্ত করা হয়েছে।
প্রায় ৩০.৪৮ মি উচ্চতার এ স্তম্ভের বাইরের প্রতি দিকের পরিমাপ ৯.৩৭ মি। চতুর্ভুজাকার ভূমি-নকশার কেন্দ্রে সামান্য আয়তাকার অভিক্ষেপ এবং পূর্বদিকে রয়েছে ২.০৯ মি পরিমাপের খিলানযুক্ত প্রবেশপথ। অভ্যন্তরীণ কক্ষটি বর্গাকৃতির পুরু দেওয়ালসহ প্রতিদিকে প্রায় ৩.০৫ মি উঁচু ভিত্তিমূলের উপর নির্মিত। বর্তমান ভূমিস্তরের প্রায় ১.৮৩ মি নিচে এর ভিত। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামা যায়। স্তম্ভটির সম্পূর্ণ কাঠামোটি সে অঞ্চলের প্রচলিত সরু ইটের তৈরী এবং ফাঁকে ফাঁকে নকশাযুক্ত ইট দ্বারা অলঙ্কৃত।
১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে ডায়মন্ড হারবারের ডেপুটি কমিশনার প্রকাশ করেন যে, জটার দেউলের খুব কাছাকাছি একটি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়েছে। সংস্কৃত ভাষায় লিখিত তাম্রশাসনটি ৮৯৭ শকাব্দ অর্থাৎ ৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা জয়ন্তচন্দ্র কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছিল। বর্তমানে তাম্রশাসনটির কোনো হদিস নেই।
স্তম্ভটি কেন্দুলির সন্নিকটে অজয় নদীর দক্ষিণ তীরে স্থাপিত দেবপাল এর (৮১০-৪০ খ্রি.) সময়ের ইছাই ঘোষ দেউলের অনুরূপ। তাই কেউ কেউ ধারণা করেন যে, সম্ভবত জটার দেউলও ওই সময়ে স্থাপিত হয়েছিল।
প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের তত্ত্বাবধানে স্তম্ভটির অদক্ষ সংস্কারের ফলে এর মূল গঠন ও বৈশিষ্ট্য লোপ পেয়েছে। এর বিকৃত সংস্কারের আগের একটি পুরানো আলোকচিত্র থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, জটার দেউল সুন্দরবনের গভীর অরণ্যে বঙ্গের প্রাচীন ইট নির্মিত মন্দিরগুলির মধ্যে একটি। প্রাচীন উড়িষ্যার রীতিতে নির্মিত স্তম্ভটি বাঁকুড়া জেলার বহুলারায় অবস্থিত বহুল অলঙ্কৃত সিদ্ধেশ্বর মন্দিরের প্রায় অনুরূপ বৈশিষ্ট্য বহন করে। তাই এর যথেষ্ট স্থাপত্যিক গুরুত্ব রয়েছে। [নাজিমউদ্দিন আহমেদ]
গ্রন্থপঞ্জি WW Hunter, Statistical Accounts of Bengal, I, London, 1875; Kalidas Dutta in VRS Monograph, No 3, Rajshahi, 1927; RC Majumdar (ed), The History of Bengal, I, Dhaka, 1943; Satishchandra Mitra, Jasohar-Khulnar Itihasa, II, Calcutta, 1965.