বাজিতপুর উপজেলা

Banglapedia admin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৭:৪১, ২ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

বাজিতপুর উপজেলা (কিশোরগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১৯৩.৭৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০৯´ থেকে ২৪°১৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫০´ থেকে ৯১°০৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কটিয়াদি, নিকলী ও অষ্টগ্রাম উপজেলা, দক্ষিণে কুলিয়ারচর, ভৈরব ও সরাইল উপজেলা, পূর্বে অষ্টগ্রাম ও নাসিরনগর উপজেলা, পশ্চিমে কটিয়াদি উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৪৮৭৩০; পুরুষ ১২১৮৫৬, মহিলা ১২৬৮৭৪। মুসলিম ২২৬৬১৭, হিন্দু ২২০৮৯, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ২০ এবং অন্যান্য ৩।

জলাশয় প্রধান নদ-নদী: মেঘনা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধলেশ্বরী, ঘোড়াউতরা।

প্রশাসন বাজিতপুর থানা গঠিত হয় ১৮৩৫ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১১ ৮৪ ১৮৮ ৩৪৮৯৮ ২১৩৮৩২ ১২৮৪ ৬০.৪ ৩৭.৮
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.৫৭ ২৮ ৩৪৮৯৮ ৩৬৪৭ ৬০.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কৈলাগ ৭২ ২৬৭৯ ৮৬৩৯ ৮৯১৮ ২৭.৯
গাজীরচর ৪৩ ১৬১৯ ৪৯৩০ ৫১১২ ৪২.৭
দিঘিরপাড় ২৫ ৩৬১০ ১০১২১ ১০৬০১ ৩৩.৩
দিলালপুর ৩৪ ২৬০৬ ৯১৩৩ ৯৪৮৭ ৩৮.০
পিরিজপুর ৮৬ ৫৭৩০ ১৬১০৭ ১৭১৭৩ ৪২.২
বালিয়ার্দি ১৭ ২০৯০ ৭৫৬১ ৮৩৪২ ৩৪.৫
মাইজচর ৭৭ ৫৪৮৩ ৮১৮০ ৮৪৩৯ ২২.৫
সরারচর ৯৪ ৩০৫৫ ১৩৩৪৯ ১৩৫২২ ৫৩.৪
হিলাচিয়া ৬০ ৬০৩০ ১৩৭০৫ ১৪০৫৩ ৩৪.৭
হালিমপুর ৫১ ৫০৪৮ ৭১৫৪ ৮৩২৯ ৪৭.৮
হুমাইপুর ৬৯ ৭৩০১ ৫৪১৬ ৫৫৬১ ২৪.২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

বাজিতপুর উপজেলা

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ভাগলপুরের দেওয়ানবাড়ি জামে মসজিদ, ঘাগটিয়ার পাগলা শংকরের মাযার, বসন্তপুরের পীর মতিউরের মাযার, দিলালপুরের মোগল শাহের মাযার।

ঐতিহাসিক ঘটনা ব্রিটিশ আমলে এ উপজেলার দিলালপুর নৌঘাট প্রসিদ্ধি লাভ করে। এর অদূরে গুপিনাথপুর ও ঘোড়াঘাটে নীলকর কেন্দ্র ছিল। এখান থেকে সমগ্র ভাটি এলাকার মুক্তার চালান হতো । সূক্ষ্ম মসলিন বিশেষত তনজব বাজিতপুরে তৈরি হতো। বাজিতপুরে ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছিল।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে পাকসেনাদের নির্বিচার গণহত্যার শিকার হয়েছিল চারশতাধিক নিরীহ লোক, সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন ৬০ জন নারী। ৪ মে শ্মশানখালের বাঁশ মহলে গণহত্যা সংঘটিত হয়। উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা বাজিতপুর শহরের আলোছায়া সিনেমা হলে পাকিস্তানপন্থীদের সভায় হামলা চালায়। কুলিয়ারচর লঞ্চঘাটে পাকিস্তানি সেনাদের টহল লঞ্চ আক্রমণ করে বিকল করে দেন। টেলিফোন একচেঞ্জ অফিস আক্রমণ করে যোগাযোগ বিকল করে দেন। বাজিতপুর থানায় হামলা করেন। বাগমরা রেলব্রিজসহ আরও বেশ কয়েকটি স্থানে অপারেশন পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধে বাজিতপুরের ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২৬ অক্টোবর বাজিতপুর উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলায় ১টি বধ্যভূমি (সরারচর রেল গেইট) এবং মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত একটি স্মৃতিস্তম্ভ (পিরিজপুর) রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন বাজিতপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১৮৫, মন্দির ১৩, মাযার ৩৮, আখড়া ১০।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪১.২%; পুরুষ ৪২.৬%, মহিলা ৩৯.৮%। মেডিকেল কলেজ ১, কলেজ ২, নার্সিং ইনস্টিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৫, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৫, মাদ্রাসা ১০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড নার্সিং ইনস্টিটিউট (১৯৮৯), বাজিতপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৪), আফতাব উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১৯৯০), বাজিতপুর এইচ ই স্কুল (১৮৯০), বাজিতপুর হাফেজ আঃ রাজ্জাক পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯০), সরারচর শিবনাথ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), রাজ্জাকুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৫), ভাগলপুর বেগম রহিমা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: মজলুমের ডাক; মাসিক: বাজিতপুর সমাচার; ত্রৈমাসিক: দূত।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১৩, ক্লাব ৫৫, প্রেসক্লাব ১, থিয়েটার ক্লাব ১, লেখক শিবির ১, মহিলা সমিতি ১, খেলার মাঠ ১০, সিনেমা হল ২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৪.৭৬%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৭১%, শিল্প ০.৭৫%, ব্যবসা ১৬.৭৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৫৮%, চাকরি ৫.৯১%, নির্মাণ ১.৪১%, ধর্মীয় সেবা ০.২২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৭৪% এবং অন্যান্য ১১.১৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫০.৮২%, ভূমিহীন ৪৯.১৮%। শহরে ৩৬.৪৯% এবং গ্রামে ৫২.৯৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, সরিষা, মরিচ, আলু, বাদাম, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, চিনা, কাউন, তামাক, ডাল, পান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, লটকন, বেল, বাতাবি লেবু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার ও হ্যাচারি রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৯৭ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৭ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৬০ কিমি; রেলপথ ১৭ কিমি এবং নৌপথ ৫০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও মহিষের গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, করাতকল, বরফকল, লেদার কারখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, শুঁটকিশিল্প, দারুশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৯, মেলা ১০। সরারচর হাট, ফতেহপুর বাজার, শ্রীধরগঞ্জ বাজার এবং কামালপুর মেলা, কামিয়ার বাড়ি মেলা ও দেওয়ান বাড়ি মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   মাছ, ডিম, দুধ, মুরগি, চাল, কলা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৫.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৬%, ট্যাপ ০.৯% এবং অন্যান্য ২.৫%। এ উপজেলার ৯০% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৮.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৪.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৬.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৯, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৪৩ ও ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার অনেক লোক প্রাণ হারায়। ১৯৮৮ ও ২০০৪ সালের বন্যায় ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদিপশু ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়া ১৯৯৭ সালের ঘূর্ণির্ঝড়ে এ উপজেলার মাইজচর ইউনিয়ন বিরাণভূমিতে পরিণত হয়।

এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা, পল্লীবিকাশ কেন্দ্র। [এ.কে.এম মেজবাহউদ্দিন কামাল]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বাজিতপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।