রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৭-এর পূর্বপর্যন্ত সংস্থাটির নাম ছিল ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (ডিআইটি)। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এই দুই শহরের আশপাশের কিছু এলাকায় উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণের উদ্দেশ্যে ১৯৫৩ সালের টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী ১৯৫৬ সালে ডিআইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। চেয়ারম্যানসহ ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে এর মূল প্রশাসনিক কাঠামো গঠিত। ১৯৭০ ও ১৯৮০-র দশকে ঢাকা এবং এর পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের দ্রুত নগরায়ণের ফলে সৃষ্ট উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ডিআইটির প্রশাসনিক ও আইনগত কাঠামোর সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়। এর ফল হলো টাউন ইমপ্রুভমেন্ট (সংশোধনী) আইন ১৯৮৭, যার মাধ্যমে ডিআইটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষতে রূপান্তরিত হয়। এই আইনের অধীনে পুনর্বিন্যাসকৃত সংস্থাটির কার্যক্রমের ভৌত এলাকা ১৯৯১ সালে প্রায় ৭ মিলিয়ন জনসংখ্যা অধ্যুষিত (ডিআইটির আওতাভুক্ত) ৩২০ বর্গ মাইলের এলাকা থেকে ৫৯০ বর্গমাইলে উন্নীত হয়।
একজন চেয়ারম্যান এবং অনূর্ধ্ব পাঁচজন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ডের মাধ্যমে রাজউক পরিচালিত হয়। রাজউকের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার) এবং সদস্যরা (যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার) সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হন। চেয়ারম্যান হচ্ছেন রাজউক-এর প্রধান নির্বাহী। উন্নয়ন ও প্রকৌশল, সম্পত্তি ও ভূমি, অর্থ, বাজেট ও হিসাব, পরিকল্পনা ও স্থাপত্যের মতো স্বতন্ত্র পাঁচটি বিভাগ গঠন করে রাজউক-এর বোর্ডের সকল সদস্যকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্বভার দিয়ে সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা করা হয়েছে।
পরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে রাজউক ঢাকা মহানগরীর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে প্রধান ভূমিকা পালন করে। বিদ্যমান বিধিবিধানের আলোকে ঢাকাকে পরিকল্পিত মহানগরীরূপে গড়ে তোলার জন্য রাজউক পরিকল্পনা প্রণয়ন, ব্যক্তি বিশেষ ও প্রকল্পের জন্য ভূমি ব্যবস্থার ছাড়পত্র প্রদান ও ইমারতের নকশা অনুমোদন করে থাকে। এছাড়া রাজউক ঢাকার উন্নয়নকল্পে বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন উপ-শহর ও নতুন শহর প্রকল্প, সাইট অ্যান্ড সার্ভিস প্রকল্প, বাণিজ্যিক ও শিল্প নগরী তৈরি, রাস্তা, উড়াল সড়ক, সেতু, কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণ, বিদ্যমান সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন, বাজার, শপিং সেন্টার, কার পার্কিং, ধর্মীয় স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, উন্মুক্তস্থান, জলাধার, পার্ক, খেলার মাঠ ইত্যাদির উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন প্রকল্প, সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প ইত্যাদি জনহিতকর কাজ করে থাকে।
রাজউক ১৯৫৯ সালে ঢাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রণীত মহাপরিকল্পনা সংশোধন করে এবং বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বনানী-বারিধারা উন্নয়ন প্রকল্প (১৯৯০); রা জউক কর্মচারীদের জন্য আবাসিক প্রকল্প (১৯৯০); কাওরান বাজার, মহাখালী এবং পোস্তগোলার উন্নয়ন; ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও রেলপথের নিচু জমির উন্নয়ন; উত্তরা আদর্শ আবাসিক এলাকা, সোনারগাঁ হোটেল এলাকার উন্নয়ন; জহুরা মার্কেট-এর পার্শ্ববর্তী বস্তি অপসারণ ও ভূমি উন্নয়ন; মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকার উন্নয়ন এবং বহু সংযোগ সড়ক নির্মাণ। এ সকল চলমান প্রকল্পের পাশাপাশি, রাজউক-এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরিকল্পনাধীন আরও বহু প্রকল্প রয়েছে।
১৯৯৫ সালে নতুন আঙ্গিকে মহানগরীর ৫৯০ বর্গমাইল (১৫২৮ বর্গ কিমি) এলাকা নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্লান (ডিএমডিপি) এবং ১৯৯৫-২০১৫ শীর্ষক দ্বিতীয় মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। ডিএমডিপি প্রকল্প তিন স্তরে বিভক্ত ছিল স্ট্রাকচার প্লান, আরবান এরিয়া প্লান এবং ডিটেইলড এরিয়া প্লান। আরবান এরিয়া প্লানে রাজউক-এর আওতাধীন বিদ্যমান শহরাঞ্চলের উন্নয়নের নীতি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আরবান এরিয়া প্লান প্রণয়নের পূর্ব পর্যন্ত একটি নমনীয় উন্নয়ন মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।
ডিএমপি প্রদত্ত কাঠামো ব্যবহার করে ডিটেউলড এরিয়া প্লান প্রণয়ন করা হয়েছে, যা গত ২২ জুন, ২০১০ তারিখে সরকারি গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। এই পরিকল্পনায় স্ট্রাকচার প্লানের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা মহনগরীর বিভিন্ন জোনের জন্য বিশদ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পিত উন্নয়ন ধারা, প্রস্তাবিত সড়কসমূহের অবস্থান ও লে-আউট অবকাঠামো নাগরিক সুবিধা এবং ভূমি ব্যবহার জোনসমূহের তথ্য সম্বলিত এই পরিকল্পনার সময়সীমা ২০১৫ সাল পর্যন্ত। ২০৩৫ সাল পর্যন্ত সময়ের দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রাকচার প্লান প্রণয়নের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে।
উন্নয়ন পরিকল্পনার আলোকে ঢাকার জনসাধারণের জন্য রাজউক বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অর্থায়ন করে থাকে। রাজউকের প্রকল্পগুলির মধ্যে গুলশান মডেল টাউন, বনানী মডেল টাউন, বারিধারা আবাসিক ও কূটনৈতিক এলাকা; নিকুঞ্জ (১ ও ২), উত্তরা (১ম, ২য় ও ৩য় পর্ব), পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প, ঝিলমিল আবাসিক এলাকা, উত্তরায় ২২৫১২টি ফ্লাট নির্মাণ, বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প, গুলশান-বনানী-মহাখালী লেক ও গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প, গুলশান-১ এ নির্মিত বহুতল কার পার্কিং কাম অফিস ভবন, সকল মানচিত্র, নথি ও কাগজপত্রের ডিজিটাল ভার্সনে রূপান্তর, কুড়িল-বিশ্বরোড সংযোগস্থলে উড়াল সড়ক নির্মাণ, সম্প্রসারিত বিজয় সরণি প্রকল্প ইত্যাদি। [মোঃ আশরাফুল ইসলাম]