বাহুবল উপজেলা

Banglapedia admin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:১১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (হালনাগাদ)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

বাহুবল উপজেলা (হবিগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ২৫০.৬৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৫´ থেকে ২৪°২৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২৮´ থেকে ৯১°৩৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নবীগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে চুনারুঘাট উপজেলা, পূর্বে শ্রীমঙ্গল উপজেলা, পশ্চিমে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৯৭৯৯৭; পুরুষ ৯৮১০১, মহিলা ৯৯৮৯৬। মুসলিম ১৬৮৮১৯, হিন্দু ২৮৪৭১, বৌদ্ধ ৬, খ্রিস্টান ৫৭৯ এবং অন্যান্য ১২২। এ উপজেলায় খাসিয়া, টিপরা, মণিপুরি প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় কোরাংগী, খোয়াই ও বরাক নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন বাহুবল থানা গঠিত হয় ১৯২১ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১৪০ ৩৪২ ৪০৪৫ ১৯৩৯৫২ ৭৯০ ৫৬.১ ৩৯.৪
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২.১১ ৪০৪৫ ১৯১৭ ৫৬.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
পুটিজুরি ৫৯ ১৩৮৫৩ ১৩২৯৪ ১৩৪৮২ ৪৮.৫
বাহুবল ১১ ৪৯৯৭ ১৪৪৪৮ ১৪৫৬১ ৩৬.১
ভাদেশ্বর ২৩ ১৫১১৪ ১৭১৪৪ ১৭০০৫ ৩৭.৮
মিরপুর ৪৭ ৪০৬৮ ১২৭০৩ ১৩২০৩ ৪৮.০
লামাতশি ৩৫ ৫০৪৮ ১১০৪৩ ১১৭৩৪ ৪০.৬
সাতকাপন ৭১ ১১৩৬৬ ১৬৬৩৫ ১৬৭২০ ৩৩.২
স্নানঘাট ৮৩ ১১০২৯ ১২৮৩৪ ১৩১৯১ ৩৬.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

ঐতিহাসিক ঘটনা আফগান দলপতি খাজা উসমান বুকাইনগর দুর্গ ত্যাগ করে বর্তমান বাহুবল উপজেলার পুটিজুরিতে গিরিপলের পাদদেশে এসে শিবির স্থাপন করেন। তিনি এখানে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার ভ্রাতা খাজা ওয়ালী স্বেচ্ছায় দুর্গ ত্যাগ করে মুগল বাহিনীকে সুবিধাজনক অবস্থানে ঠেলে দেন। অবশেষে এ দুর্গ থেকে ৯-১০ কিমি পূর্বে মৌলভীবাজার জেলার দৌলম্বপুর গ্রামে খাজা উসমানের নেতৃত্বাধীন আফগানবাহিনী মুগলদের নিকট পরাজিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধ বাহুবলে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সরাসরি কোনো যুদ্ধ ঘটেনি। তবে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা শেরপুর, রেমা চা-বাগান, কালেঙ্গা প্রভৃতি বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশ নেন। বাহুবল ৬ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয়। উপজেলার ফয়জাবাদ বধ্যভূমিতে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন বাহুবল উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৯৭, মন্দির ১৪, মাযার ৩। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বাহুবল জামে মসজিদ, মিরপুর জামে মসজিদ, পুটিজুরি জামে মসজিদ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৯.৮%; পুরুষ ৪১.২%, মহিলা ৩৮.৪%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪৮, কিন্ডার গার্টেন ৪, মাদ্রাসা ২৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: আলিফ সোবহান কলেজ, দীননাথ ইনস্টিটিউট (১৯৩৭), ফয়জুন্নেসা হাইস্কুল (১৯৬০), পুটিজুরি এস সি হাইস্কুল (১৯৬৯), মানব কল্যাণ হাইস্কুল (১৯৪১), মিরপুর দাখিল মাদ্রাসা (১৯২০)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১২, লাইব্রেরি ৫, কমিউনিটি সেন্টার ১, অডিটোরিয়াম ১, সাহিত্য সংগঠন ২, খেলার মাঠ ৮।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬২.৭১%, অকৃষি শ্রমিক ১০.৮৮%, ব্যবসা ৮.১৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৮৫%, চাকরি ৩.৯২%, নির্মাণ ০.৫৫%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৬৮% এবং অন্যান্য ৯.৮৫%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.০৯%, ভূমিহীন ৪২.৯১%। শহরে ৫৩.৪৪% এবং গ্রামে ৫৭.১৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, সরিষা, চা, গম, রাবার, পান, চীনাবাদাম, তৈলবীজ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, মিষ্টি আলু, পাট।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, লেবু, আনারস।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮৫.২৭ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৭.০৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৯৬.৬২ কিমি; রেলপথ ১৩ কিমি; নৌপথ ১২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, সোয়ারী।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১২, মেলা ৩। পুটিজুরি বাজার, বাহুবল বাজার, মিরপুর বাজার এবং চন্দ্রচুরির মেলা ও ধান্যখালীর মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, চা, আনারস, লেবু, কাঁঠাল, কাঠ, রাবার।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৯.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

খনিজ সম্পদ  প্রাকৃতিক গ্যাস ও কাঁচবালু।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.৩%, ট্যাপ ০.৫% এবং অন্যান্য ৮.২%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৭.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৫.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৭.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৭, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৫, কমিউনিটি ক্লিনিক ৩, ক্লিনিক ১, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ৫, মাতৃসদন ১, দাতব্য চিকিৎসালয় ১, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ১, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ২, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার।  [জয়ন্ত সিংহ রায়]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বাহুবল উপজেলার মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০১০।