কুতুবদিয়া উপজেলা
কুতুবদিয়া উপজেলা (কক্সবাজার জেলা) আয়তন: ২১৫.৭৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°৪৩´ থেকে ২১°৫৬´ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ৯১°৫০´ থেকে ৯১°৫৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে কুতুবদিয়া চ্যানেল, বাঁশখালী, পেকুয়া এবং মহেশখালী উপজেলা।
জনসংখ্যা ১২৫২৭৯; পুরুষ ৬৪০৯৩, মহিলা ৬১১৮৬। মুসলিম ১১৭৩২২, হিন্দু ৭৯০২, বৌদ্ধ ৫, খ্রিস্টান ২ এবং অন্যান্য ৪৮।
জলাশয় বঙ্গোপসাগর ও কুতুবদিয়া চ্যানেল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন কুতুবদিয়া থানা গঠিত হয় ১৯১৭ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৬ | ৯ | ৫৫ | ২৫৪৮৮ | ৯৯৭৯১ | ৫৮১ | ৩৭.৯ | ৩৩.০ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৯.৯৮ | ১ | ২৫৪৮৮ | ২৪৫৪ | ৩৭.৯ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আলী আকবর ডেইল ১৩ | ২৬১০ | ১১৪৩৪ | ১১০৭০ | ৩৮.৭ | ||||
উত্তর ধুরুং ৮১ | ২৮৫০ | ১৪২৬৩ | ১৩৭৭২ | ২৯.২ | ||||
কৈয়ার বিল ৫৪ | ৮৯২ | ৬৫৭০ | ৬৩৭৫ | ২১.৬ | ||||
দক্ষিণ ধুরুং ৪০ | ১৪৮৬ | ৮৮৩৬ | ৮৪৪৩ | ৩০.৪ | ||||
বড়ধোপ ২৭ | ১৪১৫ | ১৩১৪৩ | ১২৩৪৫ | ৩৭.৯ | ||||
লেমশীখালী ৬৭ | ২০৬৮ | ৯৮৪৭ | ৯১৮১ | ৪২.০ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কুতুবদিয়া বাতিঘর (দক্ষিণ ধুরুং), কালারমার মসজিদ, কুতুব আউলিয়ার মাযার।
মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কুতুবদিয়ায় পাকবাহিনী প্রবশ করেনি এবং উপজেলায় তাদের বিরেুদ্ধে সরাসরি প্রতিরোধ বা যুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। তবে মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের যুদ্ধ জাহাজ আসার খবর পেয়ে স্থানীয় মুক্তিকামী মানুষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধের জন্য সমুদ্র সৈকতে জমা হয়েছিল। উপজেলার একজন মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭১ এর ২৩শে মে রাজাকারের হাতে নিহত হন। কুতুবদিয়ার ঘাটকুল পাড়ায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন কুতুবদিয়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এক হাতিয়া ফকিরের মসজিদ, কালারমার মসজিদ, মহারাজা কাজীর মসজিদ, কুতুব আউলিয়ার মাযার।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৪.০%; পুরুষ ৩৪.৮%, মহিলা ৩৩.২%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কুতুবদিয়া হাইস্কুল (১৯৩৮), ধুরুং হাইস্কুল (১৯৪৮)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক দর্পন (১৯৮৬), বালিচর (১৯৮৩), কুতুবদিয়া বার্তা (১৯৯৩)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, প্রেসক্লাব ১, ক্রীড়া সমিতি ১।
পর্যটন কেন্দ্র কুতুবদিয়া বাতিঘর।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৩.২৭%, অকৃষি শ্রমিক ৬.২৩%, ব্যবসা ১৩.১৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৩১%, চাকরি ৪.৪৭%, নির্মাণ ০.৬৯%, ধর্মীয় সেবা ০.২৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৩% এবং অন্যান্য ১০.৪%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৪.০২%, ভূমিহীন ৫৫.৯৮%। শহরে ৪৩.৯০% এবং গ্রামে ৪৪.০৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, সুপারি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কলা, পেঁপে, কুল, তরমুজ, নারিকেল।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার চিংড়ি প্রকল্প।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩৪.৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৭৬.০৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৩৩.২৫ কিমি; নৌপথ ৬৫ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন ঘোড়া ও গরুর গাড়ি, পাল্কি।
শিল্প ও কলকারখানা রাইসমিল, স’মিল, সল্টমিল, আইস ফ্যাক্টরি।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, বাঁশের কাজ, ওয়েল্ডিং ফ্যাক্টরি।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১২। বড়ধোপ বাজার ও ধুরুং বাজার উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য মাছ, লবণ।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৭.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস, গন্ধক, চুনাপাথর, কালোবালি।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.২%, ট্যাপ ০.৬% এবং অন্যান্য ৪.২%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৯.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৬.৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৬।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কুতুবদিয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ-প্রবণ এলাকা। ১৫৬৯ সালের জলোচ্ছ্বাস, ১৭৬২ সালের ভূমিকম্প, ১৭৯৫ সালের ঘূর্ণিঝড়, ১৮৭২ সালের মহাপ্রলয়, ১৮৯৭ সালের জলোচ্ছ্বাস (মগীর তুফান), ১৯০৫ সালের টর্ণেডো, ১৯৬০ ও ১৯৭০ সালের জলোচ্ছ্বাসে এ এলাকার বেশ সংখ্যক মানুষ ও গবাদিপশুর প্রাণহানি ঘটে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে কুতুবদিয়া উপজেলার প্রায় ১০,০০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। একসময় এ উপজেলার একটি বিরাট অংশ সাগর বক্ষে বিলীন হয়ে যায়।
এনজিও ব্র্যাক। [মোঃ ওয়াজেদ আলী কুতুবী]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কুতুবদিয়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।